<p>শিশুদের কথা শেখার সময় প্রায়ই তোতলামির সমস্যা দেখা যায়, যা অনেকের কাছেই স্বাভাবিক একটি বিষয়। সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে, এর পেছনে কারণ কী? এবং কিভাবে এটি মোকাবেলা করা যায়?</p> <p>তোতলামির পেছনে বিজ্ঞানীদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, আমাদের মস্তিষ্কের দুটি বাককেন্দ্রের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণেই এই সমস্যা দেখা দেয়। এই দুটি বাককেন্দ্রের মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকে, যার ফলে কথা বলার সময় কোনো একটি কেন্দ্র ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, এবং শিশুরা তোতলাতে শুরু করে। আবার অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, তোতলামি পুরোপুরি মানসিক চাপের ফল।<br /> শিশুরা যখন অপ্রিয় পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে, যেমন কোনো কঠোর শিক্ষক, অপছন্দের লোকের সামনে কথা বলতে হয়, তখন তোতলামির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এমনকি স্থান ভেদেও তোতলামির মাত্রা পরিবর্তিত হতে পারে—কোচিং ক্লাসে বেশি তোতালানো, কিন্তু খেলার মাঠে স্বাভাবিকভাবে কথা বলা এ ধরনের উদাহরণ প্রায়ই দেখা যায়।</p> <p>শিশু বয়সে একাধিক ভাষা শেখার চেষ্টা করাও তোতলামির একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। যখন শিশুকে একাধিক ভাষার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়—যেমন বাড়িতে বাংলা, স্কুলে ইংরেজি, এবং অন্য কোনো স্থানে হিন্দি—তখন ভাষাগত বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে, যা তোতলামির সৃষ্টি করে।</p> <p>একটি আকর্ষণীয় দিক হল, শতকরা ৬০ ভাগ শিশু একা একা পড়াশোনা বা গান করার সময় তোতলায় না। এটি প্রমাণ করে যে, তোতলামি মানসিক চাপ বা সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত হতে পারে।</p> <p>ডানহাতি ও বাঁহাতি শিশুদের মধ্যে তোতলামির প্রবণতা নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় রয়েছে। সাধারণত, ডানহাতি শিশুরা যখন স্বাভাবিকভাবে কথা বলে, তখন তাদের মস্তিষ্কের বাম দিকের বাককেন্দ্র বেশি সক্রিয় থাকে। কিন্তু যখন তারা তোতলায়, তখন মস্তিষ্কের ডান দিকের বাককেন্দ্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই দুই কেন্দ্রের টানাপোড়েনই তোতলামির মূল কারণ।</p> <p>শিশুর তোতলামি সমস্যা সমাধানে পরিবার ও শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিশুর সামনে কখনোই অস্বাভাবিক আচরণ করবেন না। তাকে ব্যঙ্গ বা শাস্তি দেওয়ার বদলে তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। শিশু কথা বলতে গিয়ে আটকে গেলে তাকে উৎসাহিত করুন তার কথা শেষ করতে, তবে তাকে চাপ দেবেন না।</p> <p>এছাড়াও, স্কুলে বা অন্য কোথাও কোনো চাপ বা মানসিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ বা স্নায়ু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি হতে পারে।</p> <p>তোতলামি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি শিশুদের আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সঠিক পরিচর্যা ও সমর্থনের মাধ্যমে শিশুদের এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে, তাদের কথা বলার সমস্যা নিয়ে সচেতন থাকা এবং সহানুভূতিশীল আচরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p><br />  </p>