<p>নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটি গঠন করে ফের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন দাবি করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। অন্যদিকে বৈরি পরিবেশের মধ্যেও সুন্দর ভোট হয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী পন্থীরা।</p> <p>দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি করা হয়। গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট হয়। আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হট্টগোল, মারামারি, ভাঙচুর, হামলার মধ্যে পুলিশ প্রহরায় চলে ভোট গ্রহণ। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভোট গণনার পর আওয়ামী পন্থী প্যানেলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এরপরই রবিবার দুপুরে নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনে আসেন দুই পক্ষের আইনজীবীরা।</p> <p>সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপিত মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক মো. আব্দুন নূর দুলাল প্রথমে সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেন। এর পরপরই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের ব্যানারে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল। সমিতির নির্বাচনে খোক সভাপতি আর কাজল সম্পাদক প্রার্থী হয়েছিলেন।</p> <p>বৈরি পরিবেশে সুন্দর ভোট হয়েছে দাবি ফকির-দুলালের</p> <p>সুপ্রিম কোর্টে সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী পন্থীদের সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, ভাঙচুরকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আর এসবের জন্য দায়ী করা হয়, এ এম মাহবুবু উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজলকে।</p> <p>লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভোটের আগের রাতে গত ১৪ মার্চ রাতে খোকন ও কাজল সন্ত্রাসী কায়দায় সমিতির কনফার্নেস রুমে ঢুকে গালাগালি করে কিছু ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের আগের রাতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। এ ছাড়া ভোটের প্রথম দিন অর্থাৎ গত ১৫ মার্চ খোকন-কাজল বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকে ভাঙচুর-মারধর করে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে ভোট গ্রহণ বিলম্বিত হয়। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া ভোট গ্রহণের কোনো বিকল্প ছিল না বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে।</p> <p>সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন নিয়ে আইনজীবী ও বিভিন্নজন প্রশ্ন তোলেন। কার নির্দেশে পুলিশ মোতায়েন হয়েছিল, সে প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ।</p> <p>সমিতির আগের সব নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার উদাহরণ টেনে ফকির-দুলালের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ নির্বাচনে পদত্যাগকারী আহ্বায়ক মো. মুনসুরুল হক চৌধুরী সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। শুধু তাই না, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতেই পুলিশ মোতায়েন হয় বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।</p> <p>সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার দুঃখ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ‘এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির দায়ভার বিএনপির গণতন্ত্রবিরোধী, ভোটবিরোধী, নির্বাচন বিমুখ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সামগ্রিক বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সংযম, দায়িত্বশীলতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল অঙ্গীকারের পরিচয় দিয়েছি। বিপুল সংখ্যক আইনজীবীদের উপস্থিতিতে বৈরী পরিবেশের মধ্যেও এক সুন্দর ভোট অনুষ্ঠিত হয়।’</p> <p>আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি খোকন-কাজলের</p> <p>সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে অনুষ্ঠিত খোকন কাজলের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের নির্দেশে আওয়ামী সাদা প্যানেলের সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী শত শত পুলিশ এনে নারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। তারা আইনজীবীদের আক্রমণ করে। পুলিশের আক্রমণ থেকে নারী আইনজীবীরাও রেহাই পায়নি। পুলিশের হামলা ও নির্বাচনের সামগ্রীক পরিস্থিতি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের জানিয়ে প্রতিকার চাওয়া হয়েছিল।</p> <p>লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, তার পরেও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের তাণ্ডবের দৃশ্যমান কোনো প্রতিকার হয়নি। তাই আমরা অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক কার‌্যকরী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক অবিলম্বে একটি নির্বাচন সাব কমিটি গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জোর দাবি জানাচ্ছি। আর আইনজীবী-সাংবাদিকদের ওপর ন্যাক্কারজনক পুলিশি হামলার নির্দেশদাতা আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করছি।</p> <p>সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী পন্থীরা সাদা প্যানেল, আর বিএনপি পন্থিরা নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত। সমিতির বর্তমান কার‌্যনির্বাহী কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদকসহ সাতটি পদ আওয়ামীপন্থিদের দখলে। বাকি সাতটি পদে আছেন বিএনপিপন্থীরা। কমিটিতে কোনো পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সমিতির কার‌্যনির্বাহী কমিটির (২০২৩-২৪) নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি গঠন নিয়ে মতানৈক্য হয়। ফলে দুই পক্ষ প্রথমে আলাদা সাব কমিটি ঘোষণা করে তফসিল ঘোষণা করলেও পরে একমত হয়ে সাবেক বিচারক, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটি ঘোষণা করা হয়।</p> <p>কিন্তু ভোটের গত ১৩ মার্চ মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগ করলে ভোট গ্রহণ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরে নতুন আহ্বাক নিযুক্ত করাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নির্বাচন পরিস্থিতি। গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় দুই পক্ষই নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির আহ্বায়ক করা নিয়ে বিবাদে জড়ায়। পাল্টাপাল্টি স্লোগান, বিক্ষোভ মিছিলের এক পর‌্যায়ে হাতাহাতিও জড়ান আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। পরে সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক নেতৃত্বাধীন আওয়ামীপন্থীরা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামানকে আর সমিতির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও দুই সহ-সম্পাদক নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থিরা আইনজীবী এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক ঘোষণা করে। পরে মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন কমিটির অধীনে ভোট হয়। ভোটের ফলে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী পন্থী সাদা প্যানেল। ভোটের ফল ঘোষণা পর‌্যন্ত ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছিল। <br />  </p>