<p>গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্রদের সঙ্গে থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাকে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন অনেকে। এই অভিযোগে বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন নির্মাতা ফারুকী।</p> <p>মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফারুকী। এতে তিনি বলেন, ‘আমি আমার চেয়ারের জন্য কোনো সাফাই দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। কিন্তু শিল্পী হিসেবে অপমানিত বোধ করেছি বলেই কয়টা কথা বলছি।’</p> <p>পোস্টে ফারুকী দাবি করেছেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। কোনো দল করেন না। তিনি মন্তব্য করেছেন, মৃত্যুর পর ফিল্মমেকার হিসেবেই তাকে মানুষ মনে রাখবে, মন্ত্রী হিসেবে না।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ‘রেড অ্যালার্ট’ চেয়ে ইন্টারপোলে চিঠি" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/12/1731416497-d6d55a82f7452d28747769bddd786a39.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ‘রেড অ্যালার্ট’ চেয়ে ইন্টারপোলে চিঠি</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/12/1445825" target="_blank"> </a></div> </div> <p>পাঠকদের জন্য মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- </p> <p>প্রিয় ভাই-বোনেরা, ঘুণাক্ষরেও যা আগে ভাবি নাই, এখন আমাকে সেটাই করতে হচ্ছে। যাই হোক শুরু করি। আমি মাত্রই দুই দিন হলো কাজ করছি। এর মধ্যে আমার ধারণা, আমার মন্ত্রণালয়ে সহকর্মীদের মাঝে এই ধারণা দিতে পেরেছি যে আমরা কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটাতে চাই, যেটা স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের সংস্কৃতিকর্মীদের কাজে আসবে।</p> <p>যা-ই হোক, যদিও আমি কোনো পদ চাই নাই, তবু দায়িত্বটা নেওয়ার পর আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এর মধ্যে আমাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে এক অবিশ্বাস্য অভিযোগের- আমি নাকি ফ্যাসিস্টের দোসর! যেই ফ্যাসিস্টকে তাড়ানোর জন্য জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশে দাঁড়ালাম ১৬ জুলাই থেকে, অল আউট অ্যাটাকে গেলাম এটা জেনে যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা টিকে গেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু অথবা জেল, আমি তারই সহযোগী?</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ফারুকীর কাঁধে সংস্কৃতির দায়িত্ব" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/10/1731254488-d6d55a82f7452d28747769bddd786a39.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ফারুকীর কাঁধে সংস্কৃতির দায়িত্ব</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2024/11/10/1445079" target="_blank"> </a></div> </div> <p>আমি আমার চেয়ারের জন্য কোনো সাফাই দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না। কিন্তু শিল্পী হিসেবে অপমানিত বোধ করেছি বলেই কয়টা কথা বলছি।