সোমবার রাত থেকে রিমঝিম বৃষ্টি। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছিল বৃষ্টির মাত্রাও। ভোরের আলো চোখ মেলতেই শুরু ঝুম বৃষ্টি। রাজধানী ঢাকাকে ডুবিয়ে আকাশভাঙা বর্ষণ যখন থামে, ঘড়ির কাঁটা তখন ৯টার ঘরে।
সোমবার রাত থেকে রিমঝিম বৃষ্টি। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছিল বৃষ্টির মাত্রাও। ভোরের আলো চোখ মেলতেই শুরু ঝুম বৃষ্টি। রাজধানী ঢাকাকে ডুবিয়ে আকাশভাঙা বর্ষণ যখন থামে, ঘড়ির কাঁটা তখন ৯টার ঘরে।
কয়েক দিন আগেই ঢাকার দুই মেয়র এবারের বর্ষায় রাজধানী ডুববে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁদের সেই আশার বাণী মৌসুমের প্রথম ভারি বৃষ্টিতেই বুমেরাং হয়েছে।
কোনো কোনো সড়কে জমে বুক সমান পানি, এ সময় যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে রাজধানীর প্রায় ৮০ শতাংশ সড়ক।
এদিকে গতকাল রাজধানীর আজিমপুর, হাজারীবাগের কিছু অংশ, ঝিগাতলা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন গেট থেকে চানখাঁরপুল বঙ্গবাজার হয়ে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার পর সড়কের পানি কমতে থাকলেও আজিমপুর ও বঙ্গবাজার এলাকা দুপুরেও পানিতে ডুুবে ছিল। সকালের দিকে এই সড়কে হাঁটু সমান পানি থাকায় অনেক গাড়ি চলতে গিয়ে বিকল হয়ে যায়। ফলে বঙ্গবাজার থেকে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর সেকশন থেকে মতিঝিল অফিসে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অফিসগামী যাত্রীদের। তাদের একজন মোবাশ্বের হোসেন একটি ব্যাংকের শাখা কর্মকর্তা, কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ চাবিগুলো তাঁর কাছে। মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে সকাল ৯টায় বৃষ্টির মধ্যেই বাসা থেকে বের হয়েছি। বাস চলেনি। কয়েকবার রিকশায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। ৩৫০ টাকায় রিকশা ভাড়া করেছিলাম। ১০ নম্বর সেকশন থেকে সামান্য এগোনোর পর গর্তে পড়ে রিকশার সামনের অংশ ভেঙে যায়, রিকশাওয়ালাও আহত হন।’
সরেজমিনে দেখা যায়, গোড়ান চটবাড়ী এলাকায় সড়ক থেকে পানি সরছে না কয়েকটি কারণে। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ড্রেনগুলো পানি ধারণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিকল হয়ে যায়। এর ফলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া মিরপুর এলাকার রূপনগর ও বাউনিয়া খাল দখল হয়ে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি গোড়ান চটবাড়ী এলাকায় যেতে পারে না। একই অবস্থা উত্তরা এলাকার খালগুলো দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন পাম্পের কাছে যেতে পারছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিচালনা করছে গোড়ান চটবাড়ীর পানি নিষ্কাশন পাম্পটি। পাউবোর প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা পাম্পের সামনে পানি এনে দিতে পারলে তারা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারবে। তবে দেখা যায়, পানি পাম্পের সামনে পৌঁছানোর আগেই জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে।
লকডাউন শুরুর সময় সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, লকডাউনের সময় সড়ক মেরামত করা হবে। তবে দেখা গেছে, রাজধানী শহরে সড়ক বিভাগের প্রধান সড়কটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এই সড়কের এয়ারপোর্ট থেকে আবদুল্লাহপুর পার হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কটি গতকালের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। মূলত উন্নয়নকাজের জন্য এ সড়কে পানি জমে।
বৃষ্টিতে এবার রাজধানী ডুববে না ঘোষণা দেওয়ার পরও কেন জলাবদ্ধতা হচ্ছে এমন প্রশ্নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই জলাবদ্ধতা আমাদের জন্য এ বছরের প্রথম শিক্ষা। আমরা দেখেছি বনানী, মিরপুর, এয়ারপোর্ট রোডে পানি জমেছে। এই পানি ছয়টি রিটেনশন পন্ডে (পানি জমা হওয়ার জায়গা) জমা হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা নেই, দখল হয়ে গেছে। কল্যাণপুর রিটেনশন পন্ডের ১৭১ একর জায়গার মধ্যে দখল হয়ে গেছে ১৭০ একর। সেটা দখলমুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু তিন যুগের সমস্যা তো আর তিন দিনে সমাধান করা সম্ভব না।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকালে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে বেশ কয়েকটি জায়গায় জলজট হলেও বিগত সময়ের চেয়ে তা অনেকাংশেই কম। গেল পাঁচ মাসে আমাদের কার্যক্রম এবং সকাল থেকে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঠ পর্যায়ে তৎপরতার কারণে বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমেছে। ডিএনডি বাঁধ, হাতিরঝিল প্রকল্প, মেট্রো রেলের কার্যক্রমের ফলে জলাবদ্ধতার সম্পূর্ণ সমাধান এখন দেওয়া সম্ভব না হলেও অতীতের মতো ঢাকাবাসীকে কোথাও কোমর পানি বা গলা পানিতে নাজেহাল হতে হয়নি।’
