গণমাধ্যম কমিশনের প্রতিবেদন : মিশ্র প্রতিক্রিয়া সাংবাদিকদের

শেয়ার
গণমাধ্যম কমিশনের প্রতিবেদন : মিশ্র প্রতিক্রিয়া সাংবাদিকদের
সংগৃহীত ছবি

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, কমিশনের প্রতিবেদন কিছু বাস্তব ও কিছু অবাস্তব; আবার অনেকটা উদ্ভট প্রস্তাবও রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। আবার কেউ বলছেন, এটি যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য।

এর ফলে পেশায় স্বচ্ছতা বাড়বে। সাংবাদিকদের পেশাগত মানোনন্নয়ন হবে। এই রিপোর্ট বাস্তবায়ন হলে সামগ্রিকভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এজন্য সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে এমন সব মতামত তুলে ধরেন কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা।

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে সিনিয়র সাংবাদিক কামাল আহমেদকে প্রধান করে গত ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। শনিবার কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়।

কমিশনের উল্লেখযোগ্য সুপারিশের মধ্যে বলা হয়, দেশের গণমাধ্যমের প্রধান সমস্যা হলো সুস্থ প্রতিযোগিতার অভাব। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ খাত নিয়ন্ত্রণ করছে কালো টাকার মালিকরা। পত্রিকার প্রচার সংখ্যাসহ সবকিছুতেই অস্বচ্ছতা আছে। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, একই কোম্পানি বা মালিকের অধীনে একাধিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান থাকতে পারবে না। এক্ষেত্রে ‘ওয়ান হাউস, ওয়ান মিডিয়া’ হতে হবে।

বিসিএস ক্যাডারদের এন্ট্রি ৯ম গ্রেডের যে বেতন, তার সঙ্গে মিল রেখে সাংবাদিকদের বেতন শুরু হবে। সাংবাদিকদের সহায়তায় সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছেন তারা। আর সাংবাদিকতা করতে হলে ন্যূনতম স্নাতক পাশের যোগ্যতা থাকতে হবে। এছাড়া কমিশনের মতে, গণমাধ্যমের মালিকানা একক হাতে কেন্দ্রীভূত থাকলে সেটাকে ব্যক্তি, পারিবারিক ও নিজস্ব গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে গণমাধ্যমকে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

কমিশনের প্রতিবেদনের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, সেখানে কিছু বাস্তব ও কিছু অবাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে উদ্ভট সুপারিশও স্থান পেয়েছে। নতুনত্ব এখানে অনুপস্থিত। তিনি বলেন, কে সাংবাদিক হতে পারবে, কে পারবে না তা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। সম্পাদক হওয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম আগেই ছিল। প্রশ্ন হলো, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এই সিদ্ধান্ত কি কার্যকর করা যাবে? অনেকেই হয়তো বলবেন, একজন আরজ আলী মাতুব্বরের জীবন কাহিনি কি এই ইতিহাস থেকে মুছে যাবে? একটি সার্টিফিকেট কি এক ‘অরাজক’ এবং ‘বিশৃঙ্খল’ অবস্থা থেকে সংবাদমাধ্যমকে মুক্ত করতে পারবে?

মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বেহাল। কেউ বিনিয়োগ করতে আসছে না। এ অবস্থায় যখন মিডিয়া কমিশন বিসিএস ক্যাডারের মতো সাংবাদিকদের বেতন নির্ধারণ করতে চায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে-কমিশন সদস্যরা কি অন্য গ্রহের মানুষ! নাকি বড় হাউজের পাশে থেকে বাস্তবতাকে অস্বীকার করছেন! ব্যবসাটা যেখানে সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন, সেখানে বাস্তবকে অস্বীকার করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ হবে-ছোট ছোট সংবাদমাধ্যমকে গলা চেপে হত্যা করা। তার মতে, সংবাদমাধ্যমে বেতন কাঠামো কেন সরকার নির্ধারণ করবে? শুধু সরকারি বিজ্ঞাপনের সুযোগ নিয়েই কি এই সিদ্ধান্ত চাপানো হচ্ছে? কেবল সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়েই কি একটা সংবাদপত্র টিকে থাকতে পারে? রাজনৈতিক সংবাদপত্র হয়তো পারে। এর একটা ম্যাজিক আছে বটে। এছাড়া কোন হাউজ কয়টা পত্রিকা বা টেলিভিশন চালু করতে পারবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বৈধ যুক্তি নেই। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী ছাপা পত্রিকা মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে। বহু বড় বড় পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সংকুচিত হচ্ছে তাদের ব্যবসা। ডিজিটাল যুগে সংবাদমাধ্যম আরেক পরীক্ষার মুখে।

