<p style="text-align:justify">মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা মায়েদের সন্তানরা বলেছেন, ‘মায়েদের অনুপ্রেরণায় শুধু ছেলেরা নয়, অনেক মেয়েও একাত্তরে যুদ্ধে গিয়েছিলেন। তারা স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। অথচ সেই অবদান যথাযথভাবে তুলে ধরা হয়নি।’</p> <p style="text-align:justify">আজ শনিবার ডেইলি স্টার মিলনায়তনে ‘৭১-এ মায়েরা : মুক্তিযুদ্ধে মায়েদের অবদান’ শীর্ষক আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন তারা।</p> <p style="text-align:justify">মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুসলেহা ইসলামের মেয়ে শাহীন আনামের সঞ্চালনায় সভায় হাবিবুল আলম (বীরপ্রতীক) বলেন, ‘মায়েদের সহযোগিতা না পেলে আমরা ঢাকা শহরে যুদ্ধ করতে পারতাম না। কিন্তু তাদের অবদানের কথা যথাযথভাবে উঠে আসেনি। নারীরা ধর্ষণের শিকার, তারা বীরাঙ্গনা, এই কথাগুলো বেশি বলা হয়। অথচ যুদ্ধে তাদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">কবি সুফিয়া কামালের মেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমার মা সুফিয়া কামাল শুধু মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করেননি। যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই তিনি মুক্তির আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। আমাদের বাসায় সেই সকল আলোচনা, মানুষের আসা-যাওয়ার মাধ্যমে বুঝতে পারি আমরা একটি মুক্তিযুদ্ধের দিকে যাচ্ছি। আমার মা যখন আমকে আর আমার বোনকে যুদ্ধে পাঠান তখন আমার বয়স ২১ বছর, আমার বোনের বয়স ১৯ বছর। আন্দোলনে তিনি নিজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এতে অংশ নেওয়ার জন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে তা মহিলা পরিষদ হয়। যুদ্ধের পরে এমনকি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে মায়ের ভূমিকা ছিল।’</p> <p style="text-align:justify">নারী নেত্রী শিরীন হক বলেন, ‘২৫ মার্চের পরে কয়েকটি পরিবারকে আমাদের বাসায় আশ্রয় দেন মা। এ সময় আমার মায়ের একই সাথে কঠিন ও নরম মন দেখেছি। আমরা যারা ঢাকায় ছিলাম, অনেকে মিলে বাস করেছি। অনেক অল্প খাবার ভাগ করে খেয়েছি। শাহীনের মা সবাইকে নিয়ে খেতে গিয়ে অনেক দিন মরিচের ভর্তা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের ভাত দিয়েছেন।’</p> <p style="text-align:justify">নৃত্যশিল্পী মিনু হক তার মা আমিনা বিল্লা প্রসঙ্গে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাসভবনসংলগ্ন গোটা ধানমন্ডি এলাকা পাকিস্তানি বাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতে ছিল, আর ওই সময় তিনি ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিরাপদে অবস্থান করেন। তখন তার মা আমিনা বিল্লাহ দেশকে শত্রুমুক্ত করতে স্বেচ্ছায় মেয়েকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আগরতলা পাঠান।’</p> <p style="text-align:justify">লেখক মুশতারি শফির মেয়ে রুমানা শফি বলেন, “আমার মা ছোটবেলায় তার বাবা-মাকে হারিয়েছেন। জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে বড় হয়েছেন। স্বামীর অনুপ্রেরণায় মেয়েদের জন্য একটি প্রেস চালু করেছিলেন। যেখানে সব মেয়েরাই কাজ করত। ‘বান্ধবী’ নামে একটি পত্রিকাও বের করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন। চট্টগ্রামে আমাদের বাড়ি ‘মুশতারি লজ’ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনস্থল। যুদ্ধে স্বামী ডা. শফি ও একমাত্র ভাইকে হারিয়েছেন তিনি। তারপরও হাল ছাড়েননি। স্বাধীন দেশে সন্তানদের মানুষ করার পাশাপাশি লেখালেখি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছেন।”</p> <p style="text-align:justify">সঞ্চালক শাহীন আনাম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের বাসায় মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ও অনেক জিনিসপত্র রাখতেন। মা আমাদের উৎসাহ দিতেন। আমরা ভাই-বোন মিলে সেগুলো পাহারা দিতাম। আমরা অনেক ঝুকিঁর মধ্যে কাজ করেছি, তারপর মনে হতো না আমরা কিছু করেছি না।’ মায়েদের অবদান নিয়ে কেউ কাজ করতে চাইলে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">সভায় আরো বক্তব্য দেন বনশ্রী মিত্র নিয়োগী, আস্মা নিসার, রেশমা আমিন, সাঈদা কামাল, তাজিন মুরশিদ, তাহমিনা খান, সুমনা শারমীন, ওয়াসিম রহমান তন্ময়, রিজওয়ান বিন ফারুক, রুমানা শফী, নীমান আহমেদ সোবহান, লুবনা মারিয়াম প্রমুখ।</p> <p style="text-align:justify">বক্তারা বলেন, মায়েরা নিজের সন্তানদের যুদ্ধে যেতে উদ্দীপনা জুগিয়েছেন, আগ্রহ দেখিয়েছেন, খাদ্য দিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং স্থানীয় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনীর খবর সংগ্রহ করে দিয়েছেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভারতে স্থাপিত হাসপাতালে নার্স হিসেবে, চিকিৎসক হিসেবেও কাজ করেছেন। সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে বাঙালি জাতিকে উদ্দীপ্ত করেছেন। কোনো কোনো রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। তারা আমাদের প্রেরণা হিসেবে বেঁচে থাকবেন।</p>