<p>২০১৯ সালে নরওয়ের মৎস্যজীবীরা এক অদ্ভুত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। একটি সাদা বেলুগা তিমি তাদের জালে এসে ধরা পড়ে, যার গায়ে একটি বিশেষ ধরনের হার্নেস) বাঁধা ছিল। হার্নেসটি তিমির শরীরে বেশ মজবুতভাবে বাঁধা ছিল, এবং এর ওপর রাশিয়ান সামরিক সরঞ্জামের ছাপ ছিল। ফলে সন্দেহ তৈরি হয়—এটা কি গুপ্তচর তিমি? আর এ থেকেই শুরু হয় রাশিয়ার কথিত 'গুপ্তচর তিমি' নিয়ে বৈজ্ঞানিক ও সামরিক মহলের জল্পনা।</p> <p>তিমিটি প্রথম দেখা যায় নরওয়ের ফিনমার্ক উপকূলে। মৎস্যজীবীরা লক্ষ্য করেন, তিমিটির গায়ে একটি শক্তিশালী বেল্ট বাধা, যা সহজেই কোনো সাধারণ বা বন্য তিমির শরীরে থাকার কথা নয়। পরে জানা যায়, এই বেল্টে একটি ক্যামেরা অথবা অস্ত্র সংযোজনের জায়গা থাকতে পারে। বেল্টটির গায়ে ইংরেজি ও রুশ ভাষায় লেখা ছিল—“Equipment of St. Petersburg,” যা ইঙ্গিত করে যে এটি রাশিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট।<br /> বিজ্ঞানীরা ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই সামুদ্রিক প্রাণী, বিশেষত তিমি, সীল এবং ডলফিনকে সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="তিমিও গান গায়" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/06/1728212480-1d7748f465b9a359b7aec0f2967840af.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>তিমিও গান গায়</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/06/1432400" target="_blank"> </a></div> </div> <p>শীতল যুদ্ধের সময় থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। রাশিয়ার মুরমানস্কের নৌ ঘাঁটিতে এই ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা বেলুগা তিমি, সীল এবং ডলফিনকে গুপ্তচরবৃত্তি, শত্রু জাহাজের নিচে বিস্ফোরক স্থাপন, এবং সামুদ্রিক ড্রোন ধ্বংস করার জন্য প্রশিক্ষিত করে।</p> <p>এই ধরনের সামরিক প্রাণী ব্যবহারের অন্যতম সুবিধা হলো, এরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং গভীর পানির নিচে কাজ করতে সক্ষম। তিমিরা সহজেই শত্রু জাহাজে নজরদারি করতে পারে এবং তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="যেভাবে হয়েছিল ভ্যাম্পায়ার মিথের উত্থান" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/08/1728379572-922a6e42bd08360ba53faf9ffc7de5cc.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>যেভাবে হয়েছিল ভ্যাম্পায়ার মিথের উত্থান</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/08/1433100" target="_blank"> </a></div> </div> <p>বেলুগা তিমি অত্যন্ত সামাজিক এবং বুদ্ধিমান প্রাণী। এদের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত, এবং এরা একে অপরের সাথে বিভিন্ন সুরেলা শব্দের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। বেলুগা তিমির শ্রবণশক্তি খুবই তীক্ষ্ণ, যা তাদের গভীর সমুদ্রের নিচে সহজে শিকার খুঁজতে সাহায্য করে। এর ফলে তাদের সামরিক কাজে ব্যবহার করা বেশ কার্যকর হতে পারে।</p> <p>বেলুগা তিমি প্রায় ২০০০ মিটার গভীর পর্যন্ত ডুব দিতে পারে এবং তাদের চোখ ও কান অতিরিক্ত সংবেদনশীল, যা তাদের চারপাশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত থাকতে সাহায্য করে। এদের এই বৈশিষ্ট্যগুলোই রাশিয়ান নৌবাহিনীর জন্য তিমিদের সামরিক কাজে ব্যবহারের কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সাপ কি উড়তে পারে?" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/06/1728210408-518253bc6397cfe7dedc4856046a4ed3.