<p>সংখ্যায় যা বেশি তা আমাদের কিছু খুব স্বাভাবিক। অন্যদিকে সংখ্যায় যা কম, সেগুলো দেখলেই আমাদের কেমন আজব লাগে, ব্যতিক্রমি মনে হয়। সঙ্গেে একরাশ প্রশ্নও ভিড় করে মনে—এই ব্যতিক্রমটা কেন হলো, কীভাবে হলো?</p> <p>মানুষের শরীরের দুটো হাত। এই হাত দুটোর মধ্যে একটার কার্যকারতিা কিছুটা বেশি থাকে। কারও ডানহাত বেশি কার্যকর কারও আবার বাম হাত। আমাদের সমাজে, পৃথিবীতে ডানহাতিদের সংখ্যা বেশি। তুলনায় বামহাতীদের সংখ্যা একেবারে নগণ্য। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ ভাগ মানুষ বামহাতি। অর্থাৎ তারা অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম। এজনই তাঁদের নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগে—বামহাতি কেন বামহতি? </p> <p>বামহাতি হওয়ার একটি বড় কারণ হলো জিন বা বংশগতির প্রভাব। বাবা-মা বা পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ বামহাতি হলে, পরবর্তী প্রজন্মের মধেথ্য বামহাতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তবে এটা সরাসরি উত্তরাধিকার সূত্রে আসে না। আসলে অনেক জটিল জিন এবং পরিবেশগত প্রভাবের কারণে এটা হয়।</p> <p>যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. সিলভিয়া পার্লির মতে, ‘বামহাতি হওয়ার পেছনে জিনগত প্রভাব রয়েছে। TUBB4B নামের একটি জিনের ভিন্নতা বামহাতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। এটা মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে।</p> <p>এছড়া মস্তিষ্কের গঠনও ডানহাতি ও বামহাতি হওয়ার জন্য দায়ী। মানব মস্তিষ্কের বাম এবং ডান অংশ (হেমিস্ফিয়ার) শরীরের বিপরীত দিক নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত, ডানহাতি মানুষের ক্ষেত্রে বাম মস্তিষ্ক বেশি সক্রিয় থাকে। বামহাতি মানুষের ক্ষেত্রে ডান মস্তিষ্ক বেশি সক্রিয় হয়। এই পার্থক্যের কারণে বামহাতিদের কিছু ক্ষেত্রে আলাদা ক্ষমতা বা প্রতিভা দেখা যায়, যেমন সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তি। বামহাতিদের মস্তিষ্কের ডানতিকটা বেশি সক্রিয়।</p> <p>বামহাতিদের নিয়ে গবেষণা করেছেন নেদারল্যান্ডসের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর সাইকোলিঙ্গুইস্টিক্সের গবেষক ড. ক্লাইড ফ্রাঙ্কস। তিনি বলেন, ‘সাধারণত মানুষের মস্তিষ্কের অংশগুলো বিভিন্ন কাজ নির্ধারণ করে, যেমন অঙ্গের নড়াচড়া। মস্তিষ্কের বাম অংশ ভাষা নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলো ডানহাতি হওয়ার প্রবণতা তৈরি করে।’</p> <p>গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাব শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থার সময় টেসটোসটেরন নামের হরমোনের উচ্চ মাত্রা শিশুর বামহাতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।</p> <p>গর্ভাবস্থায় সময় শিশুর অবস্থান, প্রসবের জটিলতা বা অন্যান্য শারীরিক প্রভাবও শিশুর বামহাতি হওয়ার কারণ হতে পারে। এছাড়া, কিছু গবেষণায় বলা হয়, শিশুর আশপাশের পরিবেশ ও শেখার ধরণও ভূমিকা রাখে।</p> <p>বামহাতিদের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন, বামহাতি মানুষেরা সাধারণত শিল্প, সংগীত, এবং লেখালেখির ক্ষেত্রে বেশি প্রতিভাবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ তাদের মস্তিষ্ক সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মস্তিষ্কের ডানদিকটা বেশি সক্রিয়।</p> <p>অনেক বামহাতি মানুষ ক্রিকেট, টেনিস, বা বক্সিং-এর মতো খেলায় অসাধারণ পারফরম্যান্স করেন। কারণ তাঁরা প্রতিপক্ষের থেকে ভিন্ন স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করতে পারেন।</p> <p>বামহাতি মানুষদের জন্য কিছু কাজ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বেশিরভাগ সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি ডানহাতিদের জন্য তৈরি হয়, এগুলো বামহাতিদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।</p> <p>আগে বামহাতিদের নিয়ে অনেক কুসংস্কার ছিল। অনেকেই ভাবত, বামহাতি হওয়া অস্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে এটি একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। এখন সমাজে বামহাতিদের জন্য অনেক সমর্থন এবং সুবিধা তৈরি হয়েছে।</p>