অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক সংকটে বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত দেশটি ইতোমধ্যেই নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। বাজারে নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য। ঘরে খাবার নেই, টাকা নেই, চাকরি নেই, বিদ্যুত নেই, জ্বালানি নেই-- চারদিকে শুধু নেই আর নেই! পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, এশিয়া কাপের আয়োজক হয়েও সেই টুর্নামেন্ট নিজেদের দেশে আয়োজন করতে পারেনি।
বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় উৎসবের রাত (ছবি)
অনলাইন ডেস্ক

.jpg)
উৎসব হবে নাই বা কেন? শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দল তো এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গতরাতে তারা পাকিস্তানকে ২৩ রানে বিধ্বস্ত করে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।
অথচ, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অনভিজ্ঞ তরুণদের নিয়ে গড়া এই দলটিকে কেউ পাত্তাই দেয়নি।
.jpg)
কিন্তু এরপরই বদলে যায় শ্রীলঙ্কা দল। বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারিয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করে ফেলে। তাদের জয়ের পেছনে কি বাংলাদেশের অবদান নেই?
গ্রুপ পর্বের ওই ম্যাচের আগে খালেদ মাহমুদ সুজন তো বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কায় তিনি কোনো বোলারই দেখেন না।
.jpg)
এরপর বাংলাদেশকে হারিয়ে মহীশ থিকশানা বলেছিলেন, বিশ্বমানের পারফর্মার দরকার নেই; ১১টা ভাই যথেষ্ট।
সেই ১১ টা ভাই মিলেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে এনে দিল এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব। নানা সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় নেমে এলো উৎসবের রাত।
দুবাইয়ে শ্রীলঙ্কার জয় নিশ্চিত হতেই কলম্বোর রাজপথে নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ।
শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বলেছিলেন, তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চান। শেষ পর্যন্ত কথা রেখেছেন শানাকা এবং তার দল।
সম্পর্কিত খবর

এখন তো আমি বাংলাদেশেরই হয়ে গেছি
রানা শেখ, হবিগঞ্জ থেকে

ওসমানী বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নিয়ে কালো রঙের প্রাডো গাড়িটা ছুটতেই একটু দম ফেলার ফুরসত মিলল হামজা চৌধুরীর। এর আগে সিলেটে নামার পর থেকে পুরো সময়টাই তো মানুষের ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন বাংলাদেশের হয়ে মাঠ দাপানোর অপেক্ষায় থাকা এই ফুটবলার।
হামজা এবং তাঁর পরিবারের গন্তব্য হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানার স্নানঘাট গ্রামের নিজ বাসভবনের পথে ছুটতে থাকা গাড়ি অবশ্য বিমানবন্দর ছেড়ে আসার ৪০ মিনিট পর আচমকা এক যাত্রাবিরতিও নিল। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে থেমে গেল হামজাকে অনুসরণ করা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) একটি গাড়িও।
একই সমান্তরালে অন্য একটি গাড়িতে থাকা কালের কণ্ঠের প্রতিবেদকেরও না থেমে উপায় কী! নেমে জানা গেল, হামজা এবং তাঁর পরিবারের জন্য খাবারদাবার তোলা হয়েছিল বাফুফের গাড়িতে। সন্তানের ক্ষুধা লেগে যাওয়ায়ই ক্ষণিকের যাত্রাবিরতি নেওয়ায় হামজাকে এই সুযোগে পাওয়া গেল একান্তে। ক্রীড়া সাংবাদিক পরিচয় দিতেই সিলেটি টানের বাংলায় হামজার জিজ্ঞাসা, ‘ভালো আছেন?’ কুশল বিনিময় থেকেই এগোতে শুরু করে আলাপ। আলাপে আলাপে বাংলাদেশের হয়ে ক্যারিয়ার শুরুর লগ্নে তাঁর ভাবনাই শুধু নয়, জানা হয় হবিগঞ্জের দূর গ্রামে হামজার ‘চ্যারিটি’র গল্পও।
প্রশ্ন : এর আগেও আপনি বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু এবার এলেন বাংলাদেশের হয়ে খেলতে। কেমন লাগছে?
হামজা চৌধুরী : এখানে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। এখানে আমি বারবার আসতে চাই।
প্রশ্ন : বিমানবন্দরে এত এত ভালোবাসা পেলেন। কথাই বলতে পারলেন না...।
হামজা চৌধুরী : সত্যি, অনেক ভালো লাগা কাজ করছে।
প্রশ্ন: প্রতিদান কিভাবে দিতে চান?
হামজা চৌধুরী : আমার লক্ষ্য থাকবে বাংলাদেশকে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে নিয়ে যাওয়া। এরপর এই দেশের ফুটবলের শক্ত ভিত গড়ে দিতে চাই। সবার মধ্যে ভালো করার মানসিকতা ঢুকিয়ে দিতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব। আশা করি, আমি সাহায্য করতে পারব।
প্রশ্ন : ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ। জেতার ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?
হামজা চৌধুরী : ইনশাআল্লাহ আমরা জিতব। কোচের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা যদি ঠিকঠাক খেলতে পারি তাহলে জিতে ফিরব। সেই বিশ্বাস আমার আছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ফুটবলাররা আপনার সঙ্গে খেলার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। এটা কি আপনি জানেন?
হামজা চৌধুরী : হ্যাঁ, শুনেছি। তাঁদের সঙ্গে খেলতে আমি নিজেও উত্সুক হয়ে আছি। আশা করি, আমরা সবাই মিলে ভালো একটা ফলই এনে দিতে পারব।
প্রশ্ন : পুরো পরিবার নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের জার্সিতে খেলবেন বলে তারা কতটা রোমাঞ্চিত?
হামজা চৌধুরী : অনেক রোমাঞ্চিত। আগে তো শুধু আমি একা এসে গ্রামে ঘুরে যেতাম। এবার আমার স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। ওরা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে চেয়েছে। যদিও আমরা খুব কম সময় নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন : শুনেছি, আপনার অর্থায়নে গ্রামে একটি মাদরাসা চলে। কোন ভাবনা থেকে এই উদ্যোগ?
হামজা চৌধুরী : আল্লাহ খুশি হবেন বলে। আমার খুব ভালো লাগে। বাচ্চাদের আমি খুব ভালোবাসি।
প্রশ্ন : এখন তো রোজার মাস চলছে। কিভাবে ফিটনেস ধরে রাখার কাজ করেন?
হামজা চৌধুরী : বিশেষ কিছু করা হয় না। সাধারণত যা যা করি, এখনো তা-ই করি। ঘুম, নামাজ, অনুশীলন ও ম্যাচ; খেলেই নিজেকে ফিট রাখি।
প্রশ্ন : আপনার দল শেফিল্ড ইউনাইটেড প্রিমিয়ার লিগে ওঠার পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে। কতটা আশাবাদী আপনি?
হামজা চৌধুরী : এই দলে খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। খুব ভালো কাটছে আমার সময়। ইনশাআল্লাহ, আমরা ধারাবাহিকতা ধরে রেখে প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পারব।

