<p>জাতীয় দল যখন ওয়ানডেতে আড়াই শ রান করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং তা নিয়ে হতাশার বিপরীতে কিনা ৪০০ রানের গল্প শোনাতেই বেশি আগ্রহী হলেন মোহাম্মদ আশরাফুল! এ জন্য যে অন্ধকার বর্তমান পেছনে ফেলে আলোকিত ভবিষ্যতে পা ফেলা অসম্ভব বলে মনে হয় না তাঁর কাছে। অবশ্য সেটি সম্ভব করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে কি না, একই সঙ্গে তা নিয়েও সংশয় আছে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়কের মনে, ‘আলোচনা তো অনেক হয়, কিন্তু সমাধান তো হতে দেখি না। দল খারাপ করলে ভালো উইকেটে খেলার ব্যবস্থা করার দাবি ক্রিকেটাররাও তোলে। সবাই একমতও হয়। অথচ দিনের পর দিন চলে যায়, খেলার জন্য ভালো উইকেট আর দেওয়া হয় না।’</p> <p>তা দেওয়া হলে সেই এক হাহাকারে নতুন করে বাতাসও ভারী হয় না। গত বছর ১১ নভেম্বর পুনেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। চোটে ছিটকে পড়া সাকিব আল হাসানের জায়গায় যে ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন।</p> <p>বড় ব্যবধানে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটকে। বিশ্ব পর্যায়ে কিংবা দেশের বাইরে ব্যাটারদের ভালো করার শর্ত হিসেবে মানসম্মত উইকেটে খেলার বন্দোবস্তের আকুতি জানিয়েছিলেন তিন সংস্করণের বর্তমান অধিনায়ক। কিন্তু ঠিক এক বছর পর সেই ১১ নভেম্বরে আফগানিস্তানের কাছে শারজায় ওয়ানডে সিরিজ হারার সময় ক্রিকেটারদের দাবি কানে তোলার কোনো লক্ষণ নেই।<br /> দাবি শুনলে ভিন্ন কিছুও যে এত দিনে হতে পারত, এর নমুনা উপস্থাপন করলেন আশরাফুল।</p> <p>আসলে শোনালেন ৪০০ রানের গল্প, ‘সমস্যা হলো আমরা বেশির ভাগ ম্যাচ মিরপুরে খেলি। এখানে না হোক, ভালো উইকেট বাংলাদেশেও আছে। একটি উদাহরণ দিই। চট্টগ্রামে বিসিবি এইচপি ও বাংলাদেশ টাইগার্সের মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচ হয়েছিল (গত জুলাইয়ে)। এক দিনের সেই ম্যাচে এইচপি ৪০০ রান তুলেছিল (৫ উইকেটে ৪০৩)।</p> <p>ভালো উইকেট দেওয়া হলে আমাদের ব্যাটাররাও কিন্তু বড় রান করতে জানে।’ ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন এইচপির তিনজন ব্যাটার।<br /> এমন সুযোগ নিয়মিত পান না ক্রিকেটাররা। সে জন্যই নিজেদের পছন্দের সংস্করণ ওয়ানডেতেও নাজুক অবস্থা বাংলাদেশের। আশরাফুলের তাই মনে হচ্ছে, ‘গত বিশ্বকাপ থেকে ওয়ানডের পারফরম্যান্সও খারাপ হচ্ছে। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির মতো এই সংস্করণেও অবস্থা সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। ওয়ানডেতে জেতার সীমাটা ৩০০ থেকে ৩২০ রানে চলে গেলেও আমরা এখনো ২৫০-র মধ্যেই আছি। মিরপুরে বেশি খেলাই এর কারণ। এখানে ২৩০ রান করেও ১০ ম্যাচের ৮টিতে জেতা সম্ভব। এ জন্য আমরা অন্যান্য দলের চেয়ে ৭০ থেকে ৮০ রান পিছিয়ে আছি।’</p> <p>আশরাফুলের দৃষ্টিতে এগিয়ে যাওয়ার একাধিক শর্তের একটি এ রকম, ‘আপাতত মিরপুর থেকে খেলা সরিয়ে এখানকার কালো মাটির উইকেট বদলাতে হবে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। এই সময়টায় যেসব ভেন্যুতে ভালো উইকেট আছে, ক্রিকেটারদের সেখানে নিয়ে বেশি খেলানো হোক।’ আন্তর্জাতিক ভেন্যু বাড়ানোর প্রস্তাবও আছে তাঁর, ‘চট্টগ্রাম ও সিলেট তো আছেই। এই দুই ভেন্যুর উইকেট মিরপুরের চেয়ে অনেক গুণে ভালো। এর সঙ্গে রাজশাহীর জন্য আন্তর্জাতিক ভেন্যুর স্বীকৃতি আনা যেতে পারে। ওখানে এখন ভালো হোটেল হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে ফ্লাইটও অল্প সময়ের। আর উইকেট? আমি খেলেছি বলে জানি। দুর্দান্ত উইকেট। বাউন্স থাকায় বোলাররা যেমন সুবিধা পাবে, তেমনি ব্যাটারদেরও মনের মতো শট খেলার স্বাধীনতা থাকবে। আমাদের বোলিং বিভাগ এখন বেশ ভালো। ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করার মতো বোলারও আমরা পেয়ে গেছি। সমস্যা হলো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছেই না। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে অন্য কোথাও বেশি ম্যাচ খেলানো জরুরি।’ কিন্তু লম্বা বিরতিতে একই পরামর্শ আবার শোনা যাবে না তো? সংশয় থাকছেই। কারণ গত এক বছরেও প্রতিকার জানা ছিল, কিন্তু সমাধান মেলেনি।</p>