<p>রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামের বিধি-বিধানগুলো নিজের জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন; বরং আল্লাহর বিধান মান্য করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সবার চেয়ে এগিয়ে। দান-সদকার ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সব মানুষের ঊর্ধ্বে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) কল্যাণের কাজে ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, বিশেষভাবে রমজান মাসে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৯৯৭)</p> <p>নিম্নে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দানশীলতার নানা দিক তুলে ধরা হলো—</p> <p>১. <strong>তিনি কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না</strong> : মহানবী (সা.)-এর কাছে কেউ কিছু চাইলে তিনি তাকে ফিরিয়ে দিতেন না।</p> <p>জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কোনো কিছু চাওয়া হলে তিনি কখনো ‘না’ বলতেন না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩১১)</p> <p>২.<strong> নিজের প্রয়োজন উপেক্ষা করা </strong>: রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের প্রয়োজনের চেয়ে অন্যের চাওয়া ও প্রত্যাশাকে প্রাধান্য দিতেন। সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক নারী মহানবী (সা.)-এর কাছে একখানা বুরদাহ নিয়ে এসে আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনাকে এটি পরার জন্য দিলাম। নবী (সা.) চাদরখানা এমনভাবে গ্রহণ করলেন, যেন তাঁর এটির দরকার ছিল। এরপর তিনি এটি পরলেন। একজন সাহাবি সেটি তাঁর দেহে দেখে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, এটা কতই না সুন্দর! আপনি এটি আমাকে দিয়ে দিন। নবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ, (দিয়ে দেব)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৩৬)</p> <p>৩. <strong>দানেই ছিল তৃপ্তি</strong> : দান ও সদকাতেই মহানবী (সা.) তৃপ্তি খুঁজে পেতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার কাছে যদি উহুদ পাহাড়ের সমান সোনা থাকত, তাহলেও পছন্দ নয় যে তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার কিছু অংশ আমার কাছে থাকুক। তবে এতটুকু পরিমাণ ছাড়া, যা আমি ঋণ পরিশোধ করার জন্য রেখে দিই। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩৮৯)</p> <p>৪. <strong>পরিবারের প্রতি উদাসীন ছিলেন না</strong> : নবীজি (সা.) কোনো সম্পদ পুঞ্জীভূত করতেন না; বরং কোনো কিছু হাতে এলে তিনি তা দান করে দিতেন। তাই বলে তিনি পরিবারের প্রতি উদাসীন ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘অসহায় ব্যক্তিকে দান করা শুধু দান, আত্মীয়-স্বজনের জন্য ব্যয় করলে দুই উপকার : তা দান ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা। ’ (মুসনাদে আহমদ)</p> <p>অন্য বর্ণনায় এসেছে, সাদ ইবনে মালিক (রা.) বলেন, “আমি অসুস্থ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে দেখতে এলেন। তিনি বললেন, তুমি কি অসিয়ত করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, কতটুকু? আমি বললাম, আল্লাহর রাস্তায় আমার সবটুকু সম্পদ দিয়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, তোমার সন্তানদের জন্য কী রাখলে? তিনি বললেন, তারা বেশ ধনী। তিনি বললেন, ১০ ভাগের এক অংশ অসিয়ত করো। সাদ (রা.) বলেন, আমি বরাবর ‘তা খুবই কম’ বলতে লাগলাম। তিনি শেষে বললেন, অসিয়ত করো তিন ভাগের এক অংশ। আর তিন ভাগের এক অংশও বেশি হয়ে যাচ্ছে। ” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৯৭৫)</p> <p>৫. <strong>অন্যকে দানে উৎসাহিত করতেন</strong> : রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু নিজে দান করতেন না, বরং অন্যদেরও উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই সবচেয়ে প্রিয় যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো কোনো মুসলিমকে খুশি করা, তার বিপদ দূর করা, তার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া, তার ক্ষুধা নিবৃত করা। ’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, হাদিস : ১১৬২)</p> <p>৬. <strong>দানকারীর জন্য দোয়া</strong> : মহানবী (সা.) দানকারীর জন্য দোয়া করেছেন। এক ব্যক্তি তাঁর কাছে সদকার উট নিয়ে এলে তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি তার উটে বরকত দান করুন। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৪৫৮)</p> <p>৭. <strong>কৃপণের প্রতি হুঁশিয়ারি </strong>: রাসুলুল্লাহ (সা.) কৃপণ ব্যক্তির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ, দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ, কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৪২)</p> <p>আল্লামা ইবনু কায়্যিম জাওজি (রহ.)-এর নিম্নোক্ত বর্ণনা থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বদান্যতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। তিনি বলেন, ‘নিজের মালিকানাধীন সম্পদ দান করার ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) ছিলেন সবচেয়ে উদার। আল্লাহর জন্য দানকৃত সম্পদকে তিনি বড় করে দেখতেন না এবং তাকে সামান্য জ্ঞানও করতেন না। কোনো ব্যক্তি তাঁর কাছে কিছু চাইলে তিনি তাকে তা দিতেন—কম হোক বা বেশি। তিনি এমনভাবে দান করতেন যে দারিদ্র্যকে ভয় করতেন না। দান-সদকা ছিল তার কাছে প্রিয় বিষয়। গ্রহীতা দান গ্রহণ করে যতটা খুশি হতেন তিনি দান করে তার চেয়ে বেশি আনন্দিত হতেন। কল্যাণের কাজে তিনি সবচেয়ে দানশীল ব্যক্তি ছিলেন প্রবাহিত বাতাসের মতো। কেউ তার কাছে প্রয়োজন পেশ করলে তিনি তাকে নিজের ওপর প্রাধান্য দিতেন—কখনো খাদ্য দিয়ে, কখনো পোশাক দিয়ে। তিনি নানাভাবে দান করতেন; কখনো দান হিসেবে, কখনো সদকা হিসেবে, কখনো উপহার হিসেবে। আবার কখনো তিনি কোনো জিনিস ক্রয় করতেন, অতঃপর বিক্রেতাকে মূল্য ও পণ্য উভয়টি দান করতেন। যেমনটি তিনি করেছিলেন জাবির (রা.)-এর উটের ক্ষেত্রে। ’ (জাদুল মাআদ : ২/১৮৬)</p> <p>আল্লাহ সবাইকে নবীজি (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।</p>