<p>জাপানে বছরের সবচেয়ে কঠিন নির্বাচনে রবিবার ভোট হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ও তার শক্তিশালী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ২০০৯ সালের পর সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ ফলাফলের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।</p> <p>টোকিও থেকে এএফপি জানিয়েছে, জনমত জরিপে রক্ষণশীল এলডিপি ও এর জুনিয়র কোয়ালিশন পার্টনারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে দেখা গেছে। যার ফলে ইশিবার ওপর নকআউটের চাপ আসতে পারে।</p> <p>৬৭ বছর বয়সী সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং গত মাসে এলডিপির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর একটি অন্তর্বর্তী নির্বাচনের আহ্বান জানান। এলডিপি গত সাত দশকের প্রায় পুরো সময় ধরেই জাপানকে শাসন করেছে। তবে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি মূল্যবৃদ্ধি ও দলীয় তহবিল কেলেঙ্কারি পূর্ববর্তী ফুমিও কিশিদার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।</p> <p>ইশিবা শনিবার এক সমাবেশে সমর্থকদের বলেন, ‘আমরা একটি ন্যায্য, ন্যায়পরায়ণ ও আন্তরিক দল হিসেবে নতুন করে শুরু করতে চাই এবং আপনার ম্যান্ডেট চাই।’ </p> <p>তিনি হতাশাগ্রস্ত গ্রামীণ অঞ্চলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার এবং নমনীয় কর্মঘণ্টার মতো পরিবারবান্ধব নীতির মাধ্যমে জাপানের জনসংখ্যার হ্রাসের সমস্যাটি জরুরিভাবে মোকাবেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে তিনি বিবাহিত দম্পতিদের আলাদা উপাধি রাখার অনুমতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন এবং মন্ত্রিসভায় দুই নারী মন্ত্রীর নামও রেখেছেন। চীনকে মোকাবেলা করার জন্য স্বস্বীকৃত নিরাপত্তা নীতি ‘গিক’ ও ন্যাটোর লাইন বরাবর একটি আঞ্চলিক সামরিক জোট গঠনকে সমর্থন করেছেন। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, এগুলো খুব দ্রুত ঘটবে না।</p> <p>ইয়োমিউরি শিম্বুন দৈনিকের শুক্রবারের এক জরিপ ধারণা দেয়, এলডিপি ও তার  জোট অংশীদার কোমেইতো সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৩৩টি নিম্নকক্ষের আসন পেতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হতে পারে। ইশিবা এই লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারলে এলডিপিতে তার অবস্থান হ্রাস পাবে এবং অন্য জোটের অংশীদার খুঁজে বের করে সংখ্যালঘু সরকারের নেতৃত্বের দিকে যাবে।</p> <p>স্থানীয় মিডিয়া অনুমান করছে, ইশিবা সম্ভবত দায়িত্ব নিতে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে পারে। এতে করে তিনি হয়ে উঠবেন যুদ্ধপরবর্তী সময়ে জাপানের সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সবচেয়ে কম সময়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড করেছেন নারুহিকো হিগাশিকুনি। তিনি মাত্র ৫৪ দিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পরে ২০২২ সালে ব্রিটিশ নেতা লিজ ট্রাসের চেয়ে চার দিন বেশি দায়িত্বে থাকেন। ইশিবা শুক্রবার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বলেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর।’</p> <p>অনেক জেলায় এলডিপি প্রার্থীরা সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম জনপ্রিয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিকো নোদার নেতৃত্বের কন্সটিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (সিডিপি) সঙ্গে তীব্র লড়াই করছে। নোদা শনিবার তার সমর্থকদের বলেন, এলডিপির রাজনীতি হলো তাদের জন্য দ্রুত নীতি বাস্তবায়ন করা, যারা তাদের প্রচুর নগদ দেয়। তবে তারা দুর্বল অবস্থানে, যারা নগদ অফার করতে পারে না তারা তাদের উপেক্ষা করে। তিনি এলডিপির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে জাপানের মধ্যাঞ্চলে ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়াদের জন্য অপর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।</p> <p>রিটসুমেইকান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাসাতো কামিকুবো এএফপিকে বলেন, ‘নোদার অবস্থান এলডিপির মতোই। তিনি মূলত একজন রক্ষণশীল।’ তিনি আরো বলেন, ‘সিডিপি বা নোদা এলডিপির বিকল্প হতে পারে। অনেক ভোটার তেমনই মনে করছেন।’</p> <p>তহবিল কেলেঙ্কারিতে ধরা পড়া সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নেওয়া ইশিবা এলডিপি প্রার্থীদের সক্রিয় সমর্থন না করার প্রতিশ্রুতি দেন। মধ্যাঞ্চলীয় আইচির একজন সিদ্ধান্তহীন ভোটার হিটোমি হিসানো টোকিওতে এএফপিকে বলেন, এলডিপির আর্থিক কেলেঙ্কারি তার সিদ্ধান্তহীনতার একটি বড় কারণ। ৬৯ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ বলেন, এলডিপি অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় বসে আছে। আমি সেখানে অহংকার দেখতে পাচ্ছি। সুতরাং আমি অনেকাংশে তাদের শাস্তি চাই। তবে আমার ভোট জিতে নেওয়ার মতো যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য দল দেখছি না।</p>