তিনি আরও বলেন, টেলিভিশনের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে তো কোনো বেতন কাঠামোই নেই। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে বিগত সরকার অনেকগুলো স্যাটেলাইট টেলিভিশনের লাইসেন্স দিয়েছে। অপরদিকে আজকের সংবাদমাধ্যমের বেহাল এবং বিতর্কিত অবস্থানের পেছনে টেলিভিশন সাংবাদিকদের ‘অবদানই’ খুব বেশি। গুটিকয়েক মানুষের জন্য বিপুলসংখ্যক টেলিভিশন সাংবাদিক আজ নিজেদের পরিচয় ভুলতে বসেছেন। অতএব নির্বাচন যেহেতু সামনে, সেখানে এ ধরনের সুপারিশ কতটা বাস্তবায়নযোগ্য। সেটা ভাবতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা হচ্ছে-সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে সব পাল্টে যায়। এবারও যে হবে না, এর নিশ্চয়তা কোথায়।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, মিডিয়া কমিশনের কিছু কিছু প্রস্তাব ভালো। তবে নতুনত্ব কিছু নেই। একেবারেই গতানুগতিক। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছে কোনো কোনো মিডিয়া হাউজ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন বাস্তবতাবিবর্জিত অনেক সুপারিশ করেছে। যেমন বিসিএস ক্যাডারের মতো বেতন নির্ধারণ। এটা কি সব হাউজের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে?

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। টিসিবির ট্রাকের পেছনে মানুষের লাইন দেখলে সেটি সহজে অনুমান করা যায়। কেউ নতুন বিনিয়োগ করতে আসছে না। প্রতিনিয়ত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লাখ লাখ শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার। বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমে চলছে অস্থিরতা। অনেকে নিয়মিত বেতনও দিতে পারছে না। সরকার মিডিয়াকে তাদের বিজ্ঞাপনের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এ অবস্থায় যখন কমিশন বিসিএস ক্যাডারের মতো সাংবাদিকদের বেতন নির্ধারণ করতে চাইলে অধিকাংশ মিডিয়া মারা পড়বে। তিনি বলেন, আরেকটা বিষয় আমাকে বিস্মিত করেছে, কোন হাউজ কয়টা পত্রিকা বা টেলিভিশন চালু করতে পারবে সেটিও তারা ঠিক করে দিয়েছে। একটা মিডিয়া হাউজ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হাউজকে কবজা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যাম্পেইন করে আসছিল। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বৈধ যুক্তি আছে কী? যার বৈধ টাকা আছে তিনি কেন একাধিক মিডিয়া করতে পারবে না। এক্ষেত্রে দেখতে হবে, এসব মিডিয়া নীতিমালা লঙ্ঘন করছে কিনা? সাংবাদিক সংগঠনের সিনিয়র এ নেতা আরও বলেন, দুনিয়াজুড়ে অনেক মিডিয়া গ্রুপ রয়েছে। আমাদের একেবারেই কাছের দেশ ভারতে আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের অনেক পত্রিকা রয়েছে। ভারত সরকার কি এ ব্যাপারে কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে? গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ‘ওয়ান হাউজ, ওয়ান মিডিয়া’ করার প্রস্তাব করেছে। প্রশ্ন হলো-এটি যে উদ্দেশ্যমূলক নয়, তা কীভাবে বুঝব। ইতোমধ্যে পত্রিকায় খবর বের হয়েছে এই কমিশনের সুপারিশমালায় একটি বড় বিজনেস হাউজের প্রচ্ছন্ন প্রভাব রয়েছে। আমারও মনে হচ্ছে, তেমনটি ঘটেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, কমিশনের সবগুলো প্রস্তাব ও সুপারিশ পড়েছি। তবে সবগুলোই অত্যন্ত যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত মনে হয়েছে। প্রথমত, সাংবাদিকদের বেতন। এটি যৌক্তিক প্রস্তাব। কারণ ভালো বেতন না পেলে মেধাবী লোকজন এ পেশায় আসবে না। অপরদিকে সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ন্যূনতম গ্রাজুয়েশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটিও যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। কারণ গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। মানুষ এখান থেকে অনেক কিছু শিখে। সেক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিজেদের শিক্ষাগতযোগ্যতা না থাকলে, তা গণমাধ্যমের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করে গণমাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তার মতে, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে গণমাধ্যমের পেশাগত মান বাড়বে। এটি শুধু গণমাধ্যম শিল্প নয়, পুরো দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্যও জরুরি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আশরাফুল আলম খোকনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বাসস
বাসস
শেয়ার
আশরাফুল আলম খোকনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আশরাফুল আলম খোকন। ফাইল ছবি

