<p>দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে মানববন্ধনের আয়োজন করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এই কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগ দেন ছাত্র-শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।</p> <p>মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দুষ্কৃতকারীদের কোনো ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার না করা হলে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় প্রতিবাদের ঝড় উঠবে।</p> <p>দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কালের কণ্ঠ’র নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—</p> <p><strong>ঢাকা : </strong>রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্সের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয় গতকাল বিকেল ৩টায়।</p> <p>এ সময় সংবাদকর্মীরা বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকরা অস্ত্র হাতে নেব না। আমাদের কলম আছে, আমরা সত্যটা লিখতে চাই। সন্ত্রাসীদের আর কোনো ছাড় নয়। এর পরও যদি আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা হয়, তাহলে জনগণ দিয়ে তাদের নির্মূল করা হবে।’</p> <p>মানববন্ধনে কালের কণ্ঠ’র সহকারী সম্পাদক আলী হাবিব বলেন, ‘আমরা সব সময় মানুষের দাবির পক্ষে কথা বলেছি। কিন্তু যে ঘটনাটি গতকাল ঘটে গেল, তার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন। আমরা দাবি জানাচ্ছি, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করা হয়।’</p> <p>বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক জুয়েল মাজহার বলেন, ‘গতকাল গণমাধ্যমের শক্তির ওপর হামলা হয়েছে। এখানে যাঁরা কর্মরত সাংবাদিক আছেন, তাঁদের কলমের বিরুদ্ধে লাঠি এসেছে। কলমকে কখনো লাঠি দিয়ে রুদ্ধ করা যাবে না। অস্ত্র দিয়ে কণ্ঠকে রুদ্ধ করা যাবে না।’</p> <p>ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি সানের প্রধান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের সম্মান জানাই। এখানে অন্য কোনো শক্তি কাজ করছে। তারা নিজেদের স্বার্থে এসব হামলা চালাচ্ছে। কাজেই ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে এখানকার আক্রমণের কোনো সম্পর্ক নেই। এই হামলা হলো কিছু দুষ্কৃতকারীর হামলা। এই দুষ্কৃতকারীদের কোনো ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও জায়গা দেওয়া যাবে না।’</p> <p>রেডিও ক্যাপিটালের ইনচার্জ রুহুল আমিন রাসেল বলেন, ‘মানুষের শেষ ভরসার আশ্রয়স্থল গণমাধ্যমে হামলার মানে গণতন্ত্র ও সংবিধানের ওপর হামলা। কারণ সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষায় গণমাধ্যমের রয়েছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে বিনীত অনুরোধ, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দ্রুত দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করুন। অন্যথায় সারা বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীরা রাজপথে সোচ্চার প্রতিবাদ জানাবে।’</p> <p>নিউজটোয়েন্টিফোরের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা বলেন, ‘সুযোগ সন্ধানীরা ভেবেছে ভয় দেখিয়ে আমাদের কলম বন্ধ করে দেওয়া হবে, ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। তারা সামনে বুঝতে পারবে যে কোথায় হাত দিয়েছে। প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা খুঁজে বের করুন কারা এ হামলা চালিয়েছে। আমাদের কাছে যে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, তা আমরা সাপ্লাই দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’</p> <p>মানববন্ধনের বক্তব্যপর্ব সঞ্চালনা করেন দৈনিক কালের কণ্ঠ’র উপসম্পাদক হায়দার আলী। তিনি বলেন, ‘ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রথম থেকে লিখে আসছেন। আমরা আগামী দিনেও লিখে যাব, কোনো সন্ত্রাসীদের হামলা আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা বেনজীরের মুখোশ যেভাবে উন্মোচন করেছি, একইভাবে আগামী দিনে যে সরকারই আসুক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কারো এক ফোঁটা ছাড় নেই। আমাদের ওপর হামলাকারীদের চেহারা সিসিটিভিতে আছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়াসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি।’</p> <p>মানববন্ধনে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘একত্র হওয়াটাই আমাদের বড় শক্তি। গতকাল (সোমবার) আমাদের মিডিয়ার ওপর যে আক্রমণ হয়েছে, সেটা ন্যক্কারজনক। আমি এই দুর্বৃত্তদের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তি দাবি করি। তাদের আক্রমণের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আমাদের প্রতি সহানুভূতি ব্যক্ত করেছেন। এর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন নেতা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, মিডিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। সুতরাং আমরা মনে করি, আমাদের পাশে সমগ্র দেশ আছে।’</p> <p>মানববন্ধনে কালের কণ্ঠ, ডেইলি সান, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বাংলা নিউজ, নিউজ ২৪, টি স্পোর্টস ও ক্যাপিটাল রেডিওর প্রায় এক হাজার সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।</p> <p><strong>চট্টগ্রাম : </strong>গতকাল দুপুর সোয়া ২টায় এস এস খালেদ সড়কের কর্ণফুলী মিডিয়া টাওয়ারের সামনে মানববন্ধনে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক অংশ নেন। বক্তারা বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সব সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p><strong>রংপুর : </strong>সকাল ১১টায় রংপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে  বিক্ষোভ  ও মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে অংশ নেন রংপুরে কর্মরত সাংবাদিক ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নাগরিক সংগঠনের চার শতাধিক নেতাকর্মী। হামলায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ও আইনগত ব্যবস্থার দাবি করে সাংবাদিকরা বলেন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করার জন্য একটি কুচক্রীমহল ষড়যন্ত্র করছে। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিরোধ করতে হবে।</p> <p><strong>রাজশাহী : </strong>সকাল ১১টায় রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে দড়িখরবোনা মোড়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষ। মানববন্ধনে বক্তারা ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্সে ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। সেই সঙ্গে হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।</p> <p><strong>বরিশাল : </strong>বরিশাল সাংবাদিক সমাজের আয়োজনে বিকেল ৪টায় নগরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সদর রোডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে বরিশালে কর্মরত সাংবাদিকরাসহ ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজয় বিশ্বাস শুভ এবং ভূমিকা সরকার বক্তব্য দেন।</p> <p>সাংবাদিকরা বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুফলকে বাধাগ্রস্ত করতে এ হামলা হয়েছে কি না সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ধৃষ্টতা আর কেউ দেখাতে না পারে।</p> <p><strong>কুমিল্লা : </strong>সকাল ১১টায় কান্দিরপাড় এলাকায় কুমিল্লা টাউন হলের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে সাংবাদিক ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনরা অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ষড়যন্ত্রকারী ও সন্ত্রাসীরা চায় গণমাধ্যমকে দাবিয়ে রাখতে। এ জন্য তারা গণমাধ্যমের লাগাম টানতে চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শুরুতেই এমন হামলার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তাই অনতিবিলম্বে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। না হলে সারা দেশের সাংবাদিকরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবেন।</p> <p>এ ছাড়া বান্দরবান, রাঙামাটি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, ঝালকাঠি, নেত্রকোনা, ভালুকা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নীলফামারী ও দিনাজপুরেও গতকাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।</p>