<p>আমাদের দৈনন্দিন যে পরিমাণ খাদ্যের চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে একটি বড় অংশ আঁশ জাতীয় খাবার হওয়া বাঞ্ছণীয়। আর আঁশ জাতীয় খাবারের প্রধান উৎস হলো টাটকা শাকসবজি। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের হিসাবমতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ২৫০ গ্রাম শাকসবজি অবশ্যই খেতে হবে। কিন্ত প্রকৃতপক্ষে আমরা তা নিয়মিত গ্রহণ করিনা। আর শাকসবজি পরিমাণমত গ্রহণ না করা সুস্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভাল নয়। দেখা গেছে নিয়মিত পরিমাণমত শাকসবজি খাদ্য তালিকায় না রেখে প্রতিদিনের খাদ্যগ্রহণ, সুষম খাদ্য দ্বারা পুষ্টির চাহিদা পূরণের অন্তরায়। আর নিয়মিত শাকসবজি দ্বারা খাদ্য চাহিদা পূরণ করা শুধু যে সবসময় অর্থের জন্য সম্ভব হয়না তা নয়। যথেষ্ট সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও হাতের কাছে না পাওয়ার কারণেও শাকসবজি খাওয়া হয়ে উঠেনা অনেকসময়।</p> <p>তাই যদি হাতের কাছে শাকসবজি থাকে তবে সবাই তা গ্রহণে যত্নশীল হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর হাতের কাছে পাওয়ার জন্য নিজে শাকসবজি উৎপাদন করে নিলে সবচেয়ে ভাল। এক্ষেত্রে শীতকালীন শাকসবজি আবাদের জন্য বেছে নেওয়া ভাল। কারণ শীতকালীন শাকসবজি আবাদ করা তুলনামূলকভাবে সহজ। কোথায় করা যায় এ শাকসবজির আবাদ। গ্রামের বাড়িতে সবারই কিছু না কিছু জায়গা পতিত থাকে যেখানে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু শাকসবজির আবাদ করে থাকে। কিন্তু শহরাঞ্চলে তেমন আলাদা পতিত জায়গা পাওয়া কঠিন। তাই বাড়ির ছাদকেই শীতকালীন শাকসবজি আবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বেছে নিতে পারি।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/Zesan/roof-farm.jpg" style="height:361px; width:600px" /></p> <p>আমরা গণমাধ্যমের কল্যাণে ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি ইদানীংকালে ছাদে বিভিন্ন ফুল, ফল, শাকসবজি ইত্যাদির আবাদ এখন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে দিন দিন। একে ‘ছাদকৃষি’ হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছাদকৃষির কিছু সুবিধা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে যেটা বসতবাড়ির বাগান বলা হয়ে থাকে, শহরে স্থানিক গুরুত্ব বিবেচনায় সেটিকেই ছাদকৃষি বলা হয়। ছাদকৃষির মাধ্যমে একদিকে যেমন একজন বাড়িওয়ালার বাগান করার শখ মেটানো যায়, অপরদিকে এর মাধ্যমে উৎপাদিত শাকসবজির মাধ্যমে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ও শখের গার্ডেনিংয়ের মাধ্যমে ছাদকৃষি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।</p> <p>শীতকালীন শাকসবজির মধ্যে টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, ধনে পাতা, মরিচ, লেটুসপাতা, লাউশাক, সীম, লালশাক, পাটশাক ইত্যাদি স্বল্প পরিসরে আবাদ করা যেতে পারে। এসব শাকসবজি ছাদে আবাদের জন্য ছাদে মাটির ব্যবস্থা করে নিতে হবে। ছোট-বড় প্লাস্টিকের পাত্র, টিনের কৌটা, ড্রাম, পট অথবা ছাদের মেঝেতে চারিদিকে ইটের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে মাটির স্তুপ বসিয়ে সেখানে সবজি চাষের জন্য মাটিকে উপযুক্ত করে নিতে হবে। শীতকালে আবাদ করতে হলে সেচ দিতে হবে নিয়মিত। সেজন্য ছাদে পানির ব্যবস্থা হিসেবে একটি কল ও ফিতা পাইপের সংস্থান করলেই যথেষ্ট। সংগৃহীত মাটিকে ভালভাবে গুড়া করে নিতে হবে। সেইগুড়ো মাটির সাথে শুকনো গোবর, প্রয়োজনমত জৈবসার, রাসায়নিক সার ইত্যাদি মিশ্রিত করে সবজি চাষের উপযোগী করে নিতে হবে।</p> <p>এরপর টমোটো, বেগুন, মরিচ, ফুলকপি, লেটুস পাতা ইত্যাদির চারা লাগাতে হবে। তাছাড়া অন্যান্য আইটেম যেমন ধনেপাতা, লাউশাক, সীম, লালশাক, পাটশাক ইত্যাদির বীজ বুনে দিতে হবে। এগুলো লাগানোর পর সকাল ও বিকাল তার নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত যত্নের মাধ্যমে এসব শাকসবজির সতেজ-সবল বাড়-বাড়তি যে কাউকেই আরো বেশি যত্নশীল ও আগ্রহী হিসেবে গড়ে তুলবে। নিজের হাতে ও নিজের যত্নে উৎপাদিত শাকসবজির স্বাদই আলাদা। নিজের ছাদে উৎপাদিত সবজি যখন তোলা হয় তখন শরীর ও মনে অন্যরকম অনুভুতি কাজ করে। তাছাড়া এসব শাকসবজিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়না বিধায় সেগুলো জৈবিক শাকসবজি খেতে খুবই সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত।</p> <p>করোনা থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি গুরুত্ব বিষয়। সেখানে শাকসবজি খাদ্যের মধ্যে সেই সুষমতা বিধান করে থাকে। অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে করোনায় কৃষি উৎপাদন বাড়াতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য একইঞ্চি জমিও ফাঁকা না রাখার তাগিদ দিয়েছেন। সেদিক থেকেও ছাদে শীতকালীন শাকসবজি আবাদ অত্যন্ত সময়োপযোগী। কাজেই স্বাভাবিক কৃষির পাশাপাশি ছাদকৃষির মাধ্যমে শীতকালীন শাকসবজির আবাদের মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সুষম পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত উৎপাদিত শাকসবজি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশি, গরিব-দঃখীদের বিলিয়ে দেওয়া যায়। সেইসাথে আরো অতিরিক্ত হলে তা বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কাজেই সার্বিক কৃষির উৎপাদন বাড়াতে এখন আমাদের এভাবেই ভাবতে হবে।</p> <p>(লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়)</p>