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব মুহাম্মদ আশরাফুল আলম খোকন ও তার স্ত্রী রিজওয়ানা নুরের নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, মুহাম্মদ আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৭ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। আর তার তিনটি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭২ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ এনেছে দুদক।

মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে খোকন আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে বাড়ি ক্রয় করেছেন বলে জানায় দুদক। আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭ (১), ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

অন্যদিকে, দ্বিতীয় মামলায় খোকনের স্ত্রীর বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৮ লাখ ৮১ হাজার ৫৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার তিনটি ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৩৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব হিসেবে ২০১৩ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আশরাফুল আলম খোকন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আশরাফুল আলম খোকন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

মন্তব্য

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমছে না, জনপ্রতি বরাদ্দ ১২ ডলার

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমছে না, জনপ্রতি বরাদ্দ ১২ ডলার
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপি।

এবারে কক্সবাজারের উপকূলে বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দাদের জনপ্রতি মাসিক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১২ ডলার করে, যা আগে ছিল সাড়ে ১২ ডলার।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডব্লিউএফপি এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। সিদ্ধান্তটি কার্যকর হবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে।

ভাসানচরে যেসব রোহিঙ্গা বসবাস করছেন তারা পাবেন জনপ্রতি ১৩ ডলার করে। কক্সবাজারে যারা বসবাস করছেন তাদের চেয়ে এক ডলার বেশি।

গত ৫ মার্চ বাংলাদেশের শরণার্থী কমিশনের কাছে খাদ্য সহায়তা কমানো সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছিল ডব্লিউএফপি।

ডব্লিউএফপি তহবিল সংকটের কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য এপ্রিল থেকে মাসিক খাবারের বরাদ্দ সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে জনপ্রতি ৬ ডলার করার কথা বলা হয় ওই চিঠিতে।

এরপর ১৪ মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন। এ সময় তার কাছে তুলে ধরা হয় ৬ ডলারে রোহিঙ্গারা আসলে কী পরিমাণ খাবার পাবেন। এর পরই এমন সিদ্ধান্ত জানাল জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপি।

মন্তব্য

মসজিদে মসজিদে শবেকদরের নামাজ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
মসজিদে মসজিদে শবেকদরের নামাজ
সংগৃহীত ছবি

বিশেষ ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ রাত শবেকদর। এই রাত উপলক্ষে রাজধানীর মসজিদে মসজিদে খতমে তারাবির নামাজ শেষে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, এশার আজানের পর থেকেই অন্যান্য দিনের তুলনায় মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় বেশি। অনেক এলাকায় মসজিদে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে উপচে পড়া ভিড় ছিল মুসল্লিদের। অনেকে দূর দূরান্ত থেকে নামাজ পড়তে এসেছেন এখানে। এমনই একজন নারিন্দার বাসিন্দা আউয়াল হোসেন বলেন, প্রতি কদরেই বায়তুল মোকাররমে এসে পড়েন তিনি। একা না, এলাকার পরিচিত প্রতিবেশী এবং আশপাশের আত্মীয় স্বজন সবাই মাগরিবের নামাজ শেষ করেই কদরের রাতের নামাজের জন্য এখানে আসেন।

আরেক মুসল্লি শরিফ আহমেদ বলেন, ‘এই রাত মুসলমানদের জন্য বিশেষ রাত। রোজার মাস থেকে শুরু করে পুরো জীবনের সব ভুল ত্রুটির জন্য মাফ চাইতে এই রাতকেই বেছে নেন মুসলমানরা।’

শবেকদর শব্দটি মূলত বাংলা ভাষায় এসেছে ফারসি থেকে। আরবি শব্দ লাইলাতুল কদরের নানা মহিমা কোরআন এবং হাদিসে বর্ণিত আছে।

শব বলতে মূলত রাত আর কদর বলতে ভাবমর্যাদাপূর্ণ বা সম্মানিত বোঝানো হয়। সে হিসাবে শবেকদর মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে ভাবমর্যাদাপূর্ণ রাত হিসেবে পালিত হয়।

যদিও কোরআন এবং হাদিসে শবে কদরকে নির্দিষ্ট কোনো তারিখে বেধে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, রমজানের শেষ দশ দিন যেকোনো বেজোড় রাতই হতে পারে শবে কদর। তবে উপমহাদেশের অনেক আলেমের মতে, ২৬ রমজান দিবাগত রাতকে কদরের রাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে আলাদা মর্যাদায় পালন করা হয়।

