<p>সাল ১৯১১। কোপেনহেগেন থেকে ডক্টরেট শেষ করে ইংল্যান্ড আসেন বোর। সেটা ছিল এক বছরের সফর। এই সফর তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ইলেকট্রনের আবিষ্কারক জে জে থমসনের সাথে কাজ করতে চাইতেন তিনি। থমসন তখন কেমব্রিজে, বিখ্যাত ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরির পরিচালক। বড় বড় বিজ্ঞানী কাজ করছেন তাঁর অধীনে। সে বছরই তাঁর সাথে দেখা করার সুযোগ পান বোর। পাড়ি জমান কেমব্রিজে। সঙ্গে ছিল তাঁর থিসিস পেপার এবং থমসনের একটা বই। প্রথম পরিচয়েই সেই বইয়ে কিছু ভুল তুলে ধরেন বোর। থমসনের কাছে ভালো লাগেনি ব্যাপারটা। এরপর আর বোরের সাথে কাজ করার আগ্রহ দেখাননি তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="দুটি নোবেল পদক গলিয়েছিলেন নীলস বোর?" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2023/10/03/1696339893-709f9f6db6d21f34088dbcee248f9866.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>দুটি নোবেল পদক গলিয়েছিলেন নীলস বোর?</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2023/10/03/1323553" target="_blank"> </a></div> </div> <p>হতাশ হয়ে ম্যানচেস্টার চলে যান বোর। এখানে পরিচয় হয় রাদারফোর্ডের সঙ্গে। রাদারফোর্ড ছিলেন থমসনেরই এক সময়ের ছাত্র। সে বছরই তিনি তাঁর পরমাণুর মডেল প্রকাশ করেছেন। কোয়ান্টাম তত্ত্ব ব্যবহার করে সেই মডেল সংশোধন করেন বোর। তৈরি করেন নতুন এক পারমাণবিক মডেল। বিজ্ঞান মহলে সাড়া ফেলে তাঁর কাজ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="এবার কারা পাচ্ছেন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল?" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/05/1728127448-9b6db3f3f700bff8a64ab0ab80bfe9ac.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>এবার কারা পাচ্ছেন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল?</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/05/1432077" target="_blank"> </a></div> </div> <p>বোর ছিলেন ধীর-চিন্তার মানুষ। কথা বলার আগে সময় নিয়ে চিন্তা করতেন। তাঁর সহকর্মী জেমস ফ্র্যাঙ্ক একবার বলেছিলেন, চিন্তা করার সময় বোরের মুখ শুকিয়ে যেত। তাঁকে অসহায় দেখাত। মনে হতো যেন তিনি অন্ধ। কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। জীবনের প্রতি তাঁর কোনো আসক্তি নেই, আনন্দ নেই। তারপর হঠাৎ করেই তাঁর মধ্যে জ্বলে উঠত আলো! বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ দেখা দিত চোখে-মুখে। বলে উঠতেন— হ্যাঁ, খুঁজে পেয়েছি!</p> <p>শ্রোডিঙ্গার, ডি ব্রগলি এবং হাইজেনবার্গের মতো নিলস বোরও কোয়ান্টাম তত্ত্বকে এগিয়ে নিয়েছেন। আইনস্টাইন কোয়ান্টাম তত্ত্বের ক্লু বা সূত্র ব্যবহার করে আলোক-তড়িৎক্রিয়ার জট খুলেছিলেন ঠিকই। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অনেক কিছুই মানতে নারাজ ছিলেন। সভা সম্মেলনে মাঝেমধ্যেই বোরের সাথে দেখা হতো আইনস্টাইনের। প্রায়ই বোরকে আটকাতে জটিল সব প্রশ্নের ফাঁদ পেতে আসতেন। বোর বিচলিত হননি কখনও। দু-একদিন সময় নিয়ে চিন্তা করতেন। বোরের প্রশ্নোত্তরে আইনস্টাইন খুব একটা তুষ্ট হতেন না।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="তিমিও গান গায়" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/06/1728212480-1d7748f465b9a359b7aec0f2967840af.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>তিমিও গান গায়</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/06/1432400" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এক বছর রাদারফোর্ডের সাথে কাজ করার পর জন্মভূমি ডেনমার্কে ফিরে আসেন বোর। পড়াতে শুরু করেন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের নতুন এক ইনস্টিটিউটে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয় তাঁকে। বর্তমান নাম ‘নিলস বোর ইনস্টিটিউট’। সেখানে ইলেকট্রনের ধর্ম নিয়ে ভাবতে শুরু করেন তিনি। বন্ধু হ্যানসেনের সহায়তায় পান বামারের সূত্রের হদিস। সেই সূত্রের সাহায্যে আরও ভালোভাবে সংশোধন করেন নিজের কোয়ান্টাম মডেল। কোপেনহেগেনে বসেই তিনি বিখ্যাত সম্পূরক নীতি প্রবর্তন করেন। যে নীতি খুব অদ্ভুত তথ্যের জন্ম দেয়। তত্ত্বটি হচ্ছে— কোয়ান্টাম কণিকার দুটো সম্পূরক বৈশিষ্ট্য একই সাথে পর্যবেক্ষণ করা যায় না। একই সময়ে ইলেকট্রনের অবস্থান ও ভরবেগ মাপা যেমন অসম্ভব, তেমনি একই যন্ত্র দিয়ে দুটোকে মাপাও সম্ভব নয়।