নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের কারণে তরুণীকে হেনস্তা প্রসঙ্গে উচ্চ আদালতের বক্তব্যকে অভিবাদন জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন থেকে এ মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশের উচ্চ আদালতকে অভিবাদন ও স্যালুট জানান তারা। একই সঙ্গে পোশাকের নামে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি আমদানিকারকদের আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করেন তারা।
মানববন্ধনে ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুহিউদ্দিন রাহাত বলেন, ‘বাকস্বাধীনতার অর্থ যেমন অন্যকে গালি দেওয়া নয়, ঠিক তেমনি পোশাকের স্বাধীনতার অর্থ অন্যকে বিরক্ত করা নয়। পোশাকের স্বাধীনতার নামে এমন পোশাক পরা কখনোই ঠিক না, যা পাবলিক নুইসেন্স বা গণ-উৎপাত বা বিরক্তি তৈরি করে। পাবলিক নুইসেন্স একধরনের ক্রাইম।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রাইভেট প্লেস আর পাবলিক প্লেসের ড্রেস কখনো এক না।
অনেকে পোশাকের স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি আমদানি করে পাবলিক প্লেসে মানুষকে কষ্ট দেয়, এটা অবশ্যই অন্যায়। সে তার বাড়িতে সেই স্বাধীনতা পালন করুক, পাবলিক প্লেসে সবার মূল্যবোধ মেনেই তাকে চলতে হবে।’
মানববন্ধনে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রেহানা রাহী বলেন, ‘সংস্কৃতি অবশ্যই পরিবর্তনশীল। কিন্তু আমরা যে সংস্কৃতি গ্রহণ করব, সেটা অবশ্যই আমাদের দেশীয় মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
আজকাল পোশাকের স্বাধীনতার নামে যে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি আমদানি করা হচ্ছে, তা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে। এটা একধরনের কালচারাল টেররিজম।’
এদিকে উচ্চ আদালতের মন্তব্যকে অভিবাদন জানিয়ে মানববন্ধন করাকে কেন্দ্র করে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচনাকারীরা বলছেন, দেশীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি হলে মানববন্ধনকারীদের পোশাকও তো দেশীয় সংস্কৃতির সাথে যায় না। কিন্তু তারা সেই দিকটা না দেখে অন্যদের বিচার করছেন।
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের তাসনীম মাহবুব বলেন, তারা দেশীয় সংস্কৃতির মূল্যবোধের কথা বলছেন অথচ নিজেরাই দেশীয় সংস্কৃতির পোশাক পরেননি। একদিকে আরবীয় সংস্কৃতির জয়জয়কার করেন, বিশেষ ধর্মীয় পোশাকের স্বাধীনতা চান, অন্যদিকে অন্যদের পোশাক নিয়ে হেনস্তা করার পর তারা বলেন দেশীয় সংস্কৃতির কথা।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবায়দা নাসরীন বলেন, ‘যারা আজকে মানববন্ধন করেছে অবশ্যই এটা করার তাদের অধিকার আছে। কিন্তু তারা যে পোশাক পরেছে সেটিও কিন্তু দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। এই যে তাদের আমি যেটা পরব সেটিই দেশীয় সংস্কৃতি, অন্যরা যা পরবে তা অপসংস্কৃতি এটি একধরনের পক্ষপাত ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি।’
ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী গত ১৮ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের কারণে গালাগাল ও মারধরের শিকার হন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা হলে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করে। তরুণীকে হেনস্তা ও মারধরের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলাকে পুলিশ ৩০ মে গ্রেপ্তার করে। গত মঙ্গলবার শিলার জামিন আবেদনের শুনানিতে উচ্চ আদালত এ বিষয়ে কথা বলেন।