<p>রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের জন্য ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, দেশে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমানো, কল রেটের সিলিং উঠিয়ে দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারে একটি বিশেষজ্ঞ টাস্কফোর্স গঠন জরুরি। </p> <p>শনিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘বৈষম্যহীন উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার: নতুন করে যাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। প্রযুক্তিভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক টিপাপ (টেক ইন্ডাস্ট্রি পলিসি অ্যাডভোকেসি প্লাটফর্ম) আয়োজিত এই আলোচনা সভায় অংশ নেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বিশেষজ্ঞরা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-র নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি)-র নবনিযুক্ত কমিশনার মাহমুদ হোসেন।</p> <p>টিপাপ প্লাটফর্মের সমন্বয়কারী ও বিডিজবসের প্রধান ফাহিম মাসরুরের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় প্রযুক্তি শিল্পের পক্ষ থেকে ২০টি পরামর্শ তুলে ধরেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা আদর্শ প্রাণিসেবার ফিদা হক ও অবাক টেকনোলোজির প্রধান দিদারুল ভূঁইয়া। </p> <p>অনুষ্ঠানে টেলিকম বিশেষজ্ঞ মাহতাবউদ্দিন আহমেদ ডাটা ও কল রেট কমানোর ব্যাপারে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ‘গত ১৫ বছরে কিছু বিশেষ গোষ্ঠীকে ব্যবসায়িক সুবিধা দেওয়ার জন্য নানা ধরনের কৃত্রিম স্তর তৈরি করে বিশেষ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সময় এসেছে ইউনিফাইড সিঙ্গেল লাইসেন্স পদ্ধতি প্রবর্তন করার। এ ছাড়াও বিটিআরসি’র সোশ্যাল অবলিগেশন ফান্ড নিয়ে স্বচ্ছতা আনার দাবি জানান। সাধারণ নাগরিক যাতে সহজে স্মার্টফোন নিতে পারে তার জন্য বিটিআরসির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় রুলস সংশোধন করার আহবান জানান তিনি। এখনই কল রেট সিলিং উঠিয়ে নেওয়ার দাবি জানান তিনি। </p> <p>টালিপের প্রধান ড. শাহাদাত খান আলোচনায় বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল অবকাঠামো হবে ‘ডাটা ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ও একজন নাগরিক যাতে তার নিজের তথ্য তার ইচ্ছামতো ব্যবহার (বা শেয়ার) করতে পারে সেই সুবিধা তৈরি করতে হবে। নতুন এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ডাটা এনালাইসিস করে সহজেই একজন অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে।<br /> সভায় উপস্থিত ফ্রিল্যান্সারদের পক্ষে থেকে বলা হয় পেপ্যাল ও স্ট্রাইপের মতো আন্তর্জাতিক পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বাংলাদেশে কাজ শুরু করতে পারে তার ব্যাপারে জরুরি উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া উচিত। </p> <p>দেশের অন্যতম বড় সফটওয়ার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ব্রেইনস্টেশনের প্রধান রাইসুল কবির বলেন, ‘কম্পানিগুলো যাতে সহজে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।’</p> <p>আইওটি উদ্যোক্তা বন্ডস্টেইনের শাহরুখ বলেন, ‘বর্তমানে আইওটি ডিভাইসের ওপর শুল্ক থাকার কারণে আইওটি এবং এর আনুসাঙ্গিক শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না। এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।</p> <p>অন্যরকম গ্রুপের প্রধান মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘গুণগতমানের আইসিটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ না দেওয়া গেলে প্রযুক্তিখাত নিয়ে বেশি দূর এগুনো যাবে না।’</p> <p>দেশীয় বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা মাসুদ মীর বলেন, ‘দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা খুবই জরুরি হলেও নানা আমলাতান্ত্রিক কারণে এখনো বেশি দূর আগানো যায়নি।’<br /> অনেক বক্তাই দেশে ক্যাশলেস লেনদেনের বাধাগুলো দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিটিআরসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। </p> <p>বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ (বিটিআরসি)-র কমিশনার মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘বিটিআরসির নেতৃত্ব টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে ডাটা ও কল রেট কমানোর ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই বেশ কিছু সংস্কার দৃশ্যমান হবে।’ তিনি বিটিআরসির স্বায়ত্বশাসনের ব্যাপারেও গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘গত সরকার টেলিকম মন্ত্রণালয়কে ক্ষমতা দিতে গিয়ে বিটিআরসিকে অনেক ক্ষেত্রেই অকার্যকর করে ফেলেছে।’</p> <p>বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান বলেন, ‘বিডা খুব দ্রুতই ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি বিজনেস অ্যাডভাইসারি কাউন্সিল তৈরি করবে যাদের পরামর্শে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ কিভাবে বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে।’</p> <p>অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘গত এক দশকে প্রযুক্তিখাতে যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে তাতে শুধু কিছু দালান কোঠা তৈরি হয়েছে। কোনো কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি হওয়া উচিত তরুণদের কর্মসংস্থান তৈরি।’</p>