<p>গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।</p> <p>আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি করে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের এই সংগঠন দুটি। এ সময় সাগর-রুনীসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিও জানানো হয়।</p> <p>সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সাগর-রুনীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। যে সরকারের সময় হত্যা করা হয়েছিল, সেই সরকারের অনেক প্রিয়ভাজন ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে অনেক মানুষ মনে করে। এ কারণে দীর্ঘ সময় এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হয়েছে, কিন্তু চার্জশিট দেওয়া হয়নি। এখন এই সরকারের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) দায় মুক্তির সময়। যদি তারা এই দায় কাঁধ থেকে নামাতে চায়, তাহলে সাগর-রুনী হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার। তারা বলেছে, এটি তারা করবে। আমরাও বিশ্বাস করি এটি তারা করবে। কিন্তু সময় থাকতে তা শেষ করতে হবে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। সেই বিবেককে যদি মুক্ত না করা হয়, কালাকানুন যদি বাতিল করা না হয়, তাহলে দেশের কী পরিস্থিতি, এটি তুলে ধরা সাংবাদিকদের জন্য খুব কঠিন। এই সরকারের সাংবাদিকরা যে দাবি জানিয়েছেন, আমি আমার দলের পক্ষ থেকে সেটি সমর্থন করছি।’</p> <p>সমাবেশে বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীসহ যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে তাদের বিচারের দাবিতে আমার এখানে দাঁড়িয়েছি। সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা আইন করতে হবে। মুক্তভাবে সাংবাদিকতা করার সুযোগ করে দিতে হবে। যেসব সাংবাদিকরা হাসিনার কুকর্মে সমর্থন দিয়েছে আমরা তাদেরও বিচার চাই। আমাদের দাবিগুলো অবিলম্বে মেনে নিতে হবে। সাগর-রুনীর হত্যার বিচার অবিলম্বে করতে হবে।’</p> <p>সমাবেশে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠ’র সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘এখনো কালাকানুনগুলো দূর করা হয়নি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এখনো নিরঙ্কুশ হয়নি, নিশ্চিত হয়নি। অনেক সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি। সেগুলোর বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি। কালাকানুনগুলো যেন রোধ করা হয়। সাগর-রুনীর প্রকৃতি খুনিদের যেন চিহ্নিত করা হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। একটি অন্তর্বর্তী সরকারের এখন দেশ চালাচ্ছে। তারা একটি সংস্কারের কাজ করছে। আমাদের দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রত্যেকের দায়িত্ব তাদের সহায়তা করা, সংস্কারের ক্ষেত্র তৈরি করা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সুগম করা। সে ক্ষেত্রে আমাদের সবার দায়-দায়িত্ব আছে।’</p> <p>৩৬ জুলাই শেষ হয়ে যায়নি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার চলতেই থাকবে। এই সংস্কার শুরু হয়েছে এবং পরবর্তীতে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের হাতে সেই সংস্কার চলবে। গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি এখনো অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি এবং আঞ্চলিক ও পরাশক্তিগুলোর মধ্যেও আমাদের এই সাফল্য নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আছে৷ এগুলোর ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা যেন এগুলো সম্মিলিতভাবে, ঐক্যবদ্ধভাবে, সচেতনতার সঙ্গে, পরিপক্বতার সঙ্গে, ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করি।’</p> <p>সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। আমরা তিনটা দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছি। প্রথম দাবি ছিল, এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ এবং একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা। দ্বিতীয় দাবি ছিল, সাগর-রুনীসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার। তৃতীয় দাবি ছিল, সব বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিতে হবে। দীর্ঘ আন্দোলন এবং সংগ্রামের পরে সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে, ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে আজকে এই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এখনো দুটি দাবি আদায় হয়নি। সেগুলো হলো, সাগর-রুনীসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়নি।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আমরা উপদেষ্টা পরিষদের কাছে আহ্বান রাখতে চাই, অবিলম্বে সব সাংবাদিক হত্যার বিচার করতে হবে। এর বাইরে আমরা কোনো কথা শুনতে চাই না। কোনো টালবাহানা দেখতে চাই না। আমরা ১৬ বছর ধরে যে দাবি করে আসছি সেটার থেকে এক চুলও নড়ব না। সাগর-রুনীসহ ৬৫ জন সাংবাদিক হত্যার বিচার করতে হবে। এরপর সব বন্ধ গণমাধ্যমগুলোকে খুলে দিতে হবে।’</p> <p>সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, সহসভাপতি রাশেদুল হক ও বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামসহ প্রমুখ।</p>