সাকিবের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে চান না হামজা
ক্রীড়া ডেস্ক

হামজা চৌধুরী বাংলাদেশে আসার আগে গত কয়েক দিন একটা আলোচনা সামাজিক মাধ্যমে তুঙ্গে উঠেছিল। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় তারকা কে? সাকিব আল হাসান, নাকি হামজা? এই আলোচনায় দুই ভাগ হন ভক্ত-সমর্থকরা।
আজ বাংলাদেশে আসায় হামজার কাছে সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিল। নিজেকে এই তুলনার বাইরেই রেখেছেন বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে সাকিবের অবদান কত সেটা মাথায় রেখেই হামজা এমনটা যে বলেছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর তিনি এখনো বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচই খেলেননি। আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে প্রথমবার বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নামবেন তিনি।
বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্বপ্ন দেখেছিলেন ইংল্যান্ডের জার্সিতে আন্তজার্তিক ক্যারিয়ার রাঙানোর।

স্নানঘাটে ফিরে বন্ধুদের কাছে শৈশবের গল্প শুনছেন হামজা
ক্রীড়া ডেস্ক

বাংলাদেশে এসে মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন হামজা চৌধুরী। তাকে বরণ করে নিতে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গ্রামের বাড়িতে মানুষের ঢল নেমেছে। হবিগঞ্জের বাড়িতে এত মানুষের সমাগম দেখে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না তিনি।
মানুষের ভালোবাসা নিয়ে হামজা বলেছেন, ‘আমি কখনো কল্পনা করিনি এত মানুষ এখানে আসবে।
ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত ফুটবলের পাঠ নিলেও হামজার শুরুটা হবিগঞ্জের গ্রাম স্নানঘাটের দেওয়ান বাড়ির উঠানেই হয়েছিল। শৈশবে এখানেই বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট-ফুটবল খেলে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
শৈশবের সাথিরা এসে পুরনো দিনের গল্প শোনাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন হামজা। ২৭ বছর বয়সী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার বলেছেন, ‘বাড়ির উঠানে আমি অনেক খেলেছি। যাদের সঙ্গে খেলতাম তারা এসে আমাকে এখন সেসব দিনের কথা বলছে।
আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলবেন হামজা। সেদিন ৮ নম্বর জার্সি পরে খেলতে চান তিনি। প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নিজের অভিষেক রাঙাতে চাওয়া হামজা বলেছেন, ‘৮ নম্বর জার্সি আমার পছন্দ। আমরা ভারতের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি না।

বাংলাদেশের হয়ে ৮ নম্বর জার্সি পরে খেলতে চান হামজা
ক্রীড়া ডেস্ক

বাংলাদেশের হয়ে খেলতে আজ সকালে দেশে এসেছেন হামজা চৌধুরী। বরণ করে নিতে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাফুফের কর্মকর্তারা তো ছিলেনই সঙ্গে তাকে দেখতে হাজারো ভক্ত-সমর্থক ভিড় জমায়।
হামজার দেশে ফেরা কাভার করতে উপস্থিত হন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাসহ প্রচুর ইউটিউবার। বিমানবন্দরে নেমেই হামজা তার অভিষেক ম্যাচের প্রতিপক্ষ ভারতকে হারানোর হুংকার দিয়ে বলেছেন, ‘আমাজিং আমাজিং, দেশে ফিরে ভালো লাগছে।
আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ে হতে যাওয়া ম্যাচে কত নম্বর জার্সি নিয়ে মাঠে নামবেন হামজা তা নিয়ে ইতিমধ্যে কৌতূহল শুরু হয়ে গেছে। আজ তার পছন্দের জার্সি নম্বর জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তরে জানান, ৮ নম্বর জার্সি পরে খেলতে চান তিনি।
বর্তমানে ৮ নম্বর জার্সি পরে খেলছেন চন্দন রায়। তার আগে বাংলাদেশের হয়ে এই নম্বরে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এমন ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম মামুনুল মামুন-এনামুল হক-সাদ উদ্দিনরা।