<p>এক বস্তা আলুর হিমাগার ভাড়া এক হাজার ২০০ টাকা। সেই আলু বাজারে বেচতে হচ্ছে ৮০০ টাকায়। যেখানে এক বস্তা আলুবীজের দাম প্রায় আড়াই হাজার টাকা। ফলে লাভ-লোকসানের হিসাব বাদ দিয়েই জয়পুরহাটের কৃষকরা তিন বস্তা আলু বেচে এক বস্তা আলুবীজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।</p> <p>এদিকে চলতি বছর আলু সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১৫ নভেম্বর। জেলার ১৭ হিমাগারে এখনো প্রায় দুই লাখ বস্তা আলু রয়েছে। এগুলো সংগ্রহে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের নোটিশ দিয়েছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ।</p> <p>কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিমাগারে ৬০ কেজির এক বস্তা আলু সংরক্ষণ করতে প্রকার ভেদে খরচ হয় হাজার থেকে বারো শ টাকা। মৌসুমের শুরু থেকে এবার আলুর দাম কম ছিল। তাই দাম বেশি পাওয়ার আশায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন কৃষকরা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আলুর দাম কমতে থাকায় প্রতি বস্তায় তিন থেকে চার শ টাকা লোকসান দিয়ে হিমাগার থেকে আলু বেচাকেনা শুরু করেছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। চাহিদা না থাকায় বাজারে আলুর ক্রেতাও মিলছে না। বর্তমানে প্রতি বস্তা অ্যাস্টেরিক, ডায়মন্ড ও মিউজিকা আলু বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে আট শ টাকা। আর গ্র্যানোলা জাতের আলুর কোনো গ্রাহক মিলছে না।</p> <p>কৃষকরা জানান, হিমাগার মালিকরা বস্তায় ৬০ কেজির বেশি আলু রাখছেন না। ভাড়া নিচ্ছেন ২৬০ টাকা। এতে ১৫ টনের এক ট্রাক আলু সংরক্ষণে বস্তা ও শ্রমিক বাবদ ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।</p> <p>এদিকে বাজারে বিভিন্ন কম্পানির সরবরাহ করা বীজ আলুর দাম বেশি হওয়ায় তা কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। ৪০ কেজির উন্নত জাতের এ গ্রেড আলুবীজ সংগ্রহ করতে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে দুই হাজার দুই শ থেকে আড়াই হাজার টাকা।</p> <p>কৃষকরা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জাতের রাসায়নিক সার বেচা হচ্ছে সরকারনির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশি। কৃষকদের অভিযোগ, দাম বেশি দিয়েও চাহিদা মতো সার মিলছে না। কৃষকরা জানান, সার এবং আলুবীজ সংগ্রহ করতে দিনের পর দিন ঘুরতে হচ্ছে। সংকটের অজুহাত দেখিয়ে খুচরা সার ব্যবসায়ীরা প্রতি বস্তায় তিন থেকে চার শ টাকা বেশি নিচ্ছেন। এবার ৩৩ শতাংশের প্রতি বিঘায় আলু চাষ করতে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা।</p> <p>আক্কেলপুর উপজেলার সোনাই মাগুরা গ্রামের আদর্শ কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘গত মৌসুমে হিমাগারে দেড় শ বস্তা আলু সংরক্ষণ করে লোকসান হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ’</p> <p>ক্ষেতলাল উপজেলার বেলগাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে অ্যাস্টেরিক জাতের আলু রোপণ করেছি। এ গ্রেডের ৪০ কেজির প্রতি বস্তা আলুর কম্পানি মূল্য এক হাজার ৯৪০ টাকা হলেও কিনেছি দুই হাজার ২০০ টাকায়। দুই বিঘা জমি রোপণ করতে জমি, শ্রমিক ও সার বাবদ খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তিন মাস পরিচর্যার পর এই ফসল ঘরে তুলতে আরো খরচ হবে প্রায় ১০ হাজার টাকা। ’</p> <p>কালাই উপজেলার চক লয়াপাড়া গ্রামের কৃষক নবীর উদ্দিন বলেন, ‘৫০ কেজির এক বস্তা (মিউরেট অব পটাশ) সারের দাম ৭৫০ টাকা হলেও কিনতে হচ্ছে হাজার থেকে বারো শ টাকায়। আর প্রতি বস্তা বীজ আলুতে বেশি নেওয়া হচ্ছে তিন থেকে চার শ টাকা। ’</p> <p>কালাই উপজেলার মোলামগাড়ীহাট নর্থপোল কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মৌসুমের শুরু থেকে আলুর দাম কম। এ জন্য কৃষক ও ব্যবসায়ীরা শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। ’</p> <p>ব্র্যাকের জয়পুরহাট অঞ্চলের বিক্রয় ব্যবস্থাপক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্র্যাকের আলুবীজে কৃষকের আস্থা বেশি থাকায় চাহিদা ব্যাপক। এবার জেলায় ১০ হাজার টন ব্র্যাক আলুবীজের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে সাত হাজার টন, যা নির্ধারিত মূল্যে অনুমোদিত ডিলাররা বিক্রি করেছেন। এখানে বেশি দাম নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ’</p> <p>কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক আব্দুল করিম বলেন, ‘সারের কোনো সংকট নেই। কৃষকরা অতিরিক্ত সার ব্যবহারের সুযোগ না পেয়ে সংকটের কথা বলছেন। এবার ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১৬ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা আলু রোপণ করেছেন। ’</p>