<p style="text-align:justify">পোশাক শিল্পাঞ্চলে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে অস্থিরতা চলছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এই অস্থিরতার কারণে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১৬৭টি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কারখানা এলাকায় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ পোশাক কারখানাগুলো আবার চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা। অস্থিতিশীলতা দমনে পুরো শক্তি নিয়োগ করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে অস্থিরতা" height="190" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/05-09-2024/89899900.jpg" style="float:left" width="346" />গতকাল বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এ সভা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, পরিচালক শোভন ইসলাম প্রমুখ।</p> <p style="text-align:justify">এর আগে সংগঠনের আটজন সাবেক সভাপতিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংকট উত্তরণে করণীয় ঠিক করতে বৈঠক করেন।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify">বৈঠকে পোশাক কারখানার মালিক, সেনাবাহিনী, পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, উদ্ভট সব দাবির আড়ালে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে একটি বিশেষ শ্রেণি পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, বহিরাগতদের হামলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। এখন সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশের গোয়েন্দারা কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলেছেন। তাঁরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। তাই কাল (আজ) থেকে পোশাক কারখানা খোলা থাকবে।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে সাবেক নেতাদের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিজিএমইএ নেতারা শিল্পাঞ্চলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করলেও প্রকৃত কারণ সাধারণ সদস্যদের জানানো হচ্ছে না। এতে পেছন থেকে সদ্য নিষ্ক্রিয় একটি বড় রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের ইন্ধন থাকলেও আমলে আনা হচ্ছে না।</p> <p style="text-align:justify">উৎসব ছুটি ১২ দিন, চাকরির ছয় মাস হলেই উৎসব ভাতা প্রদান, হাজিরা বোনাস এক হাজার টাকা, টিফিন বিল-নাইট বিল প্রদান, প্রতিবছর ইনক্রিমেন্ট দেওয়া, নারী শ্রমিক বেশি নিয়োগ না দেওয়া—এ রকম প্রায় দুই ডজন দাবি তুলেছেন পোশাক শ্রমিকরা।</p> <p style="text-align:justify">কারা বিক্ষোভ করছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘কারখানার অভ্যন্তরীণ সমস্যা খুব কম। বহিরাগত কারা বিক্ষোভ করছে, চিহ্নিত করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারি।’</p> <p style="text-align:justify">বিজিএমইএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, বিক্ষোভ শুধু তৈরি পোশাক নয়, অন্যান্য শিল্পেও ছড়িয়ে পড়েছে। শিল্প-কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিল্প পুলিশ মূল ভূমিকা রেখে থাকে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনায় তারা বিপর্যস্ত। এই সুযোগে সবাই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত</strong></p> <p style="text-align:justify">স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অফিসকক্ষে কয়েকজন উপদেষ্টার বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে বিশৃঙ্খলকারীদের গ্রেপ্তার বা আটকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টারা বলেন, এই অসন্তোষের কোনো গতি-প্রকৃতি বোঝা যাচ্ছে না। ভাঙচুরের পেছনে ‘ভাড়াটে’ ও ‘টোকাইরাও’ দায়ী। ৫০ জন রাস্তায় বসে পড়লে পাঁচ লাখ মানুষের অসুবিধা হবে। কাজেই তাদের সরাতে যদি বল প্রয়োগ করতে হয়, লাঠিপেটা করতে হয়, জলকামান ব্যবহার করতে হলে সরকার সেটা করবে।</p> <p style="text-align:justify">নিজস্ব প্রতিবেদক গাজীপুর  জানান, শান্ত হয়নি গাজীপুরের শিল্পাঞ্চল। বরং নতুন নতুন কারখানায় ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন। গতকালও চাকরিতে পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের বেশ কয়েকটি স্থানে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। এতে সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।</p> <p style="text-align:justify">এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকরা নগরীর চান্দনা চৌরাস্তা, চৌধুরীবাড়ি, ভোগড়া বাইপাস, ছয়দানা হারিকেন, কাশিমপুর ও টঙ্গীতে বেশ কয়েকটি কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করে। সাইনবোর্ড, জিরানি বাজার, কোনাবাড়ী, বাসন, বাঘের বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গতকাল গাজীপুরে ৬০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে জানান গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ।</p> <p style="text-align:justify"><strong>শ্রীপুরে সিরামিক কারখানায় বিক্ষোভ</strong></p> <p style="text-align:justify">গাজীপুর আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, শ্রীপুরে ১১ দফা দাবিতে একটি সিরামিক কারখানার শ্রমিকরা গতকাল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দফায় দফায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সকাল ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ও শিল্প পুলিশ সেখানে পৌঁছে কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুরাহার কথা বললে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শ্রমিকরা। উপজেলার ধনুয়া এলাকায় আরএকে সিরামিক বিডি লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা এ আন্দোলন করেন।</p> <p style="text-align:justify">আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, কারখানার কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন ভারতের নাগরিক রয়েছেন। তাঁদের অপসারণ করতে হবে। এ ছাড়া বাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মজুরি ও বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধিসহ (ইনক্রিমেন্ট) তাঁদের ১১ দফা দাবি রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">আন্দোলনরত শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানায় কর্মকর্তা যে কজন ভারতের নাগরিক, তাঁরা তাঁদের মূল্যায়ন করেন না। তাঁদের কাছে তাঁরা (শ্রমিক) ভালো আচরণও পান না। শুধু তাই নয়, ওই কর্মকর্তারা আসার পর থেকে তাঁরা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।</p> <p style="text-align:justify">কারখানাটির শ্রমিক আরিফুল ইসলাম জানান, তাঁদের অভিযোগগুলো গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সমাধানের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ১১ দফা দাবিতে গতকাল সকাল প্রায় ৭টা থেকে কর্মবিরতি দিয়ে তাঁরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নেমে পড়েন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>বাংলাদেশ বেকার সংগঠনের প্রচারপত্র</strong></p> <p style="text-align:justify">পোশাকশিল্প এলাকায় বাংলাদেশ বেকার সংগঠন নামের একটি সংগঠন বিভিন্ন দাবিসহ একটি প্রচারপত্র বিলি করে। এতে সাতটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এই সংগঠন থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০০ জনকে চাকরি দিতে হবে; অদক্ষ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ দিতে হবে; শ্রমিকদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে; নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের অনুপাত ৫০ শতাংশ করে রাখতে হবে; প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে মজুরি প্রদান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।</p>