<p style="text-align:justify">‘শুচিবাই’ শব্দটির সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। প্রবল শুচিবাইগ্রস্ততাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিস-অর্ডার বা সংক্ষেপে ওসিডি বলা হয়। তবে শুচিবাই বলতে বেশির ভাগ মানুষ যা বোঝে তা ওসিডির অনেক ধরনের একটিমাত্র।</p> <p style="text-align:justify"><strong>লক্ষণ</strong></p> <p style="text-align:justify">ওসিডিতে আক্রান্ত ব্যক্তি যেসব সমস্যায় ভোগে, সেগুলোকে মোটাদাগে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—অবসেশন ও কম্পালশন। অবসেশন বলতে বোঝায় একই চিন্তা, ছবি বা তাড়না বারবার মনে ফিরে আসা। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারে যে তার এই চিন্তা বা তাড়না অহেতুক, অতিরিক্ত। না চাইলেও চিন্তাটি তার মনে আসতে থাকে। নিজের মনের চিন্তা হলেও এর ওপর যেন তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।</p> <p style="text-align:justify">সে চিন্তা, ছবি বা তাড়নাটি মন থেকে সরাতে চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। চিন্তার কারণে বা চিন্তা সরাতে ব্যর্থতার কারণে তার মধ্যে অস্থিরতা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। এই চিন্তা সাধারণত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ময়লা, সন্দেহ, ধর্মীয়, যৌনতা প্রভৃতি বিষয়ক বেশি হয়। কারো কারো মনে নির্দিষ্টসংখ্যকবার গণনা বা নির্দিষ্ট শব্দবিষয়ক অবসেশনও হয়।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে কম্পালশন বলতে বোঝায় একই কাজ বা আচরণ বারবার করা। সাধারণত একই চিন্তার পুনরাবৃত্তির ফলে রোগী একই কাজ বারবার করতে থাকে। যেমন—কোনো ব্যক্তির মনে হতে থাকে তার হাতে ময়লা লেগে আছে। সে একবার ভালো করে হাত ধুয়ে নিল। কিন্তু মনে ওই চিন্তা বারবার আসতেই থাকল যে তার হাত ময়লা রয়েই গেছে বা পরিষ্কার হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">ফলে সে বারবার হাত ধুতেই থাকল। রোগী যদিও বুঝতে পারে, হাতে আসলে ময়লা নেই, এরপরও ওই চিন্তা বন্ধ করতে পারে না এবং চিন্তার কারণেই আবারও হাত ধুতে হয়। এমনও দেখা যায়, আক্রান্ত ব্যক্তি খাওয়ার আগে হাত ধুয়েই চলেছে ঘণ্টা ধরে, অন্যদিকে অন্য সবার খাওয়াদাওয়া কিন্তু শেষ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাজনিত অবসেশনের কারণে অনেকের প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সময়ও লেগে যায় গোসল করতে। ওসিডিতে আক্রান্ত কোনো কোনো রোগীর শুধু অবসেশন থাকে, আবার অনেক রোগীর অবসেশন ও কম্পালশন উভয়টিই থাকে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>চিকিৎসা</strong></p> <p style="text-align:justify">ওসিডি একটি দীর্ঘমেয়াদি কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। এ রোগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে। রোগের উপসর্গ ও তীব্রতা ভেদে ওষুধ ও সাইকোথেরাপি দুভাবেই চিকিৎসা করা হয়। অনেক রোগীর জন্য ওষুধ, আবার কারো জন্য কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি পদ্ধতিতে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধ ও কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি একত্রে প্রয়োগ করলে রোগীর উপকার বেশি হয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগী উপসর্গগুলো অন্যের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। তারা সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে পরামর্শ নিতে যায় না অথবা দ্বিধা বোধ করে। অথচ সময়মতো সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।</p> <p style="text-align:justify">পরামর্শ দিয়েছেন</p> <p style="text-align:justify">ডা. মুনতাসীর মারুফ</p> <p style="text-align:justify">সহযোগী অধ্যাপক</p> <p style="text-align:justify">কমিউনিটি ও সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট</p>