<p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।</p> <p>আজ সোমবার সকালে জাপানের নাগাসাকি ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন মেমোরিয়াল হলে জাপানের নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন। ঢাকায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।</p> <p>জাহিদ মালেক বলেন, গত ৩ বছরে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করতে নতুন করে প্রায় ৭০ হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার চিকিৎসক, ৩০ হাজার নার্স এবং ২০ হাজার অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>সম্মেলনে বাংলাদেশ, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, জাপানসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্যসেবায় তাদের নিজ দেশ ও সংস্থার কার্যক্রম তুলে ধরেন। সম্মেলনে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম অংশ নেন।</p> <p>বাংলাদেশের হাসপাতাল সেবার মান বৃদ্ধি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশের প্রায় ৫০০টি উপজেলায় ২৫ বেড থেকে বর্তমানে ৫০ বেডের আধুনিক হাসপাতাল করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালকে ২৫০ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। ২২টি ৫০০ বেডের আধুনিক মানের চিকিৎসা ইনস্টিটিউট, ১০০০ বেডের ৩৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পাঁচটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে।</p> <p>তিনি বলেন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৪ হাজার ২৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনা মূল্যে ৩২ রকমের ওষুধ দেওয়া হয়। এই ক্লিনিকগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার লোকবল স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে চার হাজার ৬৫০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের বিনা মূল্যে ওষুধ, পরামর্শ ও ডেলিভারি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।</p> <p>স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সময় উপযোগী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, দেশের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্ক বিবাহিত নারী গড়ে ৬.৯ জন সন্তান জন্ম দিতেন। বর্তমানে প্রতিটি নারী গড়ে দুটি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। এতে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে ভারসাম্য রক্ষা পেয়েছে। বাংলাদেশ শিশু মৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করায় জাতিসংঘের কাছ থেকে ২০১০ সালে এমডিজি পুরস্কার লাভ করে।</p> <p>টিকা প্রদানে বাংলাদেশের সফলতা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৪ সালে টিকাদানে বাংলাদেশের সফলতা ছিল মাত্র ২ ভাগের নিচে। বর্তমানে ২০২২ সালে সেটি দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশে। বর্তমানে দেশের ৯২ শতাংশ ১২-১৩ বছর বয়সী শিশু যক্ষ্মা, হাম, পোলিও, টিটেনাস, হেপাটাইটিস রোগমুক্ত।</p> <p>দেশে ওষুধ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, দেশে বর্তমানে ৩.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে। এসব ওষুধ দেশের ৯৭ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।</p> <p>করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম স্থান ও দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনায় এত বড় সাফল্যের মূলে রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ। স্বল্প সময়ে অধিক জনবল কাজে লাগিয়ে দেশের লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এই টিকার প্রায় ৩৭ কোটি ডোজ মানুষকে বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ করোনায় কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে।</p> <p>তিনি বলেন, করোনায় দেশের হাসপাতালগুলোতে থাকা মাত্র ৫৭৮টি আইসিইউ বেড থেকে বর্তমানে ২০০০টি আইসিইউ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। মাত্র একটি সেন্ট্রাল লাইন অক্সিজেন প্লান্ট থেকে দেশে এখন ১২০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন করা হয়েছে। এতে করোনার দুর্যোগকালীন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো হাসপাতালেই অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়নি। বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে জাপানসহ, বিশ্ব ব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন।</p> <p>সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট কোহনো এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নায়োকো ইয়ামামোতো। মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন স্কুল অব হাইজেনি অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পক্ষে অধ্যাপক কারা হ্যানসন। সূত্র : বাসস</p>