<p> ফুটবলের দর্শকরা আবার মাঠমুখী হচ্ছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ফুটবলে দুর্দান্ত কিছু গোল নিয়ে চর্চা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে ভিড় বাড়ছে ফুটবল গ্যালারিতে, অযুত উৎসুক দর্শক মুগ্ধ হয়ে খেলা দেখছেন টিভিতে। ফুটবলটা এই মুহূর্তে যে আশার হাওয়ায় ভাসছে, এর শুরুটা শেখ মোরসালিন নামের এক তরুণের কাছ থেকে অসাধারণ সব গোলে।</p> <p>গোল দিয়েই দেশের ফুটবলকে যেন আবার নতুন করে বিজ্ঞাপিত করেছেন মোরসালিন। তাঁর থেকে শুরু, শেষ সাগরিকায়। না, ভুল হলো, বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের দুই ফুটবলার সাবিনা খাতুন ও সানজিদা আক্তার ভারতের লিগে মুখোমুখি হচ্ছেন দেখে যাঁরা গতকাল চোখ রেখেছিলেন কিকস্টার্ট-ইস্ট বেঙ্গল ম্যাচে তাঁরা আরো একবার যেন পেয়েছেন অমৃতের স্বাদ। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে ফ্রি কিকটা নিয়েছেন সানজিদা। কিকস্টার্ট গোলরক্ষক বলের গতিবিধি বুঝে একেবারে লাইনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু অত দূর থেকে বল তাঁর হাত আর ক্রসবারের সামান্য ফাঁক দিয়ে ঢুকে যায় জালে। আগের দিন ভারতের বিপক্ষে সাগরিকার জয়সূচক গোলটি দেখে জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের উচ্ছ্বাস, ‘এই গোল সাগরিকা ছাড়া কেউ করতে পারত না। গত লিগে ও যখন এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হয়ে খেলে তখন এমন দুটি গোল দেখেই ওকে আমরা জাতীয় দলে ডেকেছিলাম। তখনকার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর (পল স্মলি) কিন্তু ওর ফিটনেস নিয়ে আপত্তি করেছিল। কিন্তু এটাই সাগরিকা, এটাই ওর ধরন। ও গতি দিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেঙেচুরে গোল করে বেরিয়ে আসত। তাই বলতে হয়, আমাদের স্থানীয় কোচদের চোখও ভুল করে না।’</p> <p>সাবিনার পর সিরাত জাহান স্ট্রাইকার হিসেবে বড় ভরসা হয়ে উঠেছিলেন মেয়েদের জাতীয় দলে। সেই সিরাতের খেলা ছাড়ার পর তাঁর শূন্যতা পূরণেই যেন উঠে আসছেন সাগরিকা। এই তরুণীর ঝলকের আগের দিনই ছিল মিনহাজুল আবেদীন বাল্লুর চমক। কিংসের মাঠে তাঁদের অপরাজেয় থাকার রেকর্ড ভেঙে দিয়ে মোহামেডানের এই মিডফিল্ডার যে গোলটি করেছিলেন, তা নিয়েও বিস্ময়ের শেষ ছিল না। মিনহাজ নিজেও বলেছেন, শুরুতে পোস্টে মারার চিন্তা তাঁর ছিল না। সঙ্গী না পেয়েই সুযোগটি নেন। আর সেটিই আনিসুর রহমানের মতো গোলরক্ষককেও বোকা বানিয়ে মৌসুমের অন্যতম সেরা গোলের দাবিদার এখন। ক্যারিয়ারে অনেক অসাধারণ গোল করা মোহামেডানের বর্তমান কোচ আলফাজ আহমেদেরও মত তাই,  ‘এ ধরনের গোলই একজন ফুটবলারকে চেনায়।’</p> <p>মিনহাজের গোল সৌন্দর্য, কার্যকারিতায় এএফসি কাপে মাজিয়ার বিপক্ষে করা মিগেল ফিগেইরার গোলটা মনে করিয়ে দেয়। সেই ম্যাচেও বক্সের অনেক বাইরে থেকে এমন জাদুকরী এক গোলে কিংসকে জিতিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। তবে এবারের ঘরোয়া মৌসুমে শুধু মিনহাজই নন, স্থানীয় খেলোয়াড়দের পা থেকে এমন অসাধারণ গোল আরো এসেছে। লিগের প্রথম ম্যাচেই ব্রাদার্সের বিপক্ষে রাকিব হোসেনের গোলটি ছিল তেমনই। তৃতীয় ম্যাচে আবার ফর্টিসের বিপক্ষে বক্সের বাইরে থেকে করা এই ফরোয়ার্ডের গোল তাঁকে ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পাইয়ে দেয়। সেই পুরস্কার আবার দিতে এসেছিলেন রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির। গতকাল কিংবদন্তি এই ফুটবলার বলছিলেন, ‘ফুটবলের মান পড়ে গিয়েছিল, অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে গত কয়েক বছরে সেটা আবার ভালোর দিকে। এ কারণে ভালো কিছু গোলও আমরা দেখতে পাচ্ছি। গত সাফ ফুটবল থেকেই এই পরিবর্তন আমার চোখে পড়ছে।’ </p> <p>জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার জন্য স্বস্তির যে তাঁর ফরোয়ার্ড লাইনে জায়গা পেতে রাকিবের পাশাপাশি নিয়মিত গোল পেয়েছেন ফয়সাল আহমেদ, সাজ্জাদ হোসেন, জাফর ইকবাল মাহবুবু রহমান সুফিল। চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে পাল্টা আক্রমণে করা গোলটা ক্ষিপ্রগতির সুফিলের সেরা সময়টাই মনে করিয়ে দিয়েছে। পুলিশের বিপক্ষে আবাহনীর মিডফিল্ডার মোহাম্মদ হৃদয়ের গোলটিও নয়ন-জুড়ানো। বিদেশিদের পাশাপাশি শুধু দেশের ফুটবলাররাও এবার নিয়মিত গোল পাচ্ছেন তা নয়, ভালো গোলে প্রশংসাও কুড়িয়ে নিচ্ছেন।</p>