<p>এডমন্ড হ্যালি ছিলেন একজন প্রথিতযশা ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী। সূর্যের চারপাশে গ্রহগুলোর কক্ষপথের উপবৃত্তাকার আকৃতি নিয়ে হ্যালি কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন। এ ব্যাপারে জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার সর্বপ্রথম আলোকপাত করেন। কেপলার গ্রহগুলোর উপবৃত্তাকার গতিপথ বর্ণনা করলেও এর অন্তর্নিহিত কারণ ব্যাখ্যা করেননি। এডমন্ড হ্যালি এ ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য আইজ্যাক নিউটনের সাথে দেখা করলেন। নিউটন তাঁকে জানালেন, গ্রহগুলোর কক্ষপথের উপবৃত্তাকার বিষয়টি তিনি অনেক আগেই সমাধান করে ফেলেছেন। এটি তিনি তাঁর মাধ্যাকর্ষণের সূত্র প্রয়োগ করে অংক কষে প্রমাণ করেছেন। </p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/07/1343379"><span style="color:#2980b9;">আরও পড়ুন: কুকুর কিভাবে চোরের উপস্থিতি টের পায়?</span></a></p> <p>হ্যালি তখন নিউটনের কাছে তাঁর অংকের হিসেব-নিকেশ দেখতে চাইলেন। বিজ্ঞানী নিউটন ছিলেন কিছুটা অগোছালো প্রকৃতির মানুষ। গবেষণার সময় তিনি প্রায়ই নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতেন। কাগজপত্র যত্ন করে রাখতেন না। নিউটন তাই চট করে হ্যালিকে তাঁর গবেষণার কাগজপত্র দেখাতে পারলেন না। কিন্তু কয়েক মাস পর তিনি হ্যালির কাছে তাঁর গবেষণায় কাগজপত্র সব পাঠিয়েছিলেন। নিউটনের গবেষণার ফলাফল দেখে হ্যালি অত্যন্ত চমৎকৃত হলেন। নিউটনের গবেষণাকে তিনি বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিলেন। পরবর্তীতে হ্যালির পৃষ্ঠপোষকতায় নিউটনের জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ, Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica (Mathematical Principles of Natural Philosophy), সংক্ষেপে যাকে বলে ‘প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা’, প্রকাশিত হয়েছিলো। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটি একটি অমর গ্রন্থ। হ্যালি এবং নিউটনের বন্ধুত্ব আমৃত্যু অটুট ছিল। </p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/11/1344538"><span style="color:#2980b9;">আরও পড়ুন: ভুল করে হত্যা করা হয়েছিল যে বিজ্ঞানীকে</span></a></p> <p>১৬৮২ সালে লন্ডনের আকাশে একটি ধূমকেতু দেখা গিয়েছিলো। এই ধূমকেতুটির গতিপথ নিয়ে গবেষণা করে হ্যালি বুঝতে পারলেন, ধূমকেতুটি একটি দীর্ঘ উপবৃত্তাকার পথ ধরে চলছে। ধূমকেতুটির বৈশিষ্ট্য দেখে তিনি আরও বুঝতে পারলেন, এই একই ধূমকেতুটি ১৫৩১ এবং ১৬০৭ সালেও দেখা গিয়েছিল। তখন নিউটনের সূত্র প্রয়োগ করে তিনি ভবিষ্যৎবাণী করলেন, এই ধূমকেতুটি ৭৬ বছর পর, অর্থাৎ ১৭৫৮ সালে আবারও ফিরে আসবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, হ্যালি ততদিন বেঁচে ছিলেন না। তাঁর মৃত্যুর ১৭ বছর পর, ১৭৫৮ সালের ডিসেম্বর মাসের বড়দিনে, হ্যালির ভবিষ্যৎবাণী সফল হলো। ওই ধূমকেতুটি লন্ডনের আকাশে আবারো ফিরে এসেছিল। তখন থেকেই ওই ধূমকেতুটির নাম হয়েছে, হ্যালির ধূমকেতু। এ ধূমকেতুটির জন্যই এডমন্ড হ্যালি অমর হয়ে আছেন। হ্যালির হিসেব অনুযায়ী এই ধূমকেতুটি ৭৬ বছর পর পর আবার ফিরে আসে। </p> <p><a href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/12/08/1343662"><span style="background-color:#2980b9;">আরও পড়ুন: লাল কাপড় ষাঁড়কে উত্তেজিত করে কেন?</span></a></p> <p>১৯৮৬ সালে হ্যালির ধূমকেতুটি শেষবার দেখা গিয়েছিলো। তখন বাংলাদেশ থেকে আমরা অনেকেই এই ধূমকেতুটি দেখেছিলাম। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন, এই ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখে দীর্ঘ উপবৃত্তকার পথে হ্যালির ধুমকেতু সূর্য থেকে তার সবচেয়ে দূরবর্তী স্হানে পৌঁছেছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে, এপিহেলিয়ন। সূর্য থেকে এই দূরত্ব ৫২৬ কোটি কিলোমিটার। </p> <p>এরপর হ্যালির ধূমকেতু সূর্যের দিকে আবার ফিরতি যাত্রা শুরু করেছে। ফিরতি পথে সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আসতে হ্যালির ধূমকেতুর সময় লাগবে আরও ৩৮ বছর। এই অবস্থানটির নাম, পেরিহেলিয়ন। সূর্য থেকে তখন এর দূরত্ব হবে মাত্র ৮.৮ কোটি কিলোমিটার।</p> <p>জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৬১ সালে পৃথিবীর আকাশে হ্যালির ধূমকেতুকে আবারও দেখা যাবে। হ্যালির ধুমকেতু দুবার দেখার সৌভাগ্য অবশ্য সবার হবে না।</p>