</p> <p>শাহবাগ আন্দোলন যখন শুরু হয় আর সবার মতো আমিও ভেবেছিলাম এটা নির্দলীয়। যে কারণে আমার সব পোস্টে এটাকে ঠেলে ‘রাষ্ট্র মেরামতে’ এজেন্ডার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই যখন বুঝে যাই, তখনই লিখি ‘কিন্তু এবং যদির খোঁজে’। যে কিন্তু এবং যদি শাহবাগ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর ইসলামকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়ে আজকের যে ফ্যাসিবাদের সূচনা করা হয়েছিল তার প্রতিবাদে লিখি, ‘এই চেতনা লইয়া আমরা কি করিব’। ২০১৪ সালে। এই দুইটা লেখার যেকোনো একটা লেখা ছাপা হওয়ার পর বিএনপির শিমুল বিশ্বাস সাহেব ফোন দিয়েছিলেন কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য! আমি কোনো দল করি না। কিন্তু আমি আওয়ামী লীগ হলে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা আমার লেখায় কী খুঁজে পেলেন যে আমার সাথে পরিচয় না থাকা সত্বেও আমার নম্বর জোগাড় করে ফোন দিলেন? </p> <p>আমি ঘটনাচক্রে একজন পরিচিত মুখ, ভাই ও বোনেরা। একজন লেখক যতটা স্বাধীনভাবে লিখতে পারেন, ফ্যাসিবাদের কালে আমার সেই স্বাধীনতা পাওয়ার সুযোগ ছিল না। তার মধ্যেও যতটুকু করেছি তার ফলও আমাকে ভোগ করতে হয়েছে। ২০১৫ সালে সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন সেলের হেনস্তার শিকার হওয়ার মধ্যে যে দীর্ঘ অত্যাচারের শুরু। সেই বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আমার সিমপ্যাথি পাওয়ার ইচ্ছা এবং প্রয়োজন নাই।</p> <p>অনেকে বলছে, আমি ভারতীয় হেজেমনির অংশ। যে লোককে বাংলাদেশের কালচারাল এস্টাবলিশমেন্ট ঘৃণা করে আমি কলকাতাকেন্দ্রিক ভাষার হেজেমনি ভেঙে দিয়েছি বলে, সেই কিনা এই হেজেমনির অংশ!!! আমি পৃথিবীর কোনো দেশেরই ঢালাও নিন্দা করি না। কারণ দেশে নানা চিন্তার মানুষ থাকে। আমি সবার সাথেই কথা বলতে চাই, কাজ করতে চাই। কিন্তু আমার দেশের ক্ষতি হলে, আমি তার বিরুদ্ধে বলতে কুণ্ঠা করি না। ফেলানীর মৃত্যুর পর কি পোস্ট দিয়েছিলাম ২০১৩ সালে সেটা দেখতে পারেন নিচে।</p> <p>আমার অবস্থানের উপহার হিসেবে ভারতীয় হাইকমিশনে একসময় কর্মরত রঞ্জন মণ্ডল নামের এক কর্মকর্তা তার ফেসবুকে পাবলিক পোস্ট দিয়ে বহুবার কি অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করেছিল সেটা খোঁজ করে দেখুন। আর সেই আমি পার্ট অব হেজেমনি? আমরা এক অনন্ত ভয়ের ঘরে বাস করে এসেছি। আমরা কথা বলতে ভয় পেতাম। এমনকি কথা বলার সময় ঘরে ফোন থাকলে সরিয়ে ফেলতাম। পাছে আড়ি পাতে। আমার মনে আছে ২০১২ সালে শুধুমাত্র কথা বলার জন্য আমি আর ‘আরিফ আর হোসাইন’ লুকিয়ে আমেরিকান ক্লাবে গিয়ে বসে আলাপ করতাম কিভাবে এই জালিম সরকারকে হটানো যায়। বিএনপি এবং জামায়াত কিছু করতে পারবে? আর্মির মনোভাব কী? জোনায়েদ সাকির সাথে বাটন ফোনে কথা বলে গোপনে দেখা করতাম আর পরামর্শ করতাম কী করা যায়। সেই আমি আওয়ামী ফ্যাসিজমের পার্ট?<br /> আমি তো কোনো বিপ্লবী নই। ছিলাম না কোনো কালে। আমি ফিল্মমেকার। ঘটনাচক্রে এবং আল্লাহর রহমতে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি আমার সেই পরিচয়েই গর্বিত। আমি মারা গেলে আমাকে ফিল্মমেকার হিসেবেই মনে রাখা হবে, মন্ত্রী হিসেবে না। ফলে মন্ত্রিত্ব আমার কাছে কোনো অর্জন না, পাবলিক সারভেন্টের দায়িত্ব মাত্র। আমি এটা ফাইনালি অ্যাকসেপ্ট করেছি নিজের ফিল্মের বাইরেও আমার দেশকে কিছু দেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছে- এটা বিশ্বাস করেছি বলে। আমার মনে হয়েছে, জীবনের এই পর্যায়ে এসে নিজের লাভ-ক্ষতি  না ভেবে এই ক্ষমতা দেশের কাজে লাগাই।</p> <p>লাস্টলি, আই অ্যাম লাভিং মাই জব। বাট আই অ্যাম হেইটিং দ্য ফ্যাক্ট দ্যাট আই হ্যাড টু রাইট দিস!</p> <p>অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে গত রবিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ তিনজন। এরপর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।</p>