<p>জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাজেটে মোট জাতীয় উৎপাদনের অন্তত ৩.২ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করেছেন নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিরা। তারা দেশের কর ও আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার এবং জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের প্রকল্প প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।</p> <p>আজ সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশের (ইক্যুইটিবিডি) রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডির সৈয়দ আমিনুল হক।</p> <p>তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বাজেটের একটি বিশেষ অংশ বরাদ্দ করা হয়। দাতাদের দেখানোর জন্য দুর্যোগের জন্য বরাদ্দকৃত সেই অর্থ এখন জলবায়ু অর্থায়ন হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। এই বরাদ্দ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।</p> <p>ডেল্টা প্ল্যান-২১০০, মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা-২০৩০ এবং ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড প্ল্যানসহ অন্যান্য সরকারি কৌশলগত জলবায়ু পরিকল্পনাহসূহ বাস্তবায়নে প্রতিবছর জিডিপির প্রায় ৩.২ শতাংশ (বছরে এক লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকা) অর্থ প্রয়োজন উল্লেখ করে চূড়ান্ত বাজেটে তা বরাদ্দের সুপারিশ করেন তিনি।</p> <p>সেন্টার ফর সাসটেইনেবল রুরাল লাইভলিহুডের (সিএসআরএল) মো. জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, ডেল্টা ও মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাসহ সরকারি পরিকল্পনায় নীতিগত সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ বাজেট এই অসঙ্গতির ফল। বাজেটে বাস্তবসম্মত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্য নেই। সরকারকে কৌশলগত জলবায়ু পরিকল্পনার বিষয়গুলিতে জোর দিতে হবে। সেই অনুযায়ী জলবায়ু অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।</p> <p>সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) মো. শামসুদ্দোহা বলেন, সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতার অভাব এবং তাদের খাতভিত্তিক কোনো পরিকল্পনা নেই, এ কারণেই আলাদা জলবায়ু অর্থায়নের প্রয়োজন। মন্ত্রণালয়গুলো বরং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অর্থ নিতে আগ্রহী, কারণ সেখানে তুলনামূলক জবাবদিহি এবং স্বচ্ছতা খুব কম। জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।</p> <p>অ্যাওসেডের শামীম আরেফিন বলেন, সরকার উপকূল সুরক্ষার বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করেছে। এ কারণেই জলবায়ুতাড়িত বাস্তুচ্যুতি ও স্থানান্তর ঘটছে। আর্থ-সামাজিক ভারসাম্যহীনতা বাড়ছে। সরকার সমস্যাগুলোকে গুরুত্বসহ বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী জলবায়ু অর্থায়নের কৌশল সংশোধন করবে বলে তিনি আশা করেন।</p> <p>বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরামের কাওসার রহমান প্রস্তাবিত বাজেটটিকে আইএমএফের শর্তের প্রতি সরকারের সম্মতি ও পরিপালন হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এই বাজেট ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর আরোপের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের দাবিকে অগ্রাহ্য করেছে। বাজেট সংশোধন ও রাজস্ব আদায়ের জন্য সম্পদ কর প্রবর্তনের দাবি জানান তিনি।</p> <p>একটি সমন্বিত উপকূলীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থায়নের দাবি জানান রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, সমন্বিত এই পরিকল্পনার আওতায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, সামাজিক উন্নয়ন, কারিগরি শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির কর্মসূচি বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি করা সম্ভব হলে উপকূলীয় জনগণের জন্য একটি প্রকৃত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।</p>