<p>বসুন্ধরা শুভসংঘ অনেক আগে থেকেই আর্তমানবতার সেবায় বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, যা প্রতিবছর সারা দেশের জেলা-উপজেলায় বসুন্ধরা শুভসংঘের কমিটির মাধ্যমে করে থাকে। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবছর হাজার হাজার বৃক্ষ রোপণ করা হয়। দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী এবং পড়ালেখার বাইরে প্রতিভা আছে এমন উদীয়মান কিশোর, তরুণ ও তরুণীদের শিক্ষাবৃত্তি ও ক্রীড়াবৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে এবং দরিদ্র অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সেলাই মেশিন দেওয়া হয়ে থাকে।</p> <p>সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় এই রকম একজন প্রতিভার নাম মৌসুমী খাতুন। সে উল্লাপাড়া হামিদা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্টে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং উদীয়মান নারী ফুটবলার হিসেবে মৌসুমী খাতুন এখন অনন্য উচ্চতায়। তার দরিদ্র পরিবার সরকারি আবাসন প্রকল্পে বাস করে। আর্থিক অনটনে মেয়ের লেখাপড়া ও খেলাধুলায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য তাদের ছিল না। এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্ন সময়ে আর্থিক অনুদানসহ অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছে। এতে দরিদ্র পিতা-মাতা অনেক খুশি এবং তারা বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।</p> <p>মৌসুমীর বাবা রফিকুল ইসলাম একজন ভ্যানচালক এবং মা রুনা খাতুন একজন গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে মৌসুমী তৃতীয়। অভাবের সংসারে বড় দুই বোনের আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। মৌসুমী মেধাবী হওয়ায় তার বাবা-মা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন।</p> <p>সরেজমিনে মৌসুমী খাতুনের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের অভাবের সংসারে মেয়েকে লেখাপড়ার খরচ দেওয়াই কঠিন, সেখানে খেলাধুলা বা অন্যান্য বিষয়ে উপযুক্ত ট্রেনিং, খেলার উপকরণ ইত্যাদি দিয়ে সহযোগিতা করা অসম্ভব। এ অবস্থায় বসুন্ধরা শুভসংঘের মহান উদ্যোগে তাদের মেয়ের একটা সুন্দর ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করব, এভাবেই বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের পাশে থাকবে, যাতে আমার মেয়ে বড় কিছু হয় এবং স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে পরিবারের কষ্ট দূর করবে।</p> <p>শিক্ষার দায়িত্ব নেওয়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মৌসুমী খাতুন বলেছে, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাকে প্রতি মাসে এই শিক্ষার খরচ দেওয়ার জন্য। আগে আমার বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমাকে পড়াশোনা করাতেন। আমাকে তেমন কিছু দেওয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু পড়াশোনার জন্য অনেক চিন্তা করত যে কখন স্কুলের বেতন দেবো। বসুন্ধরা শুভসংঘের মাধ্যমে আমাকে যে শিক্ষাবৃত্তি প্রতি মাসে দিচ্ছে, তা পেয়ে আমি অনেক খুশি। আমার বাবা দিনমজুর এবং ভ্যান চালিয়ে সাতজনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। আমরা উল্লাপাড়া এনায়েতপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকি। আমাদের কোনো বাড়ি-ঘর নেই। আমি বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেন বসুন্ধরা শুভসংঘের সহযোগিতা নিয়ে অনেক দূর যেতে পারি।’</p> <p>উল্লাপাড়া গার্লস ফুটবল একাডেমির ট্রেইনার রঞ্জু বলেন, ‘মৌসুমী আমাদের ফুটবল একাডেমির গর্ব এবং তার বর্তমান পারফরম্যান্স এবং প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে ভালো কিছু উপহার দেওয়া সম্ভব। আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বসুন্ধরা শুভসংঘ যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী যে ভবিষ্যতে এভাবে ভালো খেলোয়াড় এবং শিক্ষার্থী তৈরি হবে।’</p> <p>উল্লাপাড়া হামিদা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মৌসুমী আমাদের প্রতিষ্ঠানের গর্ব। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় আমরা প্রতিষ্ঠান থেকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করে থাকি। এখন বসুন্ধরা শুভসংঘের সাহায্যের কারণে মৌসুমীর মতো দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হবে। আমি আশা করি, তাদের এই মহান কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’</p> <p>বসুন্ধরা শুভসংঘের উল্লাপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক কায়েস বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ অনেক আগে থেকেই আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে থাকে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকাশে বরাবরই বসুন্ধরা শুভসংঘ সহায়তামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে, যার মধ্যে আর্থিক অনুদানও অন্তর্ভুক্ত। আমরা সব সময়ই চেষ্টা করে থাকি, যাতে আশপাশে অবহেলিত প্রতিভার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখা যায়। শুধু মৌসুমী নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মেধাবী ও প্রতিভাবান শিক্ষার্থী ও তরুণসমাজকে এগিয়ে নিতে বসুন্ধরা শুভসংঘের কাজ অব্যাহত থাকবে।’</p> <p>বাংলার আনাচকানাচে এমন অসংখ্য প্রতিভা ও মেধা যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতার অভাবে ঝরে যায়। বসুন্ধরা গ্রুপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধ্যের মধ্যে যতটা সম্ভব এ ধরনের প্রতিভা বিকাশে সাহায্য করা। শিক্ষা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি খেলাধুলা ও মনবসেবায় বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তারা এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তিগত সহায়তা ও সমর্থন পেলে এভাবে অগণিত অবহেলিত উদীয়মান তরুণসমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।</p>