<p style="text-align:justify">যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নারীদের প্রেসিডেন্ট না হওয়ার যে ইতিহাস তা নতুন করে লেখার সুযোগ আবারও ব্যর্থ হলো। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হারলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। ফলে পুরুষদের প্রেসিডেন্ট পদে বসানোর ২০০ বছরের ইতিহাস আরো দীর্ঘ হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">যুক্তরাষ্ট্রে ৮ বছরের ব্যবধানে দুজন নারী প্রার্থী পরাজিত হলেন। বহু আমেরিকান নারীর জন্যই যা হতাশার, বিশেষ করে এবার যারা কমলাকে সমর্থন করেছিলেন। আবার এখান থেকে প্রশ্নও আসে, কেন লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্রে কেন নারীরা ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে বসতে পারছেন না।</p> <p style="text-align:justify">কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের পর এ বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। তাদের প্রতিবেদনে ট্রাম্পের বিজয়কে নিষ্ঠুর আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু নারীদের নিয়ে ট্রাম্পের অতীত খুব একটা সুখকর নয়। গত বছর ট্রাম্পকে যৌন নির্যাতনের জন্য দায়ী করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত অন্তত ১৭ জন নারী তার বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন। যদিও যে অভিযোগগুলো ট্রাম্প অস্বীকার করেছেন। হ্যারিসের বিরুদ্ধে প্রচারণাতেও ট্রাম্প লিঙ্গভিত্তিক মন্তব্য করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">উসকনসিনের ২৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থী রেবেকা কুস্ক কমলার পরাজয়কে বেদনাদায়ক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট করা, যিনি ইতিমধ্যে নারীদের নিয়ে অসম্মানজনক মন্তব্য করেছেন, এটি আমাদের পিছিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।’</p> <p style="text-align:justify">তবে অনেকেই কমলার হারে স্বস্তি পেয়েছেন। তাদের মতে, ‘আদর্শ লিঙ্গের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা একজন নারী নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে দেখে খুশি হবেন, যদি প্রার্থী রিপাবলিকান বা রক্ষণশীল রাজনীতি গ্রহণ করেন।’</p> <p style="text-align:justify">অন্যরা বলছেন, কমলা হ্যারিস প্রচারণা শুরু করেছেন দেরিতে। যার শুরুটা হয়েছিল জুলাইয়ে। জো বাইডেন নিজেকে দ্বিতীয়বারের জন্য বিবেচনা করার জন্য সময় নিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">উত্তর ক্যারোলিনার ৬৬ বছর বয়সী নার্স চেরিল ডুলাক সাধারণত ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেন। তিনি তার ব্যালটে প্রেসিডেন্টের লাইনটি ফাঁকা রেখেছিলেন। তার মতে, ট্রাম্প উন্মাদ, আবার কমলা তাকে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">ডুলাকের ছেলে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। তার ছেলে মনে করেন না, ‘একজন নারী পুতিনের মুখোমুখি হতে পারে।’</p> <p style="text-align:justify">নির্বাচনের আগে পরিচালিত জরিপে দুই প্রার্থীর ঐতিহাসিক লিঙ্গ ব্যবধান উঠে এসেছে। বেশির ভাগ নারী কমলাকে সমর্থন করেছে এবং বেশির ভাগ পুরুষ ট্রাম্পকে সমর্থন করে বলে উঠে এসেছে। প্রচারণার সময়ও দুই প্রার্থী লিঙ্গের প্রশ্নে পুরোপুরি ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">গত মাসে এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কমলা বলেছিলেন, ‘ঠিক আছে, আমি একজন নারী। অধিকাংশ মানুষ যে বিষয়টির প্রতি সত্যিই যত্নশীল তা হলো আপনি কী কাজ করতে পারেন এবং আপনার কি আসলেই সেগুলো করার সক্ষমতা আছে কি না।’</p> <p style="text-align:justify">অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারাভিযানের সময় দাম্ভিকতা দেখিয়েছেন। তার মধ্যে আধিপত্য দেখানোর মনোভাব ছিল। তিনি নিজেকে পুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে বোকা, অলস ও দুর্বল বলেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সম্পর্কে অশ্লীল কথা লিখেছেন। ট্রাম্প এ-ও বলেন, কমলা নির্বাচিত হলে বিশ্বনেতারা তার সঙ্গে ‘খেলনার মতো’ আচরণ করবেন। প্রচারণার শেষ দিনগুলোতে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি নারীদের রক্ষা করবেন।</p> <p style="text-align:justify">মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোলাস ভ্যালেন্টিনো বলেছেন, ‘ট্রাম্পের জন্য এই ধরনের বক্তব্য একটি উদ্দেশ্য সাধন করেছিল। যৌক্তিক বলে মনে হতে পারে যে লিঙ্গ ব্যবধান প্রচারণার পাঁচ দিন আগে অবশ্যই কোনো উদ্দেশ্য সাধন করে। আসলে তিনি যখন নারীদের ভোট হারান তখন একই সঙ্গে পুরুষদের ভোট পান।’</p> <p style="text-align:justify">ভ্যালেন্টিনো এবং তার সহকর্মী কার্লি ওয়েন ও মার্জিয়া ওসেনো ২০১৬ সালে ভোটারদের মনোভাব অধ্যয়ন করেছিলেন। তারা অস্বাভাবিক কিছু খুঁজে পেয়েছিলেন, যা আগের তিনটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেখা যায়নি।</p> <p style="text-align:justify">প্রখ্যাত নারীবাদী লেখক সুসান ফালুদির মতে, এবারের নির্বাচনে কমলা লিঙ্গ বিষয়টি নিয়ে খেলেননি। বরং ট্রাম্প এটি করেছেন। হ্যারিস তার সংক্ষিপ্ত প্রচারাভিযানের সময় ছিলেন নিখুঁত। তার পরাজয় নারীদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য নেতিবাচক।</p> <p style="text-align:justify">১৯৩টি দেশের মাত্র ৭ শতাংশের সরকারপ্রধান হিসেবে নারীরা রয়েছেন। মাত্র ৩০ শতাংশ দেশে নারীরা ক্ষমতায় আসতে পেরেছেন। ইউরোপের অনেক দেশেই নারীরা সর্বোচ্চ ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">হোয়াইট হাউসের ইতিহাসে ক্ষমতা পাওয়ার মূল দৌড়ে অংশ নিয়েছেন কমলাসহ তিনজন নারী। সর্বপ্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন রিপাবলিকান মার্গারেট চেস স্মিথ। ১৯৬৪ সালে মার্কিন ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">এরপর ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে বিচক্ষণতা দেখালেও তাকে প্রেসিডেন্ট করেনি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তিনি পপুলার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। তবে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে পরাজিত হন।</p> <p style="text-align:justify">বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা বেশি। এটি নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জের।</p> <p style="text-align:justify">ব্রাউন ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রেসিডেন্ট রুথ সিমন্স এই প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম নারী। তিনি আইভি লিগ স্কুলের নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিও। তার মতে, কমলার মতো একজন নারীকে আমেরিকানরা ভোট দিল না, তার চেয়ে বড় বিষয় তারা ট্রাম্পের ত্রুটিগুলোকে উপেক্ষা করল।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘নেতাদের চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শিশুরা তাদের দেখছে। তাদের ওপর আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তাদের স্বভাবের ওপর বিশ্বের শান্তি নির্ভর করে।’</p>