<p>খাগড়াছড়ির পানছড়ির প্রধান সড়ক। এই সড়কেই প্রতিদিন সাত সকালে দেখা মেলে নবী হোসেনের। গামছায় মোড়া ভাতের বাটি আর হাতুড়ি হাতে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে ছুটে চলেন ইট ভাঙার কাজে। রোদ নেই, বৃষ্টি নেই; তবু ছাতা মাথায় নিয়মিত গন্তব্যে ছুটে চলেন নবী।</p> <p>নবী হোসেনের বয়স এখন প্রায় ৮২ বছর। পাঁচ সন্তানের জনক নবী হোসেনের বাবা-মা জিন্নত আলী ও আহসান বানু। উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। ছোটবেলায় এক সময় উল্টাছড়ি হাজি ক্যাম্পই ছিল তাঁর ঠিকানা। পরে বসবাস শুরু করেন মোহাম্মদপুর এলাকায়। ২০ বছর বয়স থেকেই তিনি ইট ভাঙছেন বলে জানান তিনি। সেই হিসেবে তাঁর ইটভাঙা কাজের বয়স ৬০ বছর পেরিয়েছে।</p> <p>এক সময় ৩৫ থেকে ৪০ ফুট করে ইট ভাঙতে পারতেন নবী। তখন প্রতিদিন আয় হতো সাত-আট শ টাকা। এখন আর সেই বয়স নেই। বুড়ো হয়েছেন। ১৫ থেকে ২০ ফুটের বেশি ভাঙা  সম্ভব হয় না। আগে প্রতিফুট ভাঙানি ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। এখন তা ১৫ থেকে ১৬ টাকা। ইটভাঙা মেশিন বের হওয়ার পর থেকেই মজুরি কমেছে বলে তাঁর দাবি। আগের মতো আর শক্তিও নেই। বিকেল হলেই হাতব্যথা শুরু হয়। ওষুধ খেতে হয়। চোখের দৃষ্টিও আগের মতো নেই।</p> <p>এরইমধ্যে তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা বসবাস করছেন। স্ত্রী, ছেলে মুন্না ও মেয়ে কামরুন নাহার পলিকে নিয়েই এখন তাঁর সংসার। ছেলে মুন্না রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মেয়ে পলি পানছড়ি সরকারি ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্রী। মেয়ের একটি সরকারি চাকরি হলেই তাঁর কষ্ট লাঘব হতো। শেষ বয়সে মেয়ের সরকারি চাকরি দেখে মরে গেলেও তার আর দুঃখ থাকবে না বলে জানালেন তিনি।</p> <p>পানছড়ির বিশিষ্টজনদের মত, প্রশাসনের মাধ্যমে খবরটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হলে ৬০ বছরের ইটভাঙার অভিজ্ঞ কারিগর নবী হোসেনের স্বপ্নটি পূরণ হবে।</p>