<p style="text-align:justify">জুলাই ও আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পাঁচ সাংবাদিককে সম্মাননা জানিয়েছে দৈনিক কালের কণ্ঠ। শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে দুই লাখ টাকা করে চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পাঁচ পরিবারের জন্য এক কোটি টাকার স্থায়ী সঞ্চয় করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">কালের কণ্ঠের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের হাতে সম্মাননা স্মারক ও চেক তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। </p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘কালের কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সবার প্রতি আমার শুভেচ্ছা। আজকে আনন্দের ভেতরে আমাদের পাঁচজন সাংবাদিক ..., সাংবাদিকদের পেছনে সব সময় আমি দাঁড়াই। সাগর-রুনি যখন মারা গেলেন, তখন তাঁদের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট (স্থায়ী সঞ্চয়) করে দিয়েছিলাম। যে পাঁচজন সাংবাদিক মারা গেছেন, পাঁচজনের নামে আমি এক কোটি টাকা দিয়ে দেব। এটা থেকে যে প্রফিট হবে, এটা দিয়ে তাদের সন্তানদের লালনপালন হবে। আমার সঙ্গে যারা আছেন, তারা সহযোগিতার হাত বাড়ান।’</p> <p style="text-align:justify">বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটি আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আজ মিডিয়াতে কোনো বাধা নেই। যার যা মন চায় তাই লিখতে পারে। ড. ইউনূসও বলেছেন, আপনারা যা পারেন সমালোচনা করেন। আমি বলব মিথ্যা না, সত্য যত অপ্রিয় হোক, সেটা আপনারা বলেন-লিখেন। এতে সমগ্র দেশ ও সমগ্র জাতি উন্নত হবে।’</p> <p style="text-align:justify">আহমেদ আকবর সোবহান আরো বলেন, ‘সংবাদিকের উত্তরোত্তর মঙ্গল হোক এটা মনে প্রাণে কামনা করি। তারা অনেক চরাই উৎরাই পার হয়ে, অনেক জুলুম অত্যাচার..., এই যে পাঁচ জন মারা গেছেন, আরো হাজার হাজার লোক আহত হয়েছেন, তবু আমরা স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছি। এ দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে।’ </p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট লেখক ও যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান বলেন, ‘যে ৫ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন এবং তাদের যারা আত্মীয়-স্বজন এসেছেন তাদের প্রতি জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা। তাদের এই আত্মত্যাগের ফলে আজ আমরা সামনে থেকে কথা বলতে পারছি। আমরা যারা এখানে এসেছি সবাই ভিন্নমতের হতে পারি, কিন্তু সবাই আমরা এক মঞ্চে মিলিত হতে পেরেছি। এটাই তার প্রমাণ।’</p> <p style="text-align:justify">জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণমাধ্যমকর্মীদের বড় ভূমিকা ছিল। আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ সাংবাদিক শহীদ হন। শোকাতুর এসব পরিবার ধুঁকছে নানা সংকটে। প্রিয়জন হারানো এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে কালের কণ্ঠ। ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভক্ষণে এই পরিবারগুলোকে বিনর্ম শ্রদ্ধা জানিয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন পত্রিকাটি।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার এলাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী। ১৯ জুলাই ধানমণ্ডির সেন্ট্রাল রোডে সংঘর্ষ চলাকালে শহীদ হন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাবেক ভিডিও জার্নালিস্ট তাহির জামান প্রিয়। উত্তরার আজমপুরে ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলতে গিয়ে শহীদ হন দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার গাজীপুরের গাছা থানা প্রতিনিধি শাকিল হোসেন। ১৯ জুলাই সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র কোর্ট পয়েন্টে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার সিলেট ব্যুরো প্রধান আবু তাহের তুরাব। ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক খবরপত্রের সাংবাদিক প্রদীপ ভৌমিক (৫৫) প্রাণ হারান।</p> <p style="text-align:justify">কথা বলতে গিয়ে শহীদ সাংবাদিক তাহিরের মা সামসিয়ানা জাহান বলেন, ‘সন্তান হারানোর কষ্ট আমি মানতে পারি না। আজকে তো আমার সন্তানের এখানে থাকার কথা ছিল। আমার ছেলে অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখেছিল। আমার ছেলেকে সাইন্সল্যাব মোড়ে গুলি করা হয়েছিল। আমার ছেলে অনেক পড়াশোনা করতো। ভাল ছবি তুলতো। ওর একটা বাচ্চা আছে।’ </p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘একসময় আমি পত্রিকা পড়া ছেড়েই দিয়েছিলাম, টিভির খবরও দেখতাম না। কারণ তখন একজনের একনায়কতন্ত্র চলতো। অনেক সাংবাদিক হয়রানি, গুমের শিকার হয়েছেন। আজ আমি স্বৈরাচার, খুনি, আওয়ামী লীগ ও তাদের নেত্রীর বিচার চাই। যারা ভারতীয় মদতপুষ্ট সাংবাদিকতা করেছেন তাদের বিচার চাই সবার আগে। যারা হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে তাদেরও বিচার চাই।’</p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে শহীদ সাংবাদিক হাসান মেহেদীর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি বলেন, ‘আমরা সুখেই দিন কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী আজ নেই। তাঁকে খুব কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে। আমার দুইটা মেয়ে। বড় মেয়েটা বাবা পাগল ছিল। যেখানেই যেত বাবার সাথে যেত। এখন সবসময় বলে বাবা আসে না কেন? আমার মেয়ের প্রশ্নের আমি উত্তর দিতে পারি না। ওর বাবার অফিসের সহকর্মীরা এলেও প্রশ্ন করে, বাবা আসবে কবে?’</p> <p style="text-align:justify">কান্নারত কণ্ঠে পপি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘তারা কী গুলি করার আগে একটাবার ভাবল না, এই সন্তানদের আমি কিভাবে মানুষ করবো? তাদের কি সন্তান নেই ঘরে? আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন বাচ্চা দুটোকে মানুষ করতে পারি।’</p> <p style="text-align:justify">শহীদ সাংবাদিক শাকিল হোসেনের বাবা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘নিহত সাংবাদিকদের জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তাদের অবদানে আজ আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। আমার আজ এখানে উপস্থিত হবার কথা ছিল না। হয়েছি কারণ আমার একমাত্র ছেলে শাকিল চলে গেছে। এই সন্তানকে হারিয়ে আমি আজ নিঃস্ব। আল্লাহপাক তাকে কবুল করে নিয়েছেন। আপনারা যে কাজে নিয়োজিত আছেন, আপনাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ করব। শাকিলকে যেভাবে আপনারা স্মরণ করলেন, সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না।’</p> <p style="text-align:justify">ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘তখন যেভাবে ছাত্র হত্যা হয়েছে সেই হত্যাকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় গিয়েছিলেন বীর সাংবাদিকরা। যারা রক্ত দিয়ে আজ ইতিহাসের অংশ হয়ে আছেন।’ </p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, টি স্পোর্টসের সিইও ইশতিয়াক সাদেক,বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহের, ডেইলি সানের সস্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক লুৎফর রহমান হিমেল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক হায়দার আলী, নিউজ টুয়েন্টি ফোরের নির্বাহী সম্পাদক ফরহাদুল ইসলাম ফরিদ, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ইয়াসিন পাভেল ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রুহুল আমিন রাসেল উপস্থিত ছিলেন।<br />  </p>