এ ছাড়া বাংলাদেশে যেসব মসজিদে খতমে তারাবির পড়ানো হয়, সেখানে কদরের রাতকে উদ্দেশ্য করেই সারা মাসে নামাজে পড়া কিরাআতের মাধ্যমে কোরআন তেলাওয়াতের খতম দেওয়া হয় কদরের রাতে। এতে করে একদিকে কোরআন খতম অন্যদিকে কদরের রাত-দুই মর্যাদাই মুসলমানরা লাভ করতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে উত্তর বাড্ডা জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা আজহারউদ্দীন বলেন, ‘শহরের মানুষের আলাদা করে কোরআন পড়া কিংবা শোনার সময় হয় না। এজন্য অনেকেই কোরআন খতমের বড় একটি মাধ্যম হিসেবে খতমে তারাবিকে বেছে নেন। কদরের রাতে কোরআন খতমের পাশাপাশি যারা কোরআন পড়িয়েছেন সেইসব হাফেজদেরকেও আলাদা করে হাদিয়া দেওয়া হয়। মূলত গোটা রমজানের পূর্ণতা আসে এই কদরের রাতকে কেন্দ্র করেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘এশা এবং তারাবির পর কদরের রাতের জন্য আলাদা করে কোনো নামাজ না থাকলেও মুসল্লিরা সারারাত নফল নামাজ এবং জিকির-আজকারের মাধ্যমে ইবাদত করেন। কেননা রমজানে নফল ইবাদতের সওয়াব ফরজের সমান। এ ছাড়া কোরআন তেলাওয়াত এবং দান-খয়রাতের মাধ্যমে কাটে এই রাত। শেষ রাতে মসজিদে মসজিদে আয়োজন করা হয় বিশেষ মোনাজাতের। আল্লাহর কাছে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি এবং পাপের ক্ষমাপ্রার্থনার পাশাপাশি দেশ-জাতি এবং সামস্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা হয়।’

কদরের রাতকে কেন্দ্র করে মসজিদের সামনে অসহায় এবং ভিক্ষুকদের লাইন থাকে চোখে পড়ার মতো। অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন কয়েকগুণ বেশি আয় হয় বলে জানান তারা। দক্ষিণ বাড্ডা কুয়েত-বাংলাদেশ জামে মসজিদের সামনে ভিক্ষারত এক নারী সালমা বলেন, ‘এদিন কয়েক হাজার টাকা আয় হয়। ঈদে পরিবারকে নিয়ে খাওয়া দাওয়া, বাচ্চাদের সামান্য শখ আহ্লাদ পূরণের টাকা আসে এই কদরের রাতেই।’

আরেক ভিক্ষুক মনির বলেন, সারারাত মসজিদের সামনে ভিক্ষা করেন তিনি। অনেক মুসল্লি এশার নামাজের পর মসজিদে যান এবং সেহরির আগে আগে বের হোন। এসময় তারা হাত খুলে দান খয়রাত করেন বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া কদরের রাতকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় সামগ্রী বিক্রিও অনেক বেড়ে যায় বলে জানান বিক্রেতারা। বিশেষ করে আতর, টুপি, তসবিহ, মেসওয়াক এবং সুরমার মতো সুন্নতি সামগ্রীতে ক্রেতাদের আলাদা আগ্রহ থাকে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের সামনে এসব পণ্য বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সারা বছর আতর-টুপি বিক্রি হলেও কদরের রাতে বিকাল থেকেই মেসওয়াক, সুরমা, তসবিহ বিক্রি বেড়ে যায়। অনেকে আবার নতুন জায়নামাজ কেনেন।’ মহামান্বিত এ রাতে তারা নতুন করে ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন শুরু করতে উদ্যোমী হন বলে জানান তিনি।

এদিকে কদরের রাতে মসজিদের পাশাপাশি বাসা-বাড়িতেও চলে ইবাদাত। নারীরা নামাজ এবং কোরআন তেলওয়াতের মধ্য দিয়ে পার করেন এ রাত।

রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার গৃহিণী জেসমিন আক্তার লিপি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকেই চলে কদরের রাতে ইবাদতের প্রস্তুতি। এশার আগে সব কাজ গুছিয়ে বাসার নারী এবং শিশুরা ইবাদতে শামিল হোন। রাতের খাবার শেষে অনেকেই সেহরি পর্যন্ত ধাপে ধাপে নফল নামাজ পড়েন এবং কোরআন তেলাওয়াত করেন।’

মুসলমানদের জীবনে কদরের রাত আসে ক্ষমার বার্তা নিয়ে। ‘আল্লাহুম্মা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফুআন্নি’ এই দোয়ার মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। সব মিলিয়ে এই রাত রমজানকে করে তোলে আরো মহামান্বিত। পাশাপাশি এই রাতের শিক্ষা থেকে একজন মুসমান নতুন করে ভালো মানুষ হবার যাত্রা শুরু করতে পারে বলে মনে করেন আলেম-ওলামারা।

মন্তব্য

আলোচিত-১০ (২৭ মার্চ)

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার

সর্বশেষ সংবাদ