<p style="text-align:justify">ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে এক বিশেষ মুহূর্তে তৈরি হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন বাংলাদেশ গড়তে তরুণরা অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন। সংগত কারণে ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও সংস্কার বাস্তবায়ন ইস্যুটি গুরুত্ব পেয়েছে। বিশৃঙ্খলা অগ্রগতির বড় শত্রু।</p> <p style="text-align:justify">নতুন সরকারকে নিঃসন্দেহে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তরুণদের মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা। বাংলাদেশে বর্তমানে মাদকাসক্তদের প্রকৃত পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারি তথ্য মতে, দেশে এক কোটিরও বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং মাদকসেবীদের ৮০ শতাংশই যুবক। তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ আবার বেকার। ৬০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।</p> <p style="text-align:justify">বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশই শুধু নেশার খরচ জোগান দিতে অপরাধ-অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। জরিপের যে তথ্যটি সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ তা হচ্ছে, দেশে মাদকাসক্তদের ৮০ শতাংশই কিশোর তরুণ ও যুবক বয়সী। আর এই আসক্তির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে ছাত্র ও শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে।</p> <p style="text-align:justify">নতুন সমাজ গঠনে আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্মের যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও আবেগ আমরা লক্ষ করছি, তাতে মনে হয় এই মাদকের অভিশাপ থেকেও তারাই জাতিকে মুক্ত করতে পারবে। নতুন সমাজ গঠনে মাদকের আগ্রাসন অবশ্যই রোধ করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে বর্তমান তরুণরাই বড় মাপের ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।</p> <p style="text-align:justify">সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে, দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও তরুণদের সঠিকভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে মাদকাসক্তি একটি বিরাট অন্তরায়। সুতরাং রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে নতুনভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও ক্ষতিকর নেশা প্রতিরোধে বিশেষ নজর দিতে হবে। এ ধরনের দ্রব্যের অবৈধ পাচার ও সহজলভ্যতা কমাতে হবে এবং মাদকাসক্তদের উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করে সমাজে পুনর্বহাল করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">অন্যান্য রোগের মতোই মাদকাসক্তি একটি রোগ, যাকে বলা হয় ‘ক্রনিক রিল্যান্সিং ব্রেন ডিজিজ।’ সঠিক নিয়মে এবং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে এভিডেন্স বেজড ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা সম্ভব এবং চিকিৎসা-পরবর্তী নিয়মিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব।</p> <p style="text-align:justify">লেখক : ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানস (মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা)</p>