<p>আগে গুজব তৈরি করতে ব্যবহার করা হতো ফটোশপ। এখন এটির বদলে জায়গা করে নিয়েছে এআই এডিটিং। কিন্তু কিভাবে? সেটাই জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ।</p> <p>ফটোশপ আর এআই এডিটিং এক নয়। অনেকেই এআই এডিটিংয়ের সঙ্গে ফটোশপের তুলনা করে বলেন, ফটোশপ যদি ছবির বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট না করে তাহলে এআইও করবে না। এ বিতর্কটি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন আলোকচিত্র শিল্পী ও সাংবাদিকরা।</p> <p>তাঁদের মতে, ফটোশপ গুজব তৈরিতে কাজে লাগানোতে যতটা কঠিন, এআই ব্যবহার করা ততটাই সহজ। এমনকি তাঁরা এটাও বলেছেন—কিছু ক্ষেত্রে এআইয়ের তৈরি ছবির মতো মানসম্মত এডিট ফটোশপে করাও অসম্ভব। ফটোশপ বা এ ধরনের সফটওয়্যারগুলো চালনার জন্য অন্তত ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ প্রয়োজন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা স্মার্টফোন থেকেই পোস্ট করে থাকে।</p> <p>সময় নিয়ে ভুয়া ছবি পিসিতে বসে তৈরি করে অনেকেই কিন্তু ফটোশপ যদি স্মার্টফোনেই ব্যবহার করা যেত, তখন ভুয়া ছবির পরিমাণ বাড়ত জ্যামিতিক হারে। ছবির মধ্যে নানা রকম বিষয়বস্তু জুড়ে দেওয়াটা ফটোশপে শুধু কঠিনই নয়, সেটা বাস্তবসম্মত করাটাও প্রায় শৈল্পিক ব্যাপার। উদাহরণস্বরূপ কোনো ব্যক্তির ছবিতে তার হাতে পানির গ্লাসের বদলে মদের বোতল বসাতে হলে শুধু মদের বোতলের ছবি হলেই হবে না, মূল ছবিটিতে যেভাবে আলো-ছায়া বিন্যাসিত, ঠিক সেভাবে তোলা বোতলের ছবিও লাগবে। এর পরও সেটা বসানোর পর সঠিক জায়গায় ছায়া বসানো এবং বোতলের মধ্যে আশপাশের চিত্রের প্রতিবিম্বও বসাতে হবে।</p> <p>এ কাজগুলো করার জন্য প্রয়োজন প্রচুর দক্ষতা এবং সময়। উদাহরণস্বরূপ, একজন রাজনীতিবিদের ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য দক্ষ ব্যক্তিদের পেছনে টাকা ঢালতে অনেকেই রাজি থাকবে, কিন্তু শুধু ঈর্ষান্বিত হয়ে সহকর্মীর ছবি এডিটের পেছনে বেশির ভাগ মানুষই এত কাঠখড় পোড়াবে না।<br /> অনেকেই ধারণাও করতে পারবে না যে ফটোশপে বাস্তবসম্মতভাবে ছবি সম্পাদনা করা কতটা সময়সাপেক্ষ এবং কী পরিমাণ এডিটিং টুলসের ওপর দখল থাকা আবশ্যক। ফটোশপে ছবি বসিয়ে কয়েকটা ক্লিক করলেই এডিট হয়ে যায় না। পেশাদার ফটোগ্রাফার, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট বা ডিজাইনারদের বাইরে এ ধরনের কাজের দক্ষতা দেখা যায় না।</p> <p>ফলে এখন পর্যন্ত সম্পাদনা করা ফটোর পরিমাণ অনেকটাই কম। অন্যদিকে এআই টুলসের মাধ্যমে এ তিনটি বাধা মুহূর্তেই উের যাওয়া সম্ভব। জেনারেটিভ এআই টুলসসমৃদ্ধ স্মার্টফোন সদ্যই বাজারে আসতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সাধারণ ব্যবহারকারীদের নাগালে সেসব পৌঁছে যাবে। যখন মাঝারি মূল্যের স্মার্টফোনেই চলবে বিবরণ থেকে ছবি তৈরি করার এআই, তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো পোস্টকেই আর পুরোপুরি বিশ্বাস করা যাবে না। এর মধ্যেই গুগল পিক্সেল ৯ সিরিজে দেওয়া হয়েছে ‘রি-ইমাজিন’ ফিচার, যার মাধ্যমে শুধু ছবিতে কী চাই, তার বিস্তারিত বিবরণ লিখেই সেটার বিশ্বাসযোগ্য সম্পাদনা করা সম্ভব।</p> <p>আগের উদাহরণেই ফেরা যাক। সহকর্মীর প্রতি ঈর্ষা খুবই সাধারণ ঘটনা, তাঁদের চরিত্রে কালি দেওয়ার চেষ্টা নৈমিত্তিক বিষয়। সহকর্মী পানি পান করছেন, এ অবস্থায় ছবি তোলাও খুব সহজ। পানিকে মদে পরিণত করা এখনই পিক্সেল ৯ সিরিজে খুবই সহজ। ফোনে থাকা ‘ফটোস’ অ্যাপ চালু করে, ছবিটির মধ্যে হাতের অংশটি সিলেক্ট করে ‘পানির গ্লাসের বদলে মদের বোতল যুক্ত কর’ লিখে দিলেই কেল্লা ফতে। গুগলে সফটওয়্যারটি এতটাই চমৎকার কাজ করে যে ‘এডিট করা ছবি’টি ধরা প্রায় অসম্ভব। অথচ সফটওয়্যারটি বর্তমানে প্রথম সংস্করণে রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সেটি আরো বিশ্বাসযোগ্য ছবি তৈরি করতে পারবে। পুরো কাজটি করতে লাগবে কয়েক সেকেন্ড আর হাতের ফোন, কোনো এডিটিং দক্ষতার প্রয়োজনই নেই।</p> <p>ফটোশপ প্রকাশের সময়ও একই সমস্যাগুলোর কথা বলা হয়েছিল। সেসব ভবিষ্যদ্বাণী ফলেছেও, বর্তমানে এডিট করা ছবি, ভিডিও এবং স্ক্রিনশট প্রতিনিয়ত ছোট-বড় গুজবের জন্ম দিয়েই যাচ্ছে। ভবিষ্যতে যখন দক্ষ ব্যক্তিরাই নন, সাধারণ আমজনতাও এমন এডিট করা ছবি পোস্ট করতে শুরু করবে, তখন বিষয়টি আরো ভয়াবহ হবে, তার কোনো সন্দেহ নেই। আর একবার গুজব রটে গেলে সেটা মিথ্যা প্রমাণ করলেও গুজব বন্ধ হয় না, সেটা আমরা বহুবার দেখেছি। এআই টুলস হয়তো আইন করে কিছুটা ঠেকানো যাবে, কিন্তু পুরোপুরি নয়। ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইন খবরগুলো হয়তো আর বিশ্বাসই করা যাবে না।</p>