<p>ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, যা বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনা রাখে।</p> <p>নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট নীতির উল্লেখ না করে বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যার ভিত্তি মূলত অহস্তক্ষেপ ও বাণিজ্য সুরক্ষাবাদের ওপর, যা তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলে অভিহিত করেন।</p> <p>ট্রাম্পের জয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বহু বছরের অন্যতম বৃহৎ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, বিশেষ করে এমন একসময় যখন বিশ্বজুড়ে একাধিক সংকট চলছে। তার প্রচারণায় করা মন্তব্য এবং ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তার মেয়াদকালে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে তার সম্ভাব্য নীতির কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ইতিহাস গড়ে মার্কিন মসনদে ডোনাল্ড ট্রাম্প" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/06/1730890635-3693aa2f22f7c15e5c0c58a2950b10ae.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ইতিহাস গড়ে মার্কিন মসনদে ডোনাল্ড ট্রাম্প</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/11/06/1443468" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>রাশিয়া, ইউক্রেন ও ন্যাটো</strong><br /> প্রচারণায় ট্রাম্প বহুবার বলেছেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ‘এক দিনে’ শেষ করতে পারবেন। কিভাবে করবেন জানতে চাইলে তিনি কেবল আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ইঙ্গিত দেন। তবে তিনি এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।</p> <p>মে মাসে ট্রাম্পের দুই সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যেতে পারে, তবে কিয়েভকে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় রাজি করানো হবে। রাশিয়ার জন্য প্রণোদনা হিসেবে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের প্রক্রিয়া বিলম্বিত রাখার প্রস্তাবও ছিল।</p> <p>অন্যদিকে ডেমোক্র্যাকট প্রতিদ্বন্দ্বীরা দাবি করেন, এই নীতি ইউক্রেনের আত্মসমর্পণের সমান হবে এবং পুরো ইউরোপকে বিপদে ফেলবে। তবে ট্রাম্পের অগ্রাধিকার হলো যুদ্ধ বন্ধ করা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের ক্ষয় রোধ করা।</p> <p>এ ছাড়া ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় ন্যাটো সম্পর্কেও তার আগ্রহ ছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশ হিসেবে গড়ে ওঠে। তিনি বরাবরই ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা প্রতিশ্রুতিতে পরনির্ভরশীল বলে সমালোচনা করেছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো থেকে সরাসরি সরে আসবে কি না, তা এখনো অমীমাংসিত, তবু যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রায় এক শতাব্দীর বৃহত্তম পরিবর্তন ঘটবে।</p> <p>ট্রাম্পের মিত্ররা মনে করেন, এটি হয়তো সদস্য দেশগুলোকে প্রতিরক্ষা খাতে আরো ব্যয় করতে চাপ সৃষ্টির কৌশল। তবে ন্যাটো নেতারা সত্যিই উদ্বিগ্ন, ট্রাম্পের জয় জোটের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাবেন না পুতিন?" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/06/1730898234-22166c445cedd060e68c4c0dcdb545af.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাবেন না পুতিন?</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/11/06/1443516" target="_blank"> </a></div> </div> <p><strong>মধ্যপ্রাচ্য</strong><br /> ইউক্রেনের মতোই ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ ও লেবাননে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ শেষ করবেন। তবে এ নিয়ে নির্দিষ্ট কৌশল সম্পর্কে কিছু বলেননি।</p> <p>ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার প্রশাসন ক্ষমতায় থাকলে হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করত না। কারণ তার ‘ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপের’ নীতি ছিল।</p> <p>মোটাদাগে, ইরানের সঙ্গে করা পরমাণুচুক্তি থেকে সরে এসে ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নীতি ফের চালু করতে পারেন ট্রাম্প।</p> <p>ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করেন, যা ট্রাম্পের খ্রিস্টান ইভানজেলিকাল সমর্থকদের আনন্দিত করেছিল। তবে এই নীতির কারণে ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি বয়কট ঘোষণা করে। কারণ এতে তাদের জেরুজালেমের ওপর দাবি হারিয়ে যায়।</p> <p>পাশাপাশি ট্রাম্প ‘আব্রাহাম চুক্তি’ করান, যা ইসরায়েল এবং কয়েকটি আরব ও মুসলিমদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়। এতে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের অন্যতম বিচ্ছিন্ন অবস্থানে খুঁজে পায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র শক্তি, যা উভয় পক্ষের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে।</p> <p>ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইলেও ইসরায়েলি নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন দেখাতে পারেন, যা তার কৌশলকে অস্পষ্ট করে তুলেছে। তার মিত্ররা প্রায়ই তাকে ‘অননুমেয়’ কূটনীতিক হিসেবে তুলে ধরলেও বর্তমান সংকটময় সময়ে এই কৌশল কতটা কার্যকর হবে, তা স্পষ্ট নয়।</p> <p>ট্রাম্পকে গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্য বাইডেন প্রশাসনের উদ্যোগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।</p> <p><strong>চীন ও বাণিজ্য</strong><br /> যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে চীন নিয়ে নেওয়া পদক্ষেপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এর প্রভাব বিশ্ব নিরাপত্তা ও বাণিজ্যে ব্যাপক। ক্ষমতায় থাকাকালে ট্রাম্প চীনকে ‘কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী’ হিসেবে উল্লেখ করে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেন, যার পাল্টাব্যবস্থা হিসেবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে।</p> <p>করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে এই বাণিজ্য বিরোধের অবসান সম্ভব হয়নি। ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে প্রশংসার সঙ্গে ‘বিপজ্জনক’ ও কঠোর নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিরোধীরা বলেন, তার এই অবস্থান ‘স্বৈরশাসকদের’ প্রতি অনুরাগের উদাহরণ।</p> <p>বাইডেন প্রশাসন চীনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করলেও ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে তিনি চীনকে মোকাবেলায় ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে পারেন। অক্টোবরে ট্রাম্প বলেছেন, যদি তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসেন, তাহলে তাকে তাইওয়ানের ওপর চীনের অবরোধ ঠেকাতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে হবে না। কারণ প্রেসিডেন্ট শি জানেন, তিনি ‘(অতি) পাগল’। এমন পরিস্থিতি ঘটলে তিনি চীনা পণ্যের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করবেন বলেও মন্তব্য করেছিলেন, যা চীনের অর্থনীতিকে অচল করে দিতে পারে।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>