<p>১৮ নভেম্বর ২০২৪ থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম বিশ্ব হেপাটাইটিস টেস্টিং সপ্তাহ, যা হেপাটাইটিস শনাক্তকরণ ও পরীক্ষার হার বাড়ানোর একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স এবং স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমর্থনে এটি আয়োজন করা হচ্ছে, যা হেপাটাইটিস সচেতনতার এক নতুন অধ্যায়। বাংলাদেশে, ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ হেপাটাইটিস সচেতনতা বৃদ্ধি করা, লিভার ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ টেস্ট করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।</p> <p><strong>বিশ্ব হেপাটাইটিস টেস্টিং সপ্তাহের গুরুত্ব</strong><br /> হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ শনাক্ত না হওয়ায় এটি একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করছে, যা প্রতিবছর ক্যান্সার এবং অন্যান্য লিভার রোগে প্রায় দশ লক্ষের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ। বিশ্বব্যাপী, কেবলমাত্র ১৩% মানুষ যারা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি-তে ভুগছেন এবং ৩৬% মানুষ যারা দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সি-তে ভুগছেন, তাদের রোগ নির্ণয় হয়েছে। বিশ্বে হেপাটাইটিস আক্রান্ত প্রায় ১০ জনের ৯ জনই জানেন না, তাদের শরীরে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস রয়েছে। হেপাটাইটিস আক্রান্তের অজানা থাকা শুধু তার নিজের জন্যই নয় তার পারিবারের অনান্য সদস্যদের এই ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকতে হয়। হেপাটাইটসি টেস্টিং-ই লক্ষ লক্ষ অজানা আক্রান্তদের খুঁজে পাওয়ার একমাত্র উপায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে কেবল ২.৮% এবং আফ্রিকা অঞ্চলে মাত্র ৪.২% হেপাটাইটিস বি এবং ১৩% হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তিরা পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হয়েছে।</p> <p><strong>হেপাটাইটিস শনাক্তকরণে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন</strong><br /> বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল হেপাটাইটিস রিপোর্ট ২০২৪-এর তথ্য অনুসারে, ভাইরাল হেপাটাইটিসের কারণে মৃত্যু ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি এখন দ্বিতীয় সর্বাধিক মারাত্মক সংক্রামক রোগ এবং অধিকাংশ মানুষ তাদের রোগ সম্পর্কে জানতে পারেন তখনই যখন এটি দেরি করে নির্ণয় হয়। হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জন করতে হলে, পরীক্ষা কার্যক্রমকে দ্রুত বাড়ানো অপরিহার্য।</p> <p>ভাইরাল হেপাটাইটিস পরীক্ষার সুবিধা শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নয়, বরং জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, অর্থনীতি এবং সমাজের জন্যও উপকারী। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা ভাইরাসের সংক্রমণ, চিকিৎসার খরচ এবং সময়কাল কমাতে পারে, পাশাপাশি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ায়। প্রকৃতপক্ষে, হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ‘সি’-এর যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বেশিরভাগ লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।</p> <p><strong>হেপাটাইটিস টেস্টিং চ্যালেঞ্জ ও সমাধান</strong><br /> ১. পরীক্ষার অভাব: পরীক্ষা সহজলভ্য না হওয়া, পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাব এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ঘাটতির কারণে অনেক দেশের পরীক্ষার সক্ষমতা সীমিত।<br /> ২. পরীক্ষার ভয় ও স্টিগমা বা বৈষম্য: জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং সামাজিক স্টিগমা কারণে অনেকে বৈষম্যের শিকার এর ভয়ে, পরীক্ষা করাতে চান না।<br /> ৩. টার্গেটেড পরীক্ষার কৌশল: স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য উপযুক্ত এবং প্রয়োজন-ভিত্তিক পরীক্ষা কার্যক্রমকে প্রসারিত করা প্রয়োজন।</p> <p><strong> টেস্টিংয়ের উদ্যোগ সমূহ :</strong><br /> • স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও কমিউনিটি পর্যায়ে পরীক্ষা প্রদান।<br /> • এইচআইভি, যক্ষা এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের পাশাপাশি হেপাটাইটিসের পরীক্ষা করা।<br /> • অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের জন্য ত্রিমুখী নির্মূল (ট্রিপল এলিমিনেশন) কর্মসূচি (এইচআইভি, সিফিলিস এবং হেপাটাইটিস বি) গ্রহণ করা।<br /> • লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধে হেপাটাইটিস পরীক্ষাকে জাতীয় ক্যান্সার প্রতিরোধ কৌশলের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।</p> <p><strong>বিশ্ব হেপাটাইটিস পরীক্ষা সপ্তাহে আমাদের করণীয়:</strong><br /> ১. স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা পরীক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোগ নিতে পারেন।<br /> ২. কমিউনিটি-ভিত্তিক সচেতনতা ও পরীক্ষার আয়োজন।<br /> ৩. সরকার ও নীতি নির্ধারকদের উচিত হেপাটাইটিস পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ করা।</p> <p>আমাদের সবার উদ্যোগে হেপাটাইটিস নির্মূল সম্ভব। পরীক্ষা করার মধ্যেই রয়েছে সেই প্রথম পদক্ষেপ। হেপাটাইটিস, আর অপেক্ষা নয়।</p> <p>লেখক: মহাসচিব, ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ<br />  </p>