</p> <p>১৯৩১ সাল। ডেনমার্কের সম্মানজনক একটি বাসভবনে থাকার আমন্ত্রণ পান তিনি। দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনা মানুষগুলোকে সে বাড়িতে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। বোর দু বছর ছিলেন সে বাড়িতে। ১৯৩২ সালে জেমস চ্যাডউইক নিউট্রন আবিষ্কার করার পর বোর আবার নজর দেন নিউক্লিয়াসে। প্রবর্তন করেন নতুন এক তত্ত্ব। কম্পাউন্ড নিউক্লিয়াস থিওরি। এই তত্ত্ব অনুসারে, নিউট্রন দ্বারা কোনো নিউক্লিয়াসকে আঘাত করলে, সে নিউট্রনটি কেবল একটি নিউট্রনকে আঘাত করে না। বরং তা নিউক্লিয়াসে অবস্থিত নিউট্রন ও প্রোটনের সাথে ক্রমাগত সংঘর্ষে জড়ায়। সে সময় পরমাণু থেকে একটি শক্তি তরঙ্গ নির্গত হয়। সেটি হলো গামা রশ্মি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সাপ কি উড়তে পারে?" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/06/1728210408-518253bc6397cfe7dedc4856046a4ed3.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সাপ কি উড়তে পারে?</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/06/1432391" target="_blank"> </a></div> </div> <p>১৯৪৩ সালে দেশ ছাড়তে হয় বোর পরিবারকে। দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি। ডেনমার্ক চলে যায় নাৎসিদের দখলে। বোরের মা ছিলেন ইহুদি। প্রাণ বাঁচাতে নৌপথে সপরিবারে সুইডেন চলে যান তাঁরা। সুইডেন থেকে ইংল্যান্ড। এরপর পাড়ি জমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা ছিলেন বোর। ইউরোপের বহু তরুণ শিক্ষার্থী কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভীড় জমিয়েছেন নিলস বোরের কাছ থেকে বিজ্ঞানের পাঠ নিতে। ওয়ার্নার হাইজেনবার্গও ছিলেন তাঁদের একজন।</p> <p><strong>৭ অক্টোবর ১৮৮৫</strong><br /> কোপেনহেগেনে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ক্রিশ্চিয়ান বোর, ড্যানিশ শারীরতত্ত্বের অধ্যাপক এবং মা এলেন বোর, একজন ইহুদি।</p> <p><strong>১৯০৮</strong><br /> তরলের পৃষ্ঠচাপ সম্পর্কিত গবেষণাপত্র প্রকাশ করে দ্য রয়্যাল ড্যানিশ একাডেমি অব সায়েন্স থেকে স্বর্ণপদক অর্জন করেন।</p> <p><strong>১৯১১</strong><br /> কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।</p> <p><strong>১৯১১-১২</strong><br /> যুক্তরাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ সফরটি করেন। প্রথমে কেমব্রিজে যান। এরপর চলে আসেন ম্যানচেস্টারে। জন্ম দেন পরমাণুর কোয়ান্টাম মডেল। </p> <p><strong>১৯১২</strong><br /> মারগ্রেথ নরলান্ডের সাথে বিয়ে হয়। মারগ্রেথকে সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত করেন।</p> <p><strong>১৯১৩</strong><br /> বোরের পরমাণু মডেল প্রকাশ করেন।</p> <p><strong>১৯১৩</strong><br /> প্রভাষক হিসেবে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।</p> <p><strong>১৯১৪</strong><br /> প্রভাষক হিসেবে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান। </p> <p><strong>১৯১৬</strong><br /> কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হয়।</p> <p><strong>১৯২০</strong><br /> তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের নতুন এক ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হন।</p> <p><strong>১৯২২</strong><br /> নতুন পরমাণু মডেলের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জয় করেন।</p> <p><strong>১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝি</strong><br /> কোপেনহেগেন ব্যাখ্যার জন্ম দেন। বোর-আইনস্টাইন বিতর্কের সূচনা হয়।</p> <p><strong>১৯৩১</strong><br /> সপরিবারে কার্লসবাগের সম্মানজনক বাসভবনে উঠেন।</p> <p><strong>১৯৩০-এর দশকের শুরুর দিকে</strong><br /> পরমাণুর নিউক্লিয়াস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।</p> <p><strong>১৯৪৩</strong><br /> হিটলারের ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ থেকে রক্ষা পেতে সপরিবারে সুইডেনে পাড়ি জমান। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে ম্যানহাটন প্রকল্পে যুক্ত হন।</p> <p><strong>১৮ নভেম্বর ১৯৬২</strong><br /> কোপেনহেগেনে মৃত্যুরবরণ করেন।</p> <p><strong>১৯৬৫ </strong><br /> ‘ড্যানিশ ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল ফিজিকস’র নাম পরিবর্তন করে ‘নিলস বোর’ ইনস্টিটিউট রাখা হয়।</p> <p><strong>১৯৯৭</strong><br /> তাঁর নামানুসারে পর্যায় সারণির ১০৭ নম্বর মৌলের নাম রাখা হয় বোরিয়াম।<br />  </p>