<p>৪৩তম বিসিএসে প্রথম ও দ্বিতীয় ভ্যারিফিকেশন মিলে মোট ২৬৭ জন বাদ পড়ায় অনেকগুলো প্রশ্ন রেখেছেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। শনিবার (৪ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এই বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছেন।</p> <p>সারজিস লিখেন, ৪৩তম বিসিএসের পুনরায় ভ্যারিফিকেশন হয়েছে ৷ ১৬৮ জনকে এই ধাপে বাদ দেওয়া হয়েছে ৷ ১ম ও ২য় ভ্যারিফিকেশন মিলে মোট বাদ পড়েছে ২৬৭ জন ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার নেগেটিভ রিপোর্ট ৷ অর্থাৎ পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড ৷</p> <p>কিন্তু এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন আছে ৷ আওয়ামী লীগের সময়ে আওয়ামী লীগ পরিবার ব্যতীত অন্যান্য পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা যে কারো জন্য এই প্রথম শ্রেণীর সরকারি ভালো চাকরি পাওয়া কঠিন বিষয় ছিল ৷ একই ধরনের একটি চিত্র যদি এখন দেখা যায় তাহলে পার্থক্যটা কোথায়?</p> <p>যে চাকুরীপ্রার্থী সে যদি নিজ যোগ্যতায় প্রিলিমিনারি, রিটেন, ভাইভা পাশ করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয় এবং তার যদি পূর্বে কোনো অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকে তাহলে তার বাবা, চাচা, মামা, নানার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন ? </p> <p>আমি কী করব সেটা কি আমার চাচা নির্ধারণ করতে পারে? কিংবা আমার চাচা কী করবে সেটা কি আমি নির্ধারণ করতে পারি? একটা সময় পরে সবাইকে ব্যক্তিগত জীবন গোছাতে হয় ৷ ইভেন আমার বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে আমার চিন্তা-ভাবনার মিল নাও থাকতে পারে ৷ তাহলে পরিবারের কোনো একজন সদস্যের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে অন্য একজন সদস্যকে বঞ্চিত করার অধিকার রাষ্ট্র পায় কিনা?</p> <p>সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটা এবার হয়েছে- গোয়েন্দা সংস্থার অনেকে গিয়ে এবার ইউনিয়ন আর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সেক্রেটারির কাছে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত চাকরিপ্রার্থীদের পরিবারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জানতে চেয়েছে!</p> <p>তার মানে সারাজীবন অধ্যবসায় করা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট এক মেধাবী তরুণ প্রায় ৩ বছর দিনরাত এক করে পড়াশোনা করার পর প্রিলি রিটেন ভাইভা পাশ করে ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর কোনো এক ওয়ার্ড সভাপতি সেক্রেটারির মতামতের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে? সে তার কর্ম নির্ধারণ করবে?</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="প্রায় ৬ হাজার বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে মিয়ানমার" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/04/1735968311-87c975e56c30704bab4ebdfbbb49e1dd.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>প্রায় ৬ হাজার বন্দিকে মুক্তি দিচ্ছে মিয়ানমার</p> </div> </div> </div> </div> </div> <p>তাহলে এতো আয়োজনের কি দরকার ছিল? এই ভ্যারিফিকেশন তো তাহলে প্রিলির আগে হয়ে যাওয়া উচিৎ৷ তাহলে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নষ্ট হতো না ৷ আর কোন যোগ্যতা ভিত্তিতে সে এই মতামত দেয়? স্থানীয়ভাবে এমনিতেই নেতিবাচক একটা পলিটিক্স দেখা যায়, কে কারে ল্যাং মেরে উঠতে পারে! যদি একজন চাকরিপ্রত্যাশী এমন স্থানীয় পলিটিক্সের শিকার হয় তাহলে সে দায় সরকার নিবে কিনা?</p> <p>আমার অমর একুশে হলের জাকারিয়া ভাই অ্যাডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিল ৷ কি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তিনি! ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট, মাস্টার্সে সিজিপিএ ৪.০০ আউট অব ৪.০০! ১ম ভ্যারিফিকেশন উতরে গেলেও রি-ভ্যারিফিকেশনে বাদ দেওয়া হয়! যারা উনাকে চেনেন তাদের সবার আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা! আমি ভেবেছিলাম আওয়ামী আমলে উনাকে আটকানো হতে পারে! কারণ উনার দাড়ি আছে, নূরানী চেহারা, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন ৷ জামায়াত-শিবির ট্যাগ দেওয়া সহজ ৷ কিন্তু উনাকে আটকানো হলো এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে! কিন্তু এখন তো নিয়োগের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড প্রক্রিয়া নতুন করে সেট হওয়ার কথা ছিল! </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আমরা প্লাস্টিক যুগে বসবাস করছি: ড. শফি" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/04/1735971742-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আমরা প্লাস্টিক যুগে বসবাস করছি: ড. শফি</p> </div> </div> </div> </div> </div> <p>এটা শুধু একটা এক্সামপল, এমন আরো অনেকজনের সাথে কথা হয়েছে ৷ পরে দেখলাম যারা বাদ পড়েছে তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন করে পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে ৷ কিন্তু এই ভ্যারিফিকেশন খেলা কেন? এখানে অনেকেই আছে যারা পূর্বের চাকরি ছেড়ে এসেছে, অনেকের ছিল জীবনের শেষ চাকরির পরীক্ষা, অনেকের সামনের জীবন নির্ভর করছে এই চাকরির উপর৷</p> <p>সেখানে যদি এমন রিয়েলিটি সেট করা হয় তবে যে প্রজন্ম আগামীর চাকরিপ্রার্থী তারা আপনাদের উপর আস্থা রাখতে পারবে না, দোদুল্যমান অবস্থায় না থেকে দেশ ছেড়ে চলে যাবে ৷ অলরেডি এটা নিয়ে কথা শুরু হয়েছে ৷ যেটা কখনোই কাম্য নয় ৷</p> <p>চাকরি হবে মেধার ভিত্তিতে ৷ যে মতাদর্শেরই হোক না কেন, যদি পূর্বে ক্ষমতার অপব্যবহার, অন্যায়, অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকে তাহলে নাগরিক হিসেবে সরকারি চাকরি পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার ৷ কোনো অহেতুক এক্সকিউজে যেটা ক্ষুণ্ণ করা কখনোই ভালো বার্তা বহন করে না ৷</p>