<p>সাহাবাদের ঈমানদীপ্ত জীবনের বৈচিত্র্যময় ঘটনা আমাদের সত্যানুসন্ধানী হতে উজ্জীবিত করে। ইতিহাস আশ্রিত বাস্তব চরিত্রের নিরিখে শিল্প-সম্মত উপায়ে নৈতিক পূর্ণতার খোরাকে লিপিবদ্ধ গল্পগুলো আমাদের ঈমানী শক্তিকে করে বলীয়ান, নৈতিক আদর্শকে করে হিমালয়ের মতো সুউচ্চ। সাহাবাদের রেখে যাওয়া এমনি অনেক কালজয়ী গল্প কোরআন-হাদিস ও ইসলামের ইতিহাসে বিদ্যমান। যেগুলো মুমিন-মুসলিমের জীবনকে সত্যের দিকে ধাবিত করে, মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সান্নিধ্য, ক্ষমা ও ভালোবাসা পেতে সহায়তা করে।</p> <p>সে রকম এক বাস্তব সত্য ঘটনার অবতারণা ঘটিয়েছেন সাহাবি মাইজ আসলামি (রা.)। মাইজ আসলামি (রা.)-এর তাওবা একটি কবুলকৃত তাওবার মর্যাদা লাভ করে। যে ঘটনা হাদিসে নববীতে স্থান পেয়েছে। বুরায়দা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে মাইজ আসলামি (রা.) বলেছিলেন, ‘আমাকে পবিত্র করুন! একবার নয় একাধিকবার তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এ অনুরোধ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথমে তাকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেছিলেন এবং বলেছিলেন, তুমি ফিরে যাও! কিন্তু ওই সাহাবি অল্প দূর গিয়েই বিবেকের তীব্র দহনে অস্থির হয়ে আবার ফিরে এসে বলেছিলেন, আমাকে পবিত্র করুক! চতুর্থবার রাসুল (সা.) তাকে সুস্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিসের থেকে তোমাকে পবিত্র করব? তারপর তাঁর পাগলামি আছে কি না তার পরীক্ষা নিয়ে বলা হলো, তাঁর মধ্যে কোনো পাগলামো নেই। তারপর রাসুল (সা.) তিনি মদপান করেছেন কি না, জানতে চাইলে কেউ একজন তাঁর মুখের গন্ধ শুঁকে বলেছিলেন, না, তাও নয়। অতঃপর রাসুল (সা.) তাকে রজমের (ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে পাথর নিক্ষেপের) নির্দেশ দিলেন। ’ (মিশকাত)। লোকেরা তাকে পাথর নিক্ষেপ করতে লাগল, এমনিভাবে তাঁর মৃত্যু হয়ে গেল।</p> <p>এক বর্ণনায় উক্ত সাহাবির ব্যাপারে দয়াল নবীর প্রতিক্রিয়াটি ব্যক্ত হয়েছে এভাবে, ‘তোমরা তাকে ছেড়ে দিলে না কেন? হয়তো সে তাওবা করে নিত এবং আল্লাহও তাঁর তাওবা কবুল করে নিতেন।’ (মিশকাত, হাদিস : ৩৪২৪)</p> <p>বুখারিতে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত এ প্রসঙ্গের বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) উক্ত ঘটনার স্বীকারোক্তিকারী মাইজ আসলামিকে বলেছিলেন, ‘হয়তো তুমি তাকে চুমো খেয়েছ অথবা স্পর্শ করেছ অথবা তার দিকে তাকিয়ে দেখেছ?’ আর এটাকেই গুরুতর পাপ বিবেচনায় ব্যভিচার বলে প্রকাশ করেছ। (মিশকাত, হাদিস : ৩৪০৪)।</p> <p>মোটকথা তাকে তাঁর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের সম্ভাব্য সব সুযোগই দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু আল্লাহর বান্দার মনে তাঁর মাওলা আল্লাহ তাআলার ভয় এত বেশি পরিমাণে ক্রিয়া করেছিল যে সেরূপ কোনো সুযোগই তিনি গ্রহণ করেননি।</p> <p>পরবর্তী সময়ে সাহাবিদের কেউ কেউ যখন তিনি পরকালে মুক্তি পাবেন কি না—তা নিয়ে বাদানুবাদ করছিলেন, তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে এমন তাওবা করেছে যে যদি গোটা উম্মতের মধ্যে তাঁর সে তাওবাকে ভাগ করে দেওয়া হয় তাহলে তা সবার মুক্তির জন্যই যথেষ্ট বিবেচিত হবে। ’ (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি)</p> <p>মাইজ আসলামি (রা.)-এর তাওবা আল্লাহ কবুল করেছেন, রাসুল (সা.) তাঁর তাওবার ব্যাপারে ইতিবাচক স্বীকৃতি দিয়েছেন। কেননা তিনি কৃত অপরাধের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য রাসুল (সা.)-এর কাছে আসেননি, কোনো চলচাতুরির আশ্রয় গ্রহণ তিনি করেননি, দুনিয়ার কোনো সুযোগ তিনি নিতে চাননি। তিনি একনিষ্ঠভাবে, স্বপ্রণোদিত হয়ে কৃত অপরাধের তাড়নায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ছুটে এসেছেন, শাস্তি কামনা করেছেন। ইসলামের ইতিহাসের সোনালি পাতায় লিপিবদ্ধ মাইজ আসলামি (রা.) এর তাওবা। সাহাবাদের ইমানদীপ্ত তাওবা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।   </p> <p><em>লেখক : এমফিল গবেষক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট</em></p>