<p>আসন্ন দুর্গাপূজা বাধামুক্ত ও নিরাপদে উদযাপনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও অধিকারকর্মী। সেই সঙ্গে পূজাকে উপলক্ষ করে যারা ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং উদ্দেশ্যমূলক শর্ত আরোপের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।</p> <p>শনিবার (৫ অক্টোবর) এ বিষয়ে তাঁরা গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান। </p> <p>বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, বিগত কয়েক দশক ধরেই পূজার সময় আসলেই একটি মহল ধর্মভিত্তিক উত্তেজনা ছড়িয়ে এবং নানা ধরনের নাশকতা চেষ্টার মাধ্যমে পরিবেশকে অশান্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে। এবারও এর ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে না। ধর্ম অবমাননার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিভিন্ন পূজা মন্ডপে ভাঙচুর চালানোর উদাহরণ আমরা অতীতে দেখেছি। তারই ধারাবহিকতায় বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ধর্মবিদ্বেষী বক্তব্য প্রচার, ফেসবুকে নানা ধরনের সাজানো গল্প ছড়িয়ে উত্তেজনা তৈরি করে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে।</p> <p>বিবৃতিতে আরো বলা হয়, কিছু কিছু জায়গায় আমরা প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলার তথ্যও পেয়েছি। সেই সঙ্গে একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘুবিদ্বেষী মহল বেআইনি ও নৈতিকতাবিরোধীভাবে পূজার সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কি করতে পারবেন আর কি করতে পারবেন না তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং গর্হিত অপরাধ। আইন-শৃঙ্খলার অনিবার্য প্রয়োজনে কি করা যাবে বা যাবে না তা বলার এখতিয়ার সরকারের, অন্য কারো নয়।</p> <p>দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন যে পূজার সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ... আমরা বিশ্বাস করতে চাই সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেই সঙ্গে আমরা দাবি জানাচ্ছি, যারা উত্তেজনা তৈরি করছে বা সহিংসতার উস্কানি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আগেভাগেই কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং  ঘটনার পেছনে যারা আছে তাদেরকে তদন্তের মাধ্যমে শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।</p> <p>বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি হিসেবে এবছর বাংলাদেশে ৩২ হাজার ৪৬০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা পালিত হবে বলে জানানো হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের মানুষ সব ধর্মমতের মানুষকে নিয়ে সহিষ্ণুতা ও শান্তির সঙ্গে বাস করতে আগ্রহী। এখানে প্রতিটি ধর্মের উৎসব স্বাধীন ও নিরাপদে নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী পালনের পূর্ণ অধিকার থাকতে হবে এবং সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে তা পালিত হবার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সব ধর্মের উৎসব পালনে নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।</p> <p>বিবৃতিতে দলমত ও ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-লিঙ্গ নির্বিশেষে সর্বস্তরের নাগরিক ও ছাত্র-জনতাকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির অপপ্রয়াসে লিপ্ত দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে সবসময় সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহবান জানানো হয়।</p> <p>বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবীর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবায়দা নাসরিন, আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসাসহ ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও অধিকারকর্মী। </p>