<p>মসজিদ পৃথিবীর পবিত্রতম স্থান। মসজিদে আল্লাহর ইবাদত করা হয়। প্রতিদিন পাঁচবার ঈমানদাররা মসজিদে সমবেত হয়। শুধু নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ নয়। মসজিদের বহুমাত্রিক ভূমিকা আছে। নামাজ ছাড়াও আরো বহু ইবাদত মসজিদে আদায় করা যায়। মসজিদে অবস্থান করাও ইবাদত। মসজিদের সঙ্গে প্রকৃত ঈমানদারের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। মসজিদে যেতে মুমিনের হৃদয় ব্যাকুল থাকে। মসজিদে ইবাদতের আগে ও পরে অবস্থান করার মধ্যেও বিশেষ প্রতিদান আছে। নিম্নে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো—</p> <p><strong>ফেরেশতাদের দোয়া লাভ</strong> : যারা মসজিদে এসে তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকাত সালাত আদায় করার পর ফরজ সালাতের জন্য বসে থাকে কিংবা ফরজ সালাতের পর মসজিদে বসে থাকে, তাদের জন্য ফেরেশতারা ক্ষমা লাভের দোয়া করতে থাকে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যতক্ষণ তার সালাতের স্থানে থাকে তার অজু ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ফেরেশতারা এই বলে দোয়া করে যে হে আল্লাহ, আপনি তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ, আপনি তাকে রহম করুন। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির সালাত তাকে বাড়ি ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখে, সে সালাতরত আছে বলে পরিগণিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৯)</p> <p><strong>আল্লাহর রহমত পাওয়ার মাধ্যম </strong>: মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর জিকিরকারীর জন্য বহু ফজিলত আছে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন আল্লাহর ঘর থেকে কোনো ঘরে একত্র হয়, যেখানে তারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে বা পরস্পর আলোচনা করে, তাদের ওপর প্রশান্তি নাজিল হতে থাকে, তাদের রহমত ঢেকে রাখে এবং ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে। আর আল্লাহ নিকটবর্তী ফেরেশতাদের সঙ্গে তাদের নিয়ে আলোচনা করেন। আর যার আমল তাকে পিছিয়ে দেয়, তার বংশ তাকে এগিয়ে নেয় না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)</p> <p><strong>আল্লাহ আনন্দিত হন </strong>: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যতক্ষণ মসজিদে সালাত ও জিকিরে রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তাঁর প্রতি এতটা আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যক্তি তার পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮০০)</p> <p><strong>আল্লাহ গর্ব করেন</strong> : আবদুর রহমান বিন আমর (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। তারপর যার চলে যাওয়ার চলে গেল এবং যার থেকে যাওয়ার থেকে গেল। রাসুল (সা.) এত দ্রুতবেগে এলেন যে তাঁর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হতে লাগল। তিনি তাঁর দুই হাঁটুর ওপর ভর করে বসে গেলেন এবং বলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের রব আসমানের একটি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের কাছে তোমাদের সম্পর্কে গর্ব করে বলছেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা এক ফরজ আদায়ের পর পরবর্তী ফরজ আদায়ের জন্য অপেক্ষা করছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮০১)</p> <p><strong>নবীর সুন্নত</strong> : জাবের বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ফজরের সালাত আদায়ের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত নিজের সালাতের স্থানে বসে থাকতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৫; আবু দাউদ, হাদিস : ১১৭১)</p> <p><strong>পূর্ণ হজ ও পূর্ণ ওমরাহর নেকি লাভ</strong> : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতে আদায় করে, তারপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর জিকির করে, তারপর দুই রাকাত সালাত আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও একটি ওমরাহর সওয়াব আছে। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (হজ ও ওমরাহর সওয়াব)। (তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)</p> <p><strong>সালাতের মতো সওয়াব লাভ</strong> : একজন মুসলমান যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করবে ততক্ষণ সালাতের মধ্যেই থাকবে। অর্থাৎ সালাত আদায়ের মতো সওয়াব পাবে। হুমাইদ (রহ.) বলেন, আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর রাসুল (সা.) কি আংটি ব্যবহার করতেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। এক রাতে তিনি এশার সালাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করেন। সালাত শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা যতক্ষণ সালাতের জন্য অপেক্ষা করেছ, ততক্ষণ সালাত রত ছিলে বলে গণ্য করা হবে। আনাস (রা.) বলেন, এ সময় আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর আংটির উজ্জ্বলতা লক্ষ করছিলাম। (বুখারি, হাদিস : ৬৬১)</p>