<p>তেহরানের আজাদ ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রী নিজের পোশাক খুলে প্রতিবাদ জানানোর পর তাকে 'মানসিকভাবে অসুস্থ' হিসেবে বলে অভিহিত করেছে ইরান সরকার। কিন্তু ইরানের বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা ওই তরুণীকে 'মানসিকভাবে অসুস্থ' বলায় কর্তৃপক্ষের নিন্দা জানিয়েছেন। ইরান ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়। </p> <p>এর আগে গত শনিবার (২ নভেম্বর) ইরানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা গেছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে শুধু অন্তর্বাস পরে হাঁটছেন ওই তরুণী। তিনি পরনের পোশাকের অধিকাংশই খুলে ফেলেন। এরপর তেহরানের পুলিশ তাকে জোর করে হেফাজতে নিয়ে যায়। কড়া পোশাকবিধির প্রতিবাদ করতে গিয়েই ওই তরুণী পরনের পোশাক খুলে ফেলেছিলেন বলে বেশ কিছু সূত্র জানায়। </p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই তরুণীর গুরুতর মানসিক সমস্যা আছে, এ কারণে তাকে থানায় পাঠানো হয়েছে। ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর সঙ্গে যুক্ত মিডিয়া থেকেও ওই তরুণী মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করা হয়েছে। </p> <p>ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ডস কর্পস-সংশ্লিষ্ট ফারস নিউজ এজেন্সি সে সময় জানিয়েছে, ‘এই ছাত্রী অনুপযুক্ত পোশাক পরে ক্লাসে উপস্থিত হয়েছিল। ক্যাম্পাসে ড্রেসকোড মেনে চলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পরও তিনি পোশাক খুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠের চারপাশে হাঁটছিলেন। আইআরজিসি জানিয়েছে, তিনি কোনো সহিংসতার মুখোমুখি হননি। </p> <p>তবে টেলিগ্রামের একটি গোষ্ঠী 'আমির কবির নিউজলেটা' জানিয়েছে, হিজাব না পরার জন্য তাকে প্রথমে হয়রানি ও মারধর করা হয়েছিল। </p> <p>ইরানি কর্তৃপক্ষের নিন্দা করেছেন নোবেল বিজয়ী শিরিন এবাদি। তিনি বলেন, ‘বিক্ষোভকারীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে ট্যাগ দেওয়া হলো, এটা ভিন্নমতকে দমন করার দীর্ঘস্থায়ী সরকারি পদ্ধতি ।' এবাদি ইনস্টাগ্রামে বলেছেন, ‘বিরোধীদের নীরব করার জন্য এই জাতীয় কৌশল ব্যবহার করা হয়। আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী ছাত্রী যদি 'অসুস্থ' হতো, তাহলে তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো? নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা কি নিরাপত্তাব্যবস্থায় থাকা মানুষরা দেয়?’</p> <p>ইরানি মানবাধিকার আইনজীবী আজম জাংরাভি হিজাববিরোধী বিক্ষোভের জন্য কারাবাসের সময় সরকারের কাছ থেকে একই ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছিলেন। এ বিষয়ে তিনি ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে বলেছিলেন, ‘আমাকে মানসিকভাবে অসুস্থ ঘোষণা করার জন্য আমার পরিবারকে চাপ দেওয়া হয়েছিল, এমনকি ফরেনসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল… কিন্তু আমার পরিবার তা করেনি।  কিন্তু চাপের মধ্যে থাকা অনেক পরিবার মনে করে, তাদের প্রিয়জনকে রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায় এটি। এভাবেই ইসলামিক প্রজাতন্ত্র নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের অসম্মানের চেষ্টা করা হয়।’</p> <p>এদিকে, বেসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতোমধ্যে বিবৃতি দিয়ে তরুণীর মুক্তির দাবি জানিয়েছে। সেইসঙ্গে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন তরুণীর ওপর যাতে কোনোরকম অত্যাচার না হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তারা লিখেছে, হেফাজতে তরুণীর ওপর অত্যাচার ও দুর্ব্যবহার যাতে না হয়, কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি যাতে নিজের পরিবার ও আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে এবং সর্বোপরি তরুণীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।</p> <p>ইতোমধ্যে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে ইরানে। তরুণীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি উঠছে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণী তেহরানের ইসলামিক আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তবে তার নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে শুধু দাবি করা হয়েছে, ওই তরুণী 'মানসিকভাবে অসুস্থ’ এবং সম্প্রতি নানা কারণে মানসিক চাপে ছিলেন। </p> <p>এর আগে ২০২২ সালে অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল ইরানে। ১৯ বছরের মাহশা আমিনিকে পোশাকবিধি না মানায় তাকে আটক করেছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তারপর হেফাজতে থাকাকালীন তার মৃত্যু হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি হিজাব দিয়ে মাথার চুল পুরোপুরি ঢাকেননি।</p> <p>সূত্র : ইরান ইন্টারন্যাশনাল</p>