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সাপ কি উড়তে পারে?</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/06/1432391" target="_blank"> </a></div> </div> <p>বেলুগা তিমির এই অস্বাভাবিক ঘটনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। রাশিয়ার নৌবাহিনী এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি, তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে এটি রাশিয়ার সামরিক কৌশলের অংশ। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তিমির গায়ে থাকা হার্নেসটি সামুদ্রিক নজরদারি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হতো।</p> <p>এর আগে শীতল যুদ্ধের সময়, যুক্তরাষ্ট্রও সামুদ্রিক প্রাণী, বিশেষত ডলফিন ও সীল ব্যবহার করেছিল। এদেরকে শত্রুর সাবমেরিন শনাক্ত করতে এবং মাইন খুঁজে বের করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। ফলে এটি প্রমাণ করে যে রাশিয়ার এই কৌশল নতুন কিছু নয়।<br /> বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সামুদ্রিক প্রাণীদের এভাবে সামরিক কাজে ব্যবহার করা একটি বিতর্কিত বিষয়। মেরিন বায়োলজিস্ট অডুন রিকার্ডসেন মনে করেন, বেলুগা তিমির এই ধরনের ব্যবহার তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, এ ধরনের প্রশিক্ষণ তিমিদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সাপের রাজ্য স্নেক আইল্যান্ড" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/04/1728026623-0a3dda2ebe4c0cfa7c5b839f8ce92444.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সাপের রাজ্য স্নেক আইল্যান্ড</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/10/04/1431714" target="_blank"> </a></div> </div> <p>ড. জর্জ ড্রগুনভ, যিনি রাশিয়ান সামুদ্রিক প্রাণী গবেষণার সাথে জড়িত, তিনি বলেছেন যে বেলুগা তিমি বা অন্যান্য প্রাণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব এবং এদের ব্যবহারে সামরিক বাহিনী অনেক উপকার পেতে পারে। তবে তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, এই ধরনের প্রাণীকে সামরিক কাজে ব্যবহারের সময় তাদের প্রতি মানবিক আচরণ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতে আরও উন্নত সামরিক প্রয়োজনে সামুদ্রিক প্রাণীদের ব্যবহার বাড়তে পারে। গভীর সমুদ্রের নিচে কাজ করার জন্য এই প্রাণীগুলোর ব্যবহার সহজ ও কার্যকর। এদের মাধ্যমে শত্রু জাহাজে নজরদারি, সামুদ্রিক ড্রোন খুঁজে বের করা, এবং মাইন ধ্বংস করার কাজগুলো আরও সহজ হয়ে উঠতে পারে। তবে এই ধরনের প্রযুক্তিগত এবং সামরিক ব্যবহারের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রাণীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="টিয়া পাখি কি ভবিষ্যৎ বলতে পারে?" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/30/1727682425-cbdd90a8d692185d264de09111743693.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>টিয়া পাখি কি ভবিষ্যৎ বলতে পারে?</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/09/30/1430452" target="_blank"> </a></div> </div> <p>রাশিয়ার 'গুপ্তচর তিমি' বিতর্ক আমাদেরকে সামুদ্রিক প্রাণীদের সামরিক কাজে ব্যবহারের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও সামরিক প্রযুক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। রাশিয়ার এই কৌশল একদিকে যেমন সামরিক বাহিনীর জন্য কার্যকর হতে পারে, তেমনই এটি একটি জটিল এবং নৈতিক প্রশ্নের জন্ম দেয়—প্রকৃতির এ ধরনের প্রাণীদের মানবসৃষ্ট কাজে ব্যবহারের সঠিকতা নিয়ে।</p> <p>সূত্র: বিবিসি</p>
