<p>আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ‘জটিলতা’র প্রতিবাদে এক দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন জার্মানির ডাক্তাররা। সোমবার জার্মানিজুড়ে প্রায় ১০ হাজার ডাক্তার এই কর্মবিরতি পালন করেন। এতে বন্ধ ছিল ক্লিনিক ও চিকিৎসাসেবা। কিন্তু কর্মবিরতি শুধু সোমবার পালিত হলেও সপ্তাহান্তে (শনি ও রবিবার) এবং সেই সঙ্গে মঙ্গলবারের সাধারণ ছুটির দিন মিলিয়ে টানা চার দিন ব্যাহত হয়েছে চিকিৎসাসেবা। </p> <p>এই পরিস্থিতিতে বিপাকে থাকা রোগীরা বলছে, ডাক্তাররা কৌশল অবলম্বন করে সোমবার কর্মবিরতি পালন করেছেন। রোগীদের একটি সংগঠনের দাবি, ডাক্তারদের এই কৌশলের কারণে দুর্বল ও অসুস্থরা প্রাথমিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে।</p> <p><strong>কী দাবি ডাক্তারদের?</strong><br /> সরকারের বিদ্যমান স্বাস্থ্যনীতি জীবনযাত্রার বাড়তি ব্যয় মেটানোয় সহায়ক নয়, দাবি ডাক্তারদের। একই সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার চাপ তাদের জন্য সার্বিক পরিস্থিতি আরো বেশি জটিল করে তুলছে, বলছেন এই পেশাজীবীরা।   </p> <p>ডক্টর্স ইউনিয়ন (ফিরশোবুন্ড) চেয়ারম্যান ড্রিক হাইনরিশ বলেন, সরকারের নানা বিধি-নিষেধে ডাক্তারদের কার্যালয় পিষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে বিল প্রদান সীমিতকরণের ফলে ডাক্তারদের সার্ভিসকে আরো সীমিত করতে হবে। কারণ এসব তারা একসঙ্গে করে উঠতে পারছেন না। </p> <p>তিনি জানান, রোগীদের সেবা দেওয়ার পরিবর্তে ডাক্তাদের বছরে ৬০ দিন ‘পেপারওয়ার্ক’ করতে হয়। তা ছাড়া বীমা কম্পানিগুলো কত টাকা পর্যন্ত প্রদান করবে সে বিষয়টি সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়ার নীতিরও সমালোচনা করেন তিনি। তার মতে, একাধিক রোগী দেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে এই নীতি।</p> <p>এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, জোট সরকারের স্বাস্থ্য খাতের রাজনীতিবিদদের প্রতি এবং চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের প্রতি এটি পরিষ্কার সংকেত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটেরবাখকে থামতে হবে। তারা বলছে, ‘আমাদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ৩০ বছর ধরে রাজনীতিবিদরা এবং বীমা কম্পানিগুলো আমাদের খরচ কমাতে চাপ দিচ্ছে। আমরা আর এটি করতে পারছি না।’</p> <p>সংগঠনটি আরো জানায়, ডাক্তারের সাক্ষাৎ পেতে রোগীদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় এবং লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। অন্যদিকে জ্বালানিসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বাড়ছে এবং বেতন-ভাতাও বেশি দিতে হচ্ছে।</p> <p><strong>ডাক্তারদের সমালোচনা</strong><br /> দেশজুড়ে ১০ হাজার ডাক্তারের একসঙ্গে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতর কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন এই পেশাজীবীরা। বিশেষ করে যে পদ্ধতিতে তারা কর্মবিরতি পালন করেছেন, তার সমালোচনা করেছেন জার্মান ফাউন্ডেশন ফর পেশেন্ট রাইটসের চেয়ারম্যান অইগেন ব্রিশ।</p> <p>তিনি বলেন, বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে যেকোনো পেশাজীবীই আন্দোলন করতে পারেন। কিন্তু ডাক্তারদের অফিস এভাবে বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বিপাকে পড়েছে রোগীরা। তার মন্তব্য, এমন কর্মবিরতি বীমা কম্পানিগুলোর ওপর বা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওপর কোনো চাপ তৈরি করবে না।</p> <p>তিনি আরো বলেন, অন্য খাতের ফ্রিল্যান্সের বেলায় গ্রাহকদের এভাবে টার্গেট করার কথা চিন্তাই করা যায় না। এর ফলে বিষয়টি পরিষ্কার, স্বাস্থ্যসেবা খাতের রোগীদের মর্যাদা ওই গ্রাহকদের মতোও নয়।</p> <p>এদিকে বেতন বাড়ানোর বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী লাউটারবাখ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, যেই ডাক্তাররা নিয়মিত রোগী দেখেন, তাদের বাৎসরিক আয় গড়ে বছরে প্রায় দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা।</p> <p>উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে বেতন ৩.৮৫ শতাংশ বাড়ার কথা রয়েছে। তবে ডাক্তারদের সংগঠন ফিরশোবুন্ড বলছে, দেশে মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত ওঠানামা করছে। সেই সঙ্গে ডাক্তারদের বাৎসরিক আয়ের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তথ্যের বিরোধিতা করে সংগঠনটি জানায়, করমুক্ত ও ইনস্যুরেন্স কন্ট্রিবিউশন বাদে ডাক্তারদের বাৎসরিক আয় গড়ে ৯৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৫ টাকা।</p>