<p>পৃথিবীর জন্য ২০১৯ সাল ছিলো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বছর। নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা গোষ্ঠী নয়, বছরজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ ক্ষতির মুখে ছিলেন সারা বিশ্বের মানুষ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, দাবানল ও তীব্র শীতে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক অঙ্কটাও বেশ বড়।</p> <p>বছরের শেষ দিকে, তীব্র ঠান্ডায় যখন জবুথবু এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকা, তখন ভয়াবহ দাবানলের আগুন গ্রাস করে ফেলে অস্ট্রেলিয়াকে। এছাড়া ২০১৯ সালেই পুড়ে ছাই হয়েছে বিশ্বের ফুসফুস আমাজন বনাঞ্চল।</p> <p>২০১৯ সালের এপ্রিলে বঙ্গোপসাগর থেকে ভারতের উড়িষ্যা উপকূল হয়ে সর্বোচ্চ আড়াইশ কিলোমিটার গতিতে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ফণি’। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উড়িষ্যা উপকূল। দুই দেশ মিলে প্রাণ হারান ৮৭ জন। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। যার বেশির ভাগই উড়িষ্যায়। একই বছরে আগাম বন্যায় আক্রান্ত হয় দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। ভারত ও নেপালে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণ হারান অনেকে।</p> <p>জুনে তীব্র দাবদাহে ভারতে মারা যায় ৯০ জন। তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। পরের মাসে তীব্র দাবদাহে জাপানে মারা যায় ১৬২ জন।</p> <p>এছাড়া, আগস্টে চীনে টাইফুন লেকিমার আঘাতে মারা যায় ৭২ জন। অক্টোবরে জাপানে আঘাত হানে শক্তিশালী টাইফুন হাগিবিস। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় জাপান। পানির নিচে তলিয়ে যায় বিভিন্ন শহর। ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণ হারান প্রায় ৮৬ জন।</p> <p>এর আগে, মার্চে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ওপর বয়ে যাওয়া শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইদাইয়ের আঘাতে প্রাণ হারান ৯০০র বেশি মানুষ। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি হুমিকর মুখে পড়ে জীববৈচিত্র্য।</p> <p>শুধু এশিয়া বা আফ্রিকা অঞ্চল নয় ২০১৯ সালে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিায় ভয়াবহ দাবানলের পাশাপাশি একই বছরে বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় বিভিন্ন অঞ্চল।</p> <p>বছরের শেষ দিকে এশিয়ার ইউরোপ এবং আমেরিকায় বিভিন্ন দেশে জেঁকে বসে তীব্র শীত। তবে প্রখর সূর্যে উষ্ণতায় দাবানলের কবলে পড়ে বিপরীত অস্ট্রেলিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে চলা স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে প্রতিদিনই ভষ্মীভূত হয় অসংখ্য বসতবাড়ি।</p> <p>বিশ্বব্যাপী বছরজুড়ে চলা প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। এর জন্য ধনীদেশগুলোর শিল্পায়ন ও পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকরা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে পরিবেশবাদীদের আন্দোলন ছিল বছরজুড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে প্রতি শুক্রবার আন্দোলনের ডাক দিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন সুইডেনের স্কুল শিক্ষার্থী গ্রেটা থানবার্গ।</p>