<p>মশা পৃথিবীর অন্যতম প্রাণঘাতী প্রাণী, কারণ তারা ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া এবং জিকা ভাইরাসের মতো বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। তবে মশার প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং তাদের জীবনের ওপর তাপমাত্রার প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক এ গবেষণায় জানা গেছে, তাপমাত্রার পরিবর্তন মশার প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে পারে। যা তাদের জীবনীশক্তি ও রোগ সংক্রমণের ক্ষমতা প্রভাবিত করে।</p> <p>মশার দেহে মেলানাইজেশন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নামে এক ধরনের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে,, যা তাদের ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রতিরোধব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়। উচ্চ তাপমাত্রায় মশার মেলানাইজেশন প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মশার জীবাণু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।</p> <p>বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেছেন যে বিশেষ করে এডিস প্রজাতির মশা, যারা ডেঙ্গু এবং জিকা ভাইরাস ছড়ায়, উচ্চ তাপমাত্রায় খুব দ্রুত রোগের ঝুঁকিতে পড়ে। এই প্রজাতির মশার প্রতিরোধব্যবস্থা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে যায়। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে এই দুর্বলতা আরো বৃদ্ধি পায়। ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মশা নিজেদের রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে না। ফলে মশারা নিজেরা আক্রান্ত হতে পারে এবং মানুষকেও রোগ সংক্রমিত করার হার বেড়ে যায়। </p> <p>উচ্চ তাপমাত্রা শুধু মশার প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে না, এটি তাদের প্রজনন এবং সংক্রমণ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয়। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মশার ডিম দ্রুত পরিণত হয় এবং তাদের জীবনচক্র ছোট হয়। এর ফলে মশা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে এবং সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পায়।</p> <p>গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে, যার কারণে মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি আরো বাড়বে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে তাপমাত্রার পরিবর্তন মশার জীববিজ্ঞানে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে এবং মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হবে।</p> <p>এই গবেষণাটি করেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক এক গবেষণা দল। আর তাদের লেখা গবেষণা প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছে প্লস প্যাথোজেন (PLOS Pathogens) নামের এক জার্নালে।</p> <p>মশার প্রতিরোধ ক্ষমতা ও তাপমাত্রার ওপর প্রভাব একটি গুরুতর গবেষণার বিষয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মশার প্রতিরোধব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে। তাই এই বিষয়ে আরও গবেষণা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নয়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p>সূত্র : প্লস প্যাথোজেনস</p>