<p style="text-align:justify">সরকার, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরও থামছে না পোশাক শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক অসন্তোষ। এর প্রভাবে গতকাল বুধবার বন্ধ ছিল ১১৪ কারখানা। এর মধ্যে ৫৪ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন মালিকরা।</p> <p style="text-align:justify">শিল্পাঞ্চলে গার্মেন্টসশিল্পে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাঙচুর ও বেআইনি ধর্মঘটের কারণে কারখানা চালানোর অনুকূল পরিবেশ না থাকায় এবং সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে অনেক মালিক বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৩(১) ধারা অনুসারে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন।এতে কারখানা বন্ধ থাকাকালে শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, পোশাক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিক যাতে ব্যাংক থেকে দ্রুত ঋণ পেতে পারেন, এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।</p> <p style="text-align:justify">শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৩(১) ধারা ঘোষাণার ফলে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়বে বলে মনে করেন শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহামান। তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ জিইয়ে রাখতে তৃতীয় পক্ষের সুযোগ আরো বাড়বে। বিনা মজুরিতে এই সময় ছুটিতে থাকার ফলে শ্রমিক অসন্তোষকে আরো উসকে দেওয়া হলো বলে তিনি মনে করেন। </p> <p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করতে তৃতীয় পক্ষ বর্তমান শ্রমিক অসন্তোষের জন্য দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারখানাগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতাদের হাত থেকে হাতবদল হওয়া ঝুট ব্যবসায়ীরা বিএনপির হাইব্রিড নেতাদের সামনে এনে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছেন। </p> <p style="text-align:justify">পরিস্থিতি নাগালে আনতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করার পাশাপাশি কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন এই নেতা।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে বিজিএমইএর তথ্য মতে, কাজ নেই মজুরি নেই—২০০৬ শ্রম আইন ১৩/১ ধারায় বন্ধ হয়েছে দেশের ৫৪ কারখানা। এ ছাড়া বেতনসহ বন্ধ করা হয়েছে ৬০ কারখানা। গতকাল দুই হাজার ২৮টি কারখানা খোলা ছিল। এসব কারখানার মধ্যে দুটিকে বন্ধ রাখতে হয়েছে। এ ছাড়া পোশাক শ্রমিকদের আগস্ট মাসের মজুরি দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৩০৯টি বা ৬১ শতাংশ কারখানা।</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি আবদুল্লা হিল রাকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে দর-কষাকষির সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে নো ওয়ার্ক, নো পে বা শ্রম আইন ১৩/১ ধারায় ৫৪ কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঝুট ব্যবসায় প্রধান্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর উসকানি কাজ করছে। আওয়ামী লীগ সামনে আসছে না। তবে তারা মাঠে আছে। এরই মধ্যে শিল্পাঞ্চলে উসকানিদাতা একজন ছাত্রলীগ নেতাকে সরকার গ্রেপ্তার করেছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে অঞ্চলভিত্তিক কর্মসূচি নেওয়া হবে।  এ ছাড়া শ্রম উপদেষ্টার সঙ্গে বিজিএমইএ নেতার বৈঠক শনিবার। ক্রেতাদের সঙ্গেও বসবেন আগামী রবি-সোমবার। তবে আমাদের আশা, শনিবার থেকে সব পোশাক কারখানা খোলা রাখা হবে। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দফায় দফায় আলোচনা চলছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>বৃহস্পতিবারের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন : শ্রম উপদেষ্টা</strong></p> <p style="text-align:justify">গাজীপুর-সাভারে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁদের বেতন পরিশোধের কথা জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। একই সঙ্গে পোশাক এলাকা ঢাকার সাভার ও গাজীপুরে চলা শ্রম অসন্তোষের পেছনের প্রকৃত ঘটনা জানতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠনের কথাও বলেছেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সাভারের আশুলিয়ায় পোশাক কারখানাগুলোতে যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) সকালের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>শ্রমিকদের দাবি এক জায়গায় শুনতে কমিটি গঠন</strong></p> <p style="text-align:justify">শ্রমিকদের সব ধরনের দাবি একটি জায়গার মাধ্যমে গ্রহণ করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘শ্রমিকরা যেন একটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিগুলো জানাতে পারেন, এ জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ক্যাবিনেট বৈঠকে শ্রম পরিস্থিতি রিভিউ করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। সেই লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">এই কমিটি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরাসরি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সুনির্দিষ্ট করা হবে এবং তা সমাধান করা হবে। কমিটি সমস্যা বুঝে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের সঙ্গে কথা বলবে।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>পোশাকশিল্পের অস্থিরতার নেপথ্যে</strong></p> <p style="text-align:justify">গাজীপুরের আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর মহানগর ও জেলায় তিন হাজার ২০০ বিভিন্ন ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা দুই হাজার ২০০টি। ২০০৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবসা করে আসছেন। এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন সময় শ্রমিকরা আন্দোলন করেছেন।  ওই সব শ্রমিক আন্দোলনে একাধিক শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার স্থানীয় নেতাদের দিয়ে পোশাক শ্রমিক নেতাদের সহযোগিতায় শ্রমিক আন্দোলন বন্ধ করতে সক্ষম হয়।</p> <p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগের এই দীর্ঘ সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানে ঝুট ব্যবসাসহ লাভজনক বিভিন্ন ব্যবসায় বেশ কিছু জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অন্যরাও জড়িত হয়। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবসা করার জন্য অন্যরা মরিয়া হয়ে ওঠে। উচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি থাকা সত্ত্বেও দখল বাণিজ্য বন্ধ হয়নি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>বিগবস ফ্যাক্টরির গোডাউনে আগুন</strong></p> <p style="text-align:justify">গাজীপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক ও আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুরে বিগবস নামক ফ্যাক্টরির গোডাউনে আগুন দিয়েছেন শ্রমিকরা। গতকাল  দুপুর ১টায় এ ঘটনা ঘটে। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, আজকে  (গতকাল) কাশিমপুর থানার বিগবস নামক ফ্যাক্টরির গোডাউনের পাশের কারখানার আন্দোলনকারী শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে আগুন দিয়েছেন। </p> <p style="text-align:justify">বিগবস কারখানার কর্মকর্তা ওয়াহেদ খান বলেন, ‘বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা আমাদের  কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় এসে হামলা ও ভাঙচুর চালান।’</p> <p style="text-align:justify">আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ‘বিগবস কারখানায় আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একটি গাড়ি ভাঙচুর করলে কর্মীরা ফেরত আসেন। ফের কাশিমপুর ও ডিবিএল ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>আশুলিয়ায় ২৬ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ</strong></p> <p style="text-align:justify">সাভার প্রতিনিধি জানান, সাভারের আশুলিয়ায় বিভিন্ন দাবিতে গত কয়েক দিনের চলমান শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে ২৬টি তৈরি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল এ ঘোষণা দেয় সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আরো অন্তত আটটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের সড়ক অবরোধ বা বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। তবে শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানাসহ ঢাকা ইপিজেডের কারখানাগুলো চালু রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, সকাল থেকে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধ, কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। বেশির ভাগ কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে।</p>