<p>চীনে একটি গোপন অস্ত্র প্রকল্প চালু করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য দীর্ঘ-পাল্লার আক্রমণাত্মক ড্রোন তৈরি ও উৎপাদন করতে চীনে এই প্রকল্প চালু করেছে রাশিয়া। একটি ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থার দুটি সূত্র এবং নথি পর্যালোচনা করে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে রয়টার্স বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।</p> <p>একটি নথিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অস্ত্র কোম্পানি আলমাজ-আন্তে এর সহায়ক সংস্থা আইইএমজেড কুপোল স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় চীনে গার্পিয়া-৩ (জি৩) নামের একটি নতুন মডেলের ড্রোন তৈরি করেছে এবং এটির উড্ডয়ন পরীক্ষা করেছে। কুপোল চলতি বছরের শুরুতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে তার কাজের রূপরেখা পাঠিয়েছিল।</p> <p>কুপোল আরো জানায়, তারা চীনের একটি কারখানায় জি-৩সহ অন্যান্য ড্রোন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং ড্রোনগুলো ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ মোতায়েন করা যেতে পারে।</p> <p>কুপোল, আলমাজ-আন্তে এবং রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়টার্সকে বলেছে, তারা এই ধরনের একটি প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানত না। তারা আরো বলেছে,‘ বেইজিং ড্রোন বা মনুষ্যবিহীন এরিয়াল ভেহিকল (ইউএভি) রপ্তানির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়েছে।’</p> <p>লন্ডন-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো ফ্যাবিয়ান হিনজ বলেছেন, ‘চীন থেকে রাশিয়ায় ইউএভি সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে তা একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।’</p> <p>তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চীন যা সরবরাহ করেছে সেদিকে দৃষ্টি দিলে দেখবেন, সেগুলো বেশিরভাগই ছিল দ্বৈত-ব্যবহারের পণ্য। এগুলো ছিল উপাদান এবং উপ-উপাদান, যা অস্ত্র তৈরির প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যেতে পারে। এতোদিন পর্যন্ত এমনটিই জানা গেছে। তবে আমরা যা সত্যিই দেখিনি, তা হচ্ছে নথিভুক্তভাবে গোটা অস্ত্র ব্যবস্থা স্থানান্তর।’</p> <p>ওয়াশিংটনের থিংকট্যাংক ‘দ্য সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি’ (সিএনএএস) গবেষক স্যামুয়েল বলেন, রাশিয়ার যুদ্ধে সহায়তা করে চীন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে নিজেকে ফেলতে চাইবে না। ফলে রাশিয়ার সামরিক ড্রোন উৎপাদনে চীন সহায়ক ভূমিকা পালন করছে সেটি নিশ্চিত হতে আরও তথ্য জানা প্রয়োজন।</p> <p>এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ কেজি (১১০ পাউন্ড) পেলোডসহ জি৩ প্রায় ২০০০ কিমি (১ হাজার ২০০ মাইল) ভ্রমণ করতে পারে।  চীনা বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততায় জি-৩ এবং চীনে তৈরি কিছু অন্যান্য মডেলের ড্রোনের নমুনা আরো পরীক্ষার জন্য রাশিয়ায় সরবরাহ করা হয়েছে। কুপোল থেকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, এটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অধীনে রাখা হয়েছিল। নথিতে চীনা ড্রোন বিশেষজ্ঞদের পরিচয় দেওয়া হয়নি, এবং রয়টার্স তাদের পরিচয় নির্ধারণ করতে পারেনি।</p> <p> চীনে রাশিয়ার ড্রোন প্রকল্প চালুর খবর পেয়ে  হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল বলেছে, এ প্রকল্পকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা-কবলিত রুশ ফার্মকে একটি চীনা কম্পানির বিপজ্জনক সহায়তা দেওয়ার এক দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখছে তারা।</p> <p>সূত্র : রয়টার্স</p>