<p style="text-align:justify">অটোপাস কিংবা পরীক্ষাভীতি নয়, প্রকৃত মেধাবী হোক আমাদের শিক্ষার্থীরা। তৈরি হোক সৃজনশীল নতুন প্রজন্ম। মেধার শক্তিতেই আমরা অর্জন করব বিশ্ব নেতৃত্ব। আমাদের আগামী প্রজন্ম হবে আরো বেশি মেধাবী ও সৃজনশীল। এমন প্রতিপাদ্য নিয়ে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ কুলাউড়া উপজেলা শাখার আয়োজনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে নবীন চন্দ্র সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত সভায় বসুন্ধরা শুভসংঘ কুলাউড়া উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি আবুল কাশেম ওসমানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন রিপনের পরিচালনায় প্রধান আলোচক ছিলেন- ইয়াকুব তাজুল মহিলা ডিগ্রি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্য। </p> <p style="text-align:justify">এ সময় বক্তব্য দেন-নবীন চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমির হোসেন, সিনিয়র শিক্ষক মো. সেলিম আহমদ, সহকারী শিক্ষক সোহেল আহমদ, উপজেলা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল বারী সোহেল, কালের কণ্ঠ প্রতিনিধি ও শুভসংঘের উপদেষ্টা মাহফুজ শাকিল প্রমুখ। সভায় নবীন চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।</p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, অটোপাসের প্রত্যাশা যারা করে, তারা নিজেরাই অজান্তে নিজেকে ফাঁকি দেয় এবং নিজেকে দুর্বল করে। আমি এই এনসি স্কুল থেকে পড়াশোনা করে লন্ডন থেকে সাংবাদিকতায় ডিগ্রি নিয়েছি। ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে সমাজবিজ্ঞান (সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমাজবিজ্ঞানের) ওপর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছি। তোমরা (শিক্ষার্থীরা) কি এ রকম হতে চাও না? সবাইকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এ রকম হতে হলে অটোপাস চিন্তা মাথা থেকে এখনই সরাতে হবে। </p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, অটোপাস খুব সহজ। বলাও যায়, অটোপাস নিয়ে পাস করলে তোমার যোগ্যতা যখন সঠিকভাবে যাচাই হবে না। একসময় আসবে, তখন তোমার যোগ্যতা সম্পর্কে তুমি হয় ভুল বুঝবে না হয় বুঝবে না। পড়ালেখায় আমরা কোনো ধরনের ফাঁকি দেব না, কোনো অনুরোধ করব না, অনুরোধ করে অটোপাস নেব না। যদি অটোপাস নেই, তাহলে আমাদের শিক্ষা, আমাদের চিন্তা, সৃজনশীলতা- অর্থাৎ সৃষ্টিশীলতা যেটি আছে-সেটি সঠিকভাবে মূল্যায়ন না হলে আমরা আমাদেরকে জানব না। আর আমরা আমাদের না জানলে আমরা দেশ, জাতি এবং পৃথিবীর মানুষের জন্য যোগ্য হতে পারব না। </p> <p style="text-align:justify">বক্তব্যের শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আমরা কি অটোপাসের পক্ষে না বিপক্ষে? তখন উপস্থিত শিক্ষার্থীরা হাত তুলে অঙ্গীকার করেন আমরা অটোপাস চাই না। প্রকৃত মেধার ভিত্তিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।</p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অটোপাস এখন একটি প্রবণতায় চলে এসেছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্ররা অটোপাস নিয়েও আন্দোলন করছে। এই অটোপাসের কারণে আমাদের যে সৃজনশীলতা, আমরা আগামী দিনের যে মেধাবী জাতি চাচ্ছি, তারা কি তাদের পর্যাপ্ত মেধা, সৃজনশীলতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে তাদের শিক্ষাক্রম শেষ করে পরবর্তী শ্রেণিতে যেতে পারছে। নাকি তাদের শিক্ষাব্যবস্থা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে? সরকার, শিক্ষাবিদ এবং আমাদের সবাইকে শিক্ষার্থীদের অটোপাস মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে, কারণ এই মনোভাব জাতির জন্য মোটেও কল্যাণ বয়ে আনবে না।</p> <p style="text-align:justify">তারা আরো বলেন, অটোপাসের মধ্যে দিয়ে মেধার কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। হয়তো কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের বিশেষ কায়দায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মেধাবী করতে পারছে। কিন্তু মেধার কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে তাদের মাঝে শিখন ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। যেটা ভবিষ্য জীবনে তার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।</p> <p style="text-align:justify">শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তারা বলেন, সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য পড়াশোনা নয়। প্রকৃত মেধার জন্য পড়াশোনার করতে হবে। তোমরা সব সময় শিখন কার্যক্রমে থাকবে, পাঠ ও সিলেবাস সম্পন্ন করবে। শিখিয়ে অর্জিত জ্ঞান ও যোগ্যতা নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে যাবে। যদি অটোপাস নিয়ে পাস করো তাহলে শুধু একটি সার্টিফিকেট পাবে, কিন্তু এই সার্টিফিকেটের অর্জন কি তোমাদের বাস্তব জীবনে কোনো কাজে লাগাতে পারবে? প্রতিযোগিতার বাজারে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা এই অটোপাস সার্টিফিকেট কোনো কাজে দিবে না। এই অটোপাসকে আমরা কেউই সমর্থন করি না। যারা এই সনদ অর্জন করবে, তারা ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক হোঁচট খাবে। নিজের জন্য হলেও জ্ঞানার্জন করে তোমার জীবনকে সুন্দরভাবে গড়তে হলে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রকৃত মেধা অর্জন করতে হবে। অটোপাস ধারণা থেকে শিক্ষার্থীদের ফিরে আসতে হবে। বসুন্ধরা শুভসংঘ এটা নিয়ে জাতীয় জনমত তৈরি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বক্তারা।</p> <p style="text-align:justify"> </p>