জলাবদ্ধতার ব্যাপারে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ছিল বৃষ্টির দুই ঘণ্টার মধ্যে যাতে পানি নেমে যায়। আজ (গতকাল) বৃষ্টি হওয়ার পর আমাদের কুইক রেসপন্স টিম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, বর্জ্য বিভাগ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং টিম সবাই মাঠে নেমেছিল। আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি, তবে অন্য সময়ের চেয়ে তিন বা চারটি জায়গা ছাড়া বাকি স্থানে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ব্যবস্থা নিতে পেরেছি। আর বাকি তিন-চার জায়গার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।’
তাবলীগ জামাতের বিবাদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার পর সকল বাধা ও সংকাকে পেছনে ফেলে কড়া নিরাপত্তায় গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর তুরাগ নদের (টঙ্গী নদী) তীরে বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব আম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে এবারের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।
তাবলীগ জামাতের শুরায়ে নেজামের (যোবায়ের) অনুসারী তাবলীগের সাথীরা এবারের ইজতেমার প্রথম পর্ব আয়োজন করছেন।
বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম জমায়েত শুরু হয়। বয়ানের অনুবাদ করছেন বাংলাদেশি মাওলানা জুবায়ের।
আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে মাওলানা ইবরাহিম দেওলা বলেন, ‘মনকে আল্লাহর দিকে একাগ্র করার জন্য এবং আমাদের ওপর আল্লাহর যেই হক আছে তা শেখার জন্য ও আমার ওপর আল্লাহর কি হক আছে তা শেখার জন্য আল্লাহর রাস্তায় বের হতে হবে।’
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবারের ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরায়ী নেজামের অধীনে দুই ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এরপরে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্ব আয়োজন করবেন তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বী ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারী সাথীরা।
কারিগরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩০ মিনিটের জন্য বিঘ্নিত হতে পারে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর সেবা।
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য দেন।
তিনি জানান, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম কারিগরি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩১ জানুয়ারি রাত ১২টা ১৫ মিনিট থেকে রাত ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে।
৯৯৯ হল জাতীয় জরুরি নম্বর।
সম্প্রতি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সমন্বয়কদের কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুনাম মাটির সাথে মিশে গেছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হতে দেখা গেছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সশস্ত্র সমারিক পোশাক পরিহিত কিছু ব্যক্তি ও সামরিক পোশাকবিহীন (পরনে সামরিক প্যান্ট দেখা যায়) ব্যক্তি মারপিট বা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।
ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘বাংলাদেশের সুনাম ধন্য এক বাহিনীর নাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ছিল। সেই সেনাবাহিনী সম্মান মাটির সাথে গেছে অবৈধ সরকার ইউনূস গং এবং সমন্বয়ক নামের কুলাঙ্গারদের পৃষ্ঠপোষকতায়।
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে জানায়, প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের নয়। বরং, মায়ানমারের কাচিন ইনডিপেডেন্স আর্মি (কেআইএ) ও তাআং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এর সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘စစ်ရူံးဘဘမင်းအောင်လိူင်’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে গত ২৮ জানুয়ারী ‘Part 1 အချင်းချင်းချကုန်ပီဟ #army #military #myanmar’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত ভিডিওর সাথে এই ভিডিওটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশনে #army #military #myanmar হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এটা নিশ্চিত যে, এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের কোনো ঘটনা নয়। এছাড়া ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, এটি KIA এবং TNLA এর সৈন্যদের উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা।
পরবর্তীতে, ওই তথ্যগুলোর সূত্র ধরে মিয়ানমার ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা মিয়ানমার নাউ (Myanmar NOW) এর ওয়েবসাইটে গত ২৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটি মিয়ানমারের কেআইএ (KIA) ও টিএনএলএ (TNLA) সসস্ত্র গোষ্ঠির সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনার।
সুতরাং, মিয়ানমারের ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথে সাধারণ মানুষের হাতাহাতির ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।