<p>নীল তিমির চেয়েও বড় এক প্রবালের সন্ধান পাওয়া গেছে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জে এর দেখা মিলেছে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জ পাপুয়া নিউগিনির পূর্বে এবং ভানুয়াতুর উত্তর-পশ্চিমে ওশেনিয়ার ছয়টি বড় দ্বীপ এবং ৯০০টিরও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দ্বীপদেশ। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে বিজ্ঞানীদের এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা প্রবালদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রবাল এটি।</p> <p>ন্যাশনাল জিওগ্রাফির একজন ভিডিওগ্রাফার মানু সান ফেলিক্স প্রশান্ত মহাসাগরের প্রত্যন্ত অঞ্চল পরিদর্শন করার সময় প্রথম এই প্রবালের দেখা পান। প্রশান্ত মহাসাগরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল দেখতে গিয়েই বড় প্রবালটি আবিষ্কার করেন। বিশাল এই প্রবালটি ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।</p> <p>সন্ধান পাওয়া এই দলটির ধারণা, প্রবালটি একটি নীল তিমির চেয়েও বড়। প্রবালটি অনেক ক্ষুদ্র জীবের সমন্বয়ে তৈরি একটি একক জীব। প্রবালটি ৩৪ মিটার চওড়া, ৩২ মিটার লম্বা এবং ৫.৫ মিটার উঁচু। বিজ্ঞানীরা পানির নিচে এক ধরনের টেপ বা ফিতা ব্যবহার করে প্রবাল পরিমাপ করেন।</p> <p>ভিডিওগ্রাফার ও এই প্রবালের সন্ধান পাওয়া মানু সান ফেলিক্স বলেন, ‘আমি এমন একটি জায়গায় ডাইভিং করতে গিয়েছিলাম, যেখানে একটি জাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু আমি তা দেখতে গিয়ে অন্য কিছু দেখতে পেলাম।’</p> <p>তিনি জানান, এর পরেই তিনি তার ছেলে, ডাইভিং সঙ্গী ইনিগোওকে ডাক দেন এবং ভালোভাবে দেখার জন্য সমুদ্রের আরো গভীরে চলে যান।</p> <p>ফেলিক্স বলেন, ‘সলোমন দ্বীপপুঞ্জের এই প্রবালটিকে পানির নিচে দেখতে বৃহৎ এক গির্জার মতো লাগছিল। আমি খুব আবেগী হয়ে পড়েছিলাম তখন। আমি এমন কিছু দেখার জন্য সম্মান বোধ করছি, যা এক জায়গায় শত শত বছর ধরে বেঁচে আছে। আমি ভাবছিলাম, বাহ এটা (প্রবাল) তখন থেকে এখানে, যখন নেপোলিয়ন বেঁচে ছিলেন।’ প্রবালটি কিভাবে বেড়েছে সে সম্পর্কে জানতে বিজ্ঞানীরা আরো গবেষণার কথা ভাবছেন।</p> <p>জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মহাসাগর উষ্ণ হওয়ায় বিশ্বব্যাপী প্রবালগুলো গুরুতরভাবে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। সমুদ্রের ‘স্থপতি’ হিসেবে পরিচিত কোরাল বা প্রবালগুলো একসঙ্গে মিলিত হয়ে বিশাল প্রাচীর তৈরি করে, যেখানে মাছ এবং অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী বসবাস করে।</p> <p>ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, প্রবালপ্রাচীরগুলো পর্যটন বা মাছ ধরায় সহায়তা করে এবং এক বিলিয়ন মানুষের জীবিকা নির্বাহের পথ করে দেয়। নতুন সন্ধান পাওয়া বিশাল এই প্রবালটি সমুদ্রের গভীর জলে থাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চ তাপমাত্রা থেকে রক্ষা পেয়েছে।</p> <p>সলোমন দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু মন্ত্রী মিস্টার ট্রেভর মানেমাহাগা বিবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘তার জাতি নতুন এই আবিষ্কার, এই প্রবালের জন্য গর্বিত।’ সলোমন দ্বীপপুঞ্জের মতো ছোট দ্বীপ দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বকে জানাতে চাই, এটি একটি বিশেষ স্থান এবং এটিকে সুরক্ষিত করা দরকার।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিকভাবে বেশির ভাগ সামুদ্রিক সম্পদের ওপর নির্ভর করি, তাই প্রবাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাল রক্ষা করা আমাদের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’</p> <p>প্রবাল হলো, ‘পাভোনা ক্লাভস’ নামক একটি প্রজাতি এবং এটি চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর একটি বাসস্থান।<br /> প্রবালের বয়স অতীতের সামুদ্রিক অবস্থার ইতিহাস জানতে জানালার মতো কাজ করে।</p> <p>ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার অনুসারে, চলতি সপ্তাহে একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উষ্ণ জলে বসবাসকারী ৪৪ শতাংশ প্রবাল বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। </p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>