<p>শত উদ্যোগেও থামছে না মানবপাচার। মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে, উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে সহজ-সরল বেকার তরুণদের লক্ষ্য করে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা। সহায়-সম্বল বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা দালালদের দিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে একটি জনগোষ্ঠী। না ইউরোপ, না স্বপ্নের দেশ আমেরিকা! অবশেষে রাস্তার ভিখারিতে পরিণত হচ্ছেন দালালচক্রের ফাঁদে পা দেওয়া হতভাগ্য এই তরুণরা।</p> <p>অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি, ন্যায্য বিচার এবং বাংলাদেশে ইউরোপের দেশগুলোর দূতাবাস চালু হলেই কমতে পারে মানবপাচার।</p> <p>কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা যায়, একদল শিক্ষার্থী ভালো আয়ের আশায় দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের আলবেনিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আলবেনিয়া নেওয়ার কথা বলে তাঁদের নেপালে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করা হয়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="তিন দেশে বাড়ি আছে দুর্নীতির ‘মহারাজ’ নিক্সনের" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/19/1731987021-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>তিন দেশে বাড়ি আছে দুর্নীতির ‘মহারাজ’ নিক্সনের</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/19/1448263" target="_blank"> </a></div> </div> <p>আরেক দল যুবক দালালের মাধ্যমে তিউনিশিয়া থেকে গেম (ভূমধ্যসাগর পাড়ি) দিয়ে রুমানিয়ায় ঢুকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদেরও তিউনিশিয়া না নিয়ে দালালচক্র আলজেরিয়ায় নিয়ে ছেড়ে দেয়। এতে নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হন তারা।</p> <p><strong>আলবেনিয়ার বদলে নেপাল</strong></p> <p>হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা অনিক হাসান। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ আলবেনিয়া যাওয়ার স্বপ্নে বন্ধু রাহিম ও সাকিবকে নিয়ে চলতি বছরের ২৭ মে নেপালের উদ্দেশে রওনা হন।</p> <p>কিন্তু তাঁদের আলবেনিয়া যাওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হয় না। উল্টো নানা ধরনের মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে জনপ্রতি আট লাখ ৭৩ হাজার টাকা খরচ করে চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর দেশে ফেরত আসেন অনিক, রাহিম ও সাকিব।</p> <p>এই দুর্দশার গল্প কালের কণ্ঠের কাছে তুলে ধরেন অনিক হাসান। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমরা তিনজন আলবেনিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সে সময় আমরা প্রত্যেকে দালালকে ৬০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট জমা দিই।</p> <p>দেড় মাস পর ওয়ার্ক পারমিট দেখিয়ে দালাল আমাদের কাছ থেকে আরো এক লাখ টাকা করে নেয়। এর দুই মাস পর আলবেনিয়ার ভিসা দেখিয়ে আরো দুই লাখ করে টাকা নেয়। এরপর বিএমইটি ছাড়পত্রের কথা বলে পাঁচ মাস ঝুলিয়ে রাখে। পাঁচ মাস পর ছাড়পত্র হয়েছে জানিয়ে আমাদের নেপাল যাওয়ার কথা বলে। আর আমরা প্রত্যেকেই যেন সঙ্গে করে এক হাজার ডলার নিয়ে যাই।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বিদেশে বন্ধু নেই, বাংলাদেশকে ‘না’ বলতে শিখতে হবে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/19/1731985010-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বিদেশে বন্ধু নেই, বাংলাদেশকে ‘না’ বলতে শিখতে হবে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/19/1448261" target="_blank"> </a></div> </div> <p>অনিক আরো বলেন, ‘নেপাল পৌঁছার দুই দিন পর বলে যে আমাদের ফ্লাইট হয়ে যাবে, আমরা যেন আরো দুই লাখ টাকা বাড়ি থেকে নিয়ে আসি। এই টাকা দেওয়ার পর আমাদের একটা রুমের মধ্যে আটকে রাখে। সেখানে আমাদের মানসিক অত্যাচার করে। আমাদের হুমকি দিত, আমরা যেন বেশি বাড়াবাড়ি না করি। নেপালে আমাদের জীবনটা একেবারে শেষ করে ফেলেছে। শেষ দুই মাস আমরা ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করতে পারিনি।’