<p>যুক্তরাষ্ট্রে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পালন করা হয়ে থাকে শ্রমিক দিবস। এই ছুটির আমেজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশটির বেশির ভাগ ভোটারই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ করেন না—এটাই সেখানকার রাজনৈতিক প্রথা। তবে এবার দৃশ্যপট পাল্টেছে। ভোটারদের অনেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নজর রাখতে শুরু করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাগ্য নির্ধারক গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা এর মধ্যে অন্যতম।</p> <p>এই ভোটাররা যখন নির্বাচনে মনোনিবেশ শুরু করছেন, ঠিক তখনই প্রথমবারের মতো বিতর্কে মুখোমুখি হতে চলেছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী মঙ্গলবার ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠেয় গুরুত্বপূর্ণ এই বিতর্কে কয়েক কোটি মানুষের নজর থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনী সমাবেশে স্বস্তিতে প্রচারণা চালানো কমলা হ্যারিসকে এবারই প্রথম ভিন্নরূপে দেখতে চলেছেন এই দর্শকরা।</p> <p>নাটকীয়ভাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সরিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার আগ পর্যন্ত চার বছর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা কমলাকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা ছিল না। সাধারণত দলীয় প্রাইমারিতে (দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার লড়াই) মার্কিন জনগণের সঙ্গে পরিচয় হয়ে থাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের। নিজ রাজ্যে জনপ্রিয় কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে লড়াইয়ে প্রস্তুত নন, এমন প্রার্থীদের এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ছেঁটে ফেলা হয়। এর মাধ্যমে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রচারণা ও বিতর্কের গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা পেয়ে থাকেন।</p> <p>তবে চলতি বছর এর কোনোটিই করেননি কমলা। ২০১৯ সালে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে ছিলেন তিনি। ভোটারদের কাছে নিজের দর্শন স্পষ্ট করতে ব্যর্থ কমলা প্রাইমারি ভোট হওয়ার আগেই সরে দাঁড়ান। তবে এবার মনে হচ্ছে, কমলার এই অস্বাভাবিক অবস্থান তাঁর জন্য শাপেবর হতে পারে।</p> <p>এরই মধ্যে সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে অর্জন এবং গর্ভপাতের মতো বিষয়ে আমেরিকানদের সামনে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে পেরেছেন কমলা। এ ছাড়া নিজেকে একজন নতুন প্রার্থী হিসেবে চিত্রিত করতে পেরেছেন, যদিও বাইডেন প্রশাসনে চার বছর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।</p> <p>এদিকে ট্রাম্প বরাবরই কমলাকে একজন ‘বিপজ্জনক কট্টর উদারপন্থী’ আখ্যা দিয়ে আক্রমণ করে আসছেন। ২০১৯ সালে ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় কমলা যেসব বিবৃতি দিয়েছেন এবং নীতিমালার প্রচার করেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে এই আক্রমণ করে যাচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। এর কারণ হলো—ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করতে দলের কট্টর উদারপন্থীদের সমর্থন প্রয়োজন।</p> <p>তবে এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে দলের সদস্যদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়নি কমলাকে। তাই অতীতের মতো কট্টর উদারনীতি অবলম্বনের প্রয়োজন নেই তাঁর। ২০১৯ সালে ফ্র্যাকিং (খনিজ সম্পদ খনন) এবং বিনা মূল্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিষিদ্ধের পক্ষে ছিলেন কমলা। তবে এবার এই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি।</p> <p>কমলা যদি ২০২৪ সালে প্রাইমারিতে অংশ নিতেন, তাহলে কী প্রতিশ্রুতি দিতেন, তা অবশ্য কেউই জানে না। তবে ট্রাম্প তাঁকে আক্রমণ করার জন্য যেসব কারণ ব্যবহার করছেন, সম্ভবত প্রগতিশীলদের সমর্থন পাওয়ার জন্য তেমন অবস্থান নিতেও পারতেন কমলা। প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যেকোনো সাবেক প্রেসিডেন্টের জন্য ঝুঁকির। আর পাঁচ বছর আগে প্রতিপক্ষের দেওয়া বিবৃতির ওপর নির্ভরশীল থাকা এবং প্রতিপক্ষ ওই নীতি থেকে সরে আসায় ট্রাম্পের এসব আক্রমণ কার্যত ভিত্তিহীন হয়ে পড়েছে।</p> <p>সম্প্রতি কর নিয়ে কমলা যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন, তাতে যেকোনো ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে তাঁর প্রতি সমর্থন বাড়ত। তবে দেরিতে নির্বাচনী লড়াইয়ে আসা কমলার জন্য অবশ্যই নেতিবাচক। কারণ মনোনয়নের জন্য লড়াই করলে সংবাদ সম্মেলন, সাক্ষাৎকার ও বিতর্কের মতো বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতেন তিনি।</p> <p>বাইডেন সরে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত মাত্র একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কমলা। সিএনএনের ওই সাক্ষাৎকারে খুব একটা জেরাও করা হয়নি তাঁকে। তা সত্ত্বেও নির্বাচিত হওয়ার প্রথম দিন কী কাজ করবেন, সে বিষয়ে উত্তর দিতে হিমশিম খেয়েছেন তিনি।</p> <p>সমাবেশ এবং গত মাসের ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন কমলা। তবে আগামী মঙ্গলবারের ৯০ মিনিটের বিতর্কটি হতে যাচ্ছে তাঁর দীর্ঘতম অলিখিত উপস্থিতি।</p> <p>প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে অনেক বেশি অভিজ্ঞ ট্রাম্প কমলাকে ধরাশায়ী করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন এবং তাঁর নীতি ও পরিবর্তনশীল অবস্থান নিয়ে চাপ দেবেন। আর কমলা ভালো করেই জানেন, সর্বশেষ বিতর্কে ধরাশায়ী হয়ে নির্বাচন থেকেই সরে গেছেন বাইডেন। প্রাইমারির চ্যালেঞ্জ পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া কমলা এখন পর্যন্ত ঝামেলা ছাড়াই প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে আগামী মঙ্গলবারের বিতর্কটি তাঁর কঠিন পরীক্ষাই নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।</p> <p><strong>নির্বাচনের পর ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা</strong></p> <p>ব্যাবসায়িক নথিপত্রে ঘুষের তথ্য গোপনের মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের পর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। বিচারক জুয়ান মার্চান গত শুক্রবার সাজা ঘোষণার দিন ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেন।</p> <p>বিচারক জুয়ান মার্চান তাঁর সিদ্ধান্তে লিখেছেন, মামলাটি এমন একটি সাজা শুনানির দাবি রাখে, যা পুরোপুরি বিচারকদের রায়ের ওপর নির্ভরশীল।</p> <p>এদিকে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান নেতা ডিক চেনি আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নিজ দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রিপাবলিকানদের জন্য হুমকি আখ্যা দিয়েছেন তিনি।</p> <p><span style="font-size:16px">সূত্র : বিবিসি</span></p>