ভারত ও নিউজিল্যান্ড এক দশক পর ফের মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা শুরু করেছে, যা আগে ভেঙে গিয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সন পাঁচ দিনের ভারত সফরের অংশ হিসেবে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। দুই দেশ আগামী মাসে আলোচনার প্রথম পর্ব শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
এ ঘোষণাকে ভারত-নিউজিল্যান্ড অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন লুক্সন।
বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলারের নিচে। লুক্সন বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের জন্য ভারতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে এবং আগামী ১০ বছরে নিউজিল্যান্ডের রপ্তানি মূল্য দ্বিগুণ করতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
লুক্সন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এমন একটি ভূ-রাজনৈতিক সম্মেলনে মূল বক্তা হিসেবে যোগ দিচ্ছেন, যেখানে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডও উপস্থিত থাকবেন। ভারত পৌঁছনোর পর লুক্সন বলেন, ‘ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।
প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমি আলোচনা করব, আমাদের অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে আমরা একসঙ্গে কিভাবে আরো কাজ করতে পারি।’
মুক্ত বাণিজ্য আলোচনার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ড জানিয়েছে, তারা প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, খেলাধুলা, পরিবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে এবং নয়াদিল্লির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে ‘মূল অগ্রাধিকার’ হিসেবে দেখছে।
অন্যদিকে ১৬ মার্চ ফাইভ আইজের (নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির জোট) প্রতিনিধিরা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের নয়াদিল্লিতে আয়োজিত এক সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন, যেখানে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের স্বার্থের জন্য নিউজিল্যান্ডের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব প্রতিহত করতে চাইছে নয়াদিল্লি। লুক্সনের সফর এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ যে তিনি নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ প্রতিনিধিদল নিয়ে এসেছেন, যা সফরের গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে।
২০১০ সালে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু হলেও বাজার প্রবেশাধিকারের মতো বিভিন্ন ইস্যুতে কয়েক দফা আলোচনা শেষে তা থমকে যায়। নিউজিল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে ভারতের দুগ্ধপণ্য বাজারে আরো প্রবেশাধিকার চাইছে, যা ভারত সাধারণত তার কৃষকদের সুরক্ষার জন্য সংরক্ষিত রাখে। বহু বছর ধরে মুক্ত বাণিজ্যের বিষয়ে সংশয়ী অবস্থানে থাকার পর সম্প্রতি ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার ব্যাপারে আরো উন্মুক্ত হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা ফের শুরুর ঘোষণাটি এমন এক সময় এলো, যখন ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা ফের চালু করেছে। প্রায় ১৬ বছর আলোচনার পর গত বছর ভারত ইউরোপীয় ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের (ইউরোপের চারটি দেশ, যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়) সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়া দুই বছর আগে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল দেশটির এক রপ্তানি সংগঠনকে সতর্ক করে বলেন, ‘তাদের সুরক্ষামূলক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে’, কারণ ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
নয়াদিল্লির জন্য এসব বাণিজ্য আলোচনা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২ এপ্রিল থেকে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ কার্যকর হতে যাচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি