<p>শুঁয়োপোকা (Caterpillar) দেখতে নিরীহ হলেও তাদের স্পর্শ অনেক সময় আমাদের জন্য কষ্টদায়ক হতে পারে। বিশেষ করে যখন শুঁয়োপোকার শরীরের লোম বা কাঁটা ত্বকের সাথে সংস্পর্শে আসে, তখন ত্বকে চুলকানি, জ্বালা, ফুসকুড়ি বা লালচে দাগ দেখা দিতে পারে। এই প্রতিক্রিয়া কীভাবে ঘটে এবং কেন শুঁয়োপোকার স্পর্শে ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি হয়, আসুন তা বিস্তারিতভাবে জানি।</p> <p>শুঁয়োপোকার শরীরে সাধারণত অনেক সূক্ষ্ম লোম বা কাঁটা থাকে, যা তাদের প্রতিরক্ষার কাজ করে। এই লোম বা কাঁটা দেখতে ছোট এবং নরম মনে হলেও, বাস্তবে এগুলোতে থাকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তীক্ষ্ণ উপাদান, যা সহজেই মানুষের ত্বকের ভেতরে ঢুকে যেতে পারে।</p> <p>লোমগুলোতে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে। ফলে শুঁয়োপোকার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির ত্বকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।<br /> শুঁয়োপোকার লোম বা কাঁটার মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন এবং রাসায়নিক পদার্থ, যা আমাদের ত্বকে সংস্পর্শে এলে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শরীর থেকে হিস্টামিন নামে একটি উপাদান মুক্ত হয়। হিস্টামিন আমাদের ত্বকের রক্তনালীগুলোকে প্রশস্ত করে, যার ফলে ত্বকে লালচে দাগ, ফোলাভাব এবং জ্বালুনি অনুভূতি হয়। এই প্রতিক্রিয়াকে ‘অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন’ বলা হয়।</p> <p>বিশ্বে অনেক প্রজাতির শুঁয়োপোকা রয়েছে, এবং তাদের প্রতিটি প্রজাতির লোম বা কাঁটা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কিছু শুঁয়োপোকার লোম বিশেষভাবে বিষাক্ত হতে পারে এবং মারাত্মক ত্বক জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, লার্ভা বা শুঁয়োপোকা যাদের 'ইচিং ক্যাটারপিলার' বলা হয়, তাদের স্পর্শে চুলকানি এবং তীব্র জ্বালা হতে পারে।</p> <p>যদি কোনো শুঁয়োপোকা ত্বকের সাথে সংস্পর্শে আসে, তাহলে সাধারণত যে লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে তা হলো: ত্বকে তাৎক্ষণিক চুলকানি বা জ্বালা, লালচে ফোসকা বা দাগ, আক্রান্ত স্থানে ফোলাভাব, মাঝে মাঝে হালকা ব্যথা বা শুষ্কতা।</p> <p>যদি শুঁয়োপোকার স্পর্শে ত্বকে জ্বালা বা প্রদাহ দেখা দেয়, তাহলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। </p> <p>প্রথমে ত্বক পরিষ্কার করুন। শুঁয়োপোকার লোম ত্বকের ভেতরে ঢুকে গেলে প্রথমেই আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, যাতে লোমগুলো বের হয়ে যায়। আলতো করে লোম সরান। আক্রান্ত স্থানে যদি লোম আটকে থাকে, তাহলে একটি টেপ ব্যবহার করে আলতোভাবে সেগুলো তুলে ফেলুন। হিস্টামিন প্রতিরোধক ব্যবহার করু। ফার্মেসিতে পাওয়া অ্যান্টি-হিস্টামিন ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে পারেন, যা জ্বালা এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করবে। ত্বকে ঠান্ডা পানিতে ভেজানো কাপড় বা বরফের প্যাক ব্যবহার করলে ফোলাভাব ও জ্বালা কমে যাবে।</p> <p>যদি প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হয়, যেমন শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ফোলাভাব দেখা দেয়, তাহলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।</p> <p>শুঁয়োপোকা বা এর লোমযুক্ত কোনো প্রজাতির কাছাকাছি গেলে সাবধান থাকুন এবং সরাসরি তাদের স্পর্শ করবেন না।</p> <p>বাগান বা গাছপালার কাজ করার সময় লম্বা পোশাক এবং গ্লাভস ব্যবহার করুন, যাতে ত্বক সুরক্ষিত থাকে।</p> <p>বিশেষ করে শিশুরা শুঁয়োপোকা নিয়ে খেলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন, কারণ তারা সহজেই শুঁয়োপোকা স্পর্শ করতে পারে এবং এর ফলে তাদের ত্বকে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।</p> <p>শুঁয়োপোকা তাদের লোম বা কাঁটার মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষা করে, কিন্তু আমাদের ত্বকের জন্য এটি বেশ কষ্টদায়ক হতে পারে। সঠিকভাবে প্রতিরোধ ও প্রতিকার করলে শুঁয়োপোকার স্পর্শে সৃষ্ট জ্বালা ও প্রদাহ সহজেই কমানো যায়। তাই শুঁয়োপোকা সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং প্রয়োজনে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।</p> <p>সূত্র: হাউ ইটস ওয়ার্কস</p>