</p> <p>নেপালে তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে অনিক বলেন, ‘আমার মামা আমাদের উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশে ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টারে যোগাযোগ করেন। ব্র্যাক মাইগ্রেশন সেন্টার থেকে নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশ হাইকমিশনে ই-মেইল করা হয়। এরপর বাংলাদেশ হাইকমিশন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা জানতে চায় আমরা কোথায় আছি। এরপর নেপালের পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৪ জনের" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/19/1731984788-18e2999891374a475d0687ca9f989d83.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>টাঙ্গাইলে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৪ জনের</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/19/1448260" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>তিউনিশিয়ার বদলে আলজেরিয়া</strong></p> <p>গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ রায়। বৈধ পথে রুমানিয়া যাওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে অবৈধ পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে নন্দন, কালু ও আরিফ নামের আরো তিন বন্ধুকে নিয়েছিলেন। রুমানিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তাঁরা প্রথমে দুবাই যান। পরে দুবাই থেকে ইথিওপিয়ায় ট্রানজিট নিয়ে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে পৌঁছেন। বেনিনে কিছুদিন অবস্থান করে সড়কপথে তাঁরা নাইজেরিয়া যান। সেখানে তাঁদের সাত মাসের মতো রাখা হয়। নাইজেরিয়া থেকে তিউনিশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় আলজেরিয়া। সেখানেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তার পরই বিশ্বজিেদর ভোগান্তির যাত্রা শুরু হয়। তবে আলজেরিয়া পৌঁছানোর আগেও নানা ধরনের মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বিশ্বজিৎ, নন্দন, কালু ও আরিফ।</p> <p>কালের কণ্ঠকে বিশ্বজিৎ রায় বলেন, “নাইজেরিয়া বসেই আমাদের মূল সমস্যা তৈরি হয়। ওইখানে তারা বলে, ‘আমরা গেম দিয়ে দিব। তোমাদের তিউনিশিয়া নিব। তোমরা টাকা দাও।’ এরপর সেখান থেকে তিউনিশিয়ার কথা বলে আলজেরিয়া রেখে যায়। এরপর আর তাদের কোনো খোঁজখবর পাইনি।”</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক প্রক্টর গ্রেপ্তার" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/19/1731971715-07331c76a8fa2610ac2e4bf70a57d31f.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেরোবির সাবেক প্রক্টর গ্রেপ্তার</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/19/1448254" target="_blank"> </a></div> </div> <p>বিশ্বজিৎ আরো বলেন, ‘আমার খরচ হয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আমি জায়গাজমি সব বিক্রি করে এই টাকা জোগাড় করেছি। দালালের সঙ্গে ১৮ লাখ টাকার চুক্তি ছিল না; চুক্তি ছিলো ১৩ লাখ টাকার। বাকি টাকা খাবার না দিয়ে, নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের থেকে নেওয়া হয়। তখন বাড়িতে সমস্যার কথা জানালে বাড়ি থেকে ঋণ করে টাকা দেয়।’</p> <p>বাংলাদেশে ইউরোপের দেশগুলোর দূতাবাস চালু হলে এই মানবপাচার কমবে বলে মনে করেন ইউরোপের ভিসাপ্রত্যাশী ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মেহেদী হাসান আশিক। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেও ভিসা নকল না আসল তা চেক করতে পারি না। আমাদের দেশে তো অহরহ এই রকম নকল ভিসা দেখা যায়। আমাদের দেশে যখন ইউরোপের দূতাবাস কিংবা কনসুলেট সেন্টার থাকবে, তখন ভিসাপ্রত্যাশী খুব সহজেই তাঁর ভিসা চেক করতে পারবেন। এর ফলে মানবপাচার অনেকটাই কমে যাবে।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় অপরিবর্তিত থাকবে তাপমাত্রা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/19/1731983415-032b2cc936860b03048302d991c3498f.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় অপরিবর্তিত থাকবে তাপমাত্রা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/19/1448258" target="_blank"> </a></div> </div> <p>ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার আল-আমিন নয়ন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মানবপাচার বন্ধ করতে হলে প্রথমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এরপর প্রয়োজন ন্যায়বিচার। আমাদের দেশে মানবপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঠিক বিচার হয় না। ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পেলেই মানবপাচার কমতে শুরু করবে।’</p>