<p>মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতি ও প্রধান ইবাদতের কেন্দ্র হচ্ছে কাবাঘর। এই ঘরের দেয়ালে বিশেষভাবে স্থাপনকৃত মর্যাদাপূর্ণ একটি পাথরের নাম ‘হাজরে আসওয়াদ’। আরবি ‘হাজর’ শব্দের অর্থ পাথর আর ‘আসওয়াদ’ শব্দের অর্থ কালো। ‘হাজরে আসওয়াদ’-এর অর্থ হলো কালো পাথর। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী হাজিগণ তাওয়াফ করার সময় এতে সরাসরি বা ইশারার মাধ্যমে চুম্বন দিয়ে থাকেন।</p> <p><strong>যেভাবে কালো হলো</strong> : ‘হাজরে আসওয়াদ’ জান্নাতের মর্যাদাপূর্ণ একটি পাথর। বিশুদ্ধ সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হাজরে আসওয়াদ জান্নাতের পাথর। প্রথমে এটি দুধের চেয়েও অধিক সাদা ছিল। পরে মানুষের গুনাহ তাকে কালো করে দিয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ৮৭৮)</p> <p><strong>মানুষের পাপ ধারণ</strong> : হাজরে আসওয়াদ মানুষের পাপ ধারণ করে। হাদিসে এসেছে, মানুষের গুনাহ যদি হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিমের পাথরকে স্পর্শ না করত তাহলে যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি তা স্পর্শ করলে (আল্লাহর পক্ষ হতে) তাকে সুস্থতা দান করা হতো। (সুনানে কুবরা, বাইহাকি ৫/৭৫)</p> <p><strong>চুমু দেওয়ার ফজিলত</strong> : শরিয়তে মর্যাদাপূর্ণ এই পাথরে সরাসরি বা ইশারার মাধ্যমে চুমু দেওয়ার বিধান আছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, এই দুটি রোকন (হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানি) স্পর্শ করা গুনাহগুলোকে মুছে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৫৯)</p> <p><strong>কিয়ামতে সাক্ষ্যদান</strong> : কিয়ামতের দিন হাজরে আসওয়াদের সাক্ষ্যদানের ক্ষমতাও থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন এই পাথরকে উপস্থিত করা হবে। তার দুটি চোখ থাকবে, তা দিয়ে সে দেখবে; জবান থাকবে, তা দিয়ে সে কথা বলবে এবং সে এমন লোকের অনুকূলে সাক্ষ্য দেবে যে তাকে আদবের সঙ্গে চুমু দিয়েছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৪৪)</p> <p><strong>চুমু দিয়েছেন মহানবী (সা.) </strong>: হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য নবীজির সুন্নতের অনুসরণ। সাহাবি আবু তুফাইল (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে, তাঁর সঙ্গের লাঠি দিয়ে রোকন স্পর্শ করতে এবং লাঠিতে চুম্বন করতে দেখেছি। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৬৭)</p> <p>এ জন্য নবীজি (সা.)-এর প্রিয় সাহাবি ওমর (রা.) হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারো না। নবী (সা.)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। (বুখারি, হাদিস : ১৫৯৭)</p> <p><strong>যেভাবে চুমু দিতে হয় </strong>: প্রতি চক্করে হাজরে আসওয়াদ বরারব এসে সরাসরি বা ইশারায় চুমু খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। সহিহ বুখারিসহ অন্যান্য কিতাবে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাওয়াফের মধ্যে যখনই হাজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন তাকবির তথা আল্লাহু আকবার বলে চুমু দিতেন বা লাঠি ইত্যাদি দিয়ে ইশারা করতেন। কিন্তু বিসমিল্লাহ বলাটা মারফু হাদিসে না থাকলেও আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে যে তিনি ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতেন। (বুখারি ১/২১৯, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৫/৩৩)